Ad 3

Education makes a door to bright future

University admission and others information,International Scholarships, Postgraduate Scholarships, College Scholarship, Study Abroad Financial Aid, Scholarship Search Center and Exam resources for PEC, JSC, SSC, HSC, Degree and Masters Examinees in Bangladesh with take from update sports News, Live score, statistics, Government, Private, current Job Circular take from this site

Education is a way to success in life

University admission and others information,International Scholarships, Postgraduate Scholarships, College Scholarship, Study Abroad Financial Aid, Scholarship Search Center and Exam resources for PEC, JSC, SSC, HSC, Degree and Masters Examinees in Bangladesh with take from update sports News, Live score, statistics, Government, Private, current Job Circular take from this site

Education is a best friend goes lifelong

University admission and others information,International Scholarships, Postgraduate Scholarships, College Scholarship, Study Abroad Financial Aid, Scholarship Search Center and Exam resources for PEC, JSC, SSC, HSC, Degree and Masters Examinees in Bangladesh with take from update sports News, Live score, statistics, Government, Private, current Job Circular take from this site

Education makes a person a responsible citizen

University admission and others information,International Scholarships, Postgraduate Scholarships, College Scholarship, Study Abroad Financial Aid, Scholarship Search Center and Exam resources for PEC, JSC, SSC, HSC, Degree and Masters Examinees in Bangladesh with take from update sports News, Live score, statistics, Government, Private, current Job Circular take from this site

Education is a key to the door of all the dreams

University admission and others information,International Scholarships, Postgraduate Scholarships, College Scholarship, Study Abroad Financial Aid, Scholarship Search Center and Exam resources for PEC, JSC, SSC, HSC, Degree and Masters Examinees in Bangladesh with take from update sports News, Live score, statistics, Government, Private, current Job Circular take from this site

Showing posts with label Student. Show all posts
Showing posts with label Student. Show all posts

Friday, April 16, 2021

দেশে কয়েক ধরণের সঞ্চয়পত্র আছে !! কোন সঞ্চয়পত্র কিভাবে কিনবেন??

দেশে এখন চার ধরনের সঞ্চয়পত্র আছে। এই চারটির মধ্যে কোনটি সবচেয়ে আকর্ষণীয় বা কে সবচেয়ে মুনাফা দেয় এই প্রশ্নও করেন অনেকে। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্র, বর্তমানে এ চার ধরনের সঞ্চয়পত্রই চালু রয়েছে দেশে।

কিন্তু সবগুলো সমান হারে সুদ দেয় না। সবচেয়ে বেশি মুনাফা পাওয়া যায় পেনশনার সঞ্চয়পত্র থেকে। সুদের হার মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। সুতরাং বলাই যায় সেরা সঞ্চয়পত্র এটি। তবে সমস্যা হচ্ছে এই সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে অবসরপ্রাপ্ত হতে হবে। পরিবার সঞ্চয়পত্রেও কিন্তু মুনাফা মোটেই কম নয়।

পাঁচ বছর মেয়াদ শেষে এই সঞ্চয়পত্রে মুনাফা পাওয়া যায় ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ হারে। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে মেয়াদ শেষে সুদের হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র তিন বছর মেয়াদি। এই সঞ্চয়পত্রে মেয়াদ শেষে সুদের হার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।

 নামের মধ্যেই রয়েছে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র পাঁচ বছর মেয়াদের। পরিবার সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের নামের মধ্যে মেয়াদ উল্লেখ না থাকলেও এ দুটোও পাঁচ বছর মেয়াদি। আর তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র তিন বছর মেয়াদি। পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদ মাসিক ভিত্তিতে এবং তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের সুদ ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে তোলা যায়।

 মেয়াদের আগে ভাঙালে সুদ কম: মেয়াদভিত্তিক সঞ্চয়পত্র কেনা হলেও মেয়াদের আগেও এগুলো ভাঙানো যায়। যেমন পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র মেয়াদপূর্তির আগে নগদায়ন করলে প্রথম বছর শেষে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ, দ্বিতীয় বছর শেষে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ, তৃতীয় বছর শেষে ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং চতুর্থ বছর শেষে ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যায়।

তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র মেয়াদের আগে নগদায়ন করলে সুদের হার কম হয়। এক বছরের আগে নগদায়ন করলে কোনো সুদই পাওয়া যায় না। এই সঞ্চয়পত্রে প্রথম বছর শেষে নগদায়ন করলে ১০ শতাংশ এবং দ্বিতীয় বছর শেষে নগদায়ন করলে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যায়।

পরিবার সঞ্চয়পত্র মেয়াদপূর্তির আগে নগদায়ন করলে প্রথম বছর শেষে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ, দ্বিতীয় বছর শেষে ১০ শতাংশ, তৃতীয় বছর শেষে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ এবং চতুর্থ বছর শেষে ১১ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যায়। পেনশনার সঞ্চয়পত্র মেয়াদপূর্তির আগে নগদায়ন করলে প্রথম বছর শেষে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ, দ্বিতীয় বছর শেষে ১০ দশমিক ১৫ শতাংশ, তৃতীয় বছর শেষে ১০ দশমিক ৬৫ শতাংশ ও চতুর্থ বছর শেষে ১১ দশমিক ২০ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যায়।

কারা কোনটা কিনতে পারেন: সবচেয়ে বেশি সুদ দেওয়া পেনশনার সঞ্চয়পত্র সবাই কিনতে পারেন না। অবসরভোগী সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারী, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এবং মৃত চাকরিজীবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাভোগী স্বামী, স্ত্রী ও সন্তানেরাই পেনশনার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন।

১৮ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সের যেকোনো বাংলাদেশি নারী, যেকোনো বাংলাদেশি শারীরিক প্রতিবন্ধী নারী ও পুরুষ এবং ৬৫ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সী বাংলাদেশি নারী ও পুরুষেরা শুধু একক নামে কিনতে পারেন পরিবার সঞ্চয়পত্র। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র সবার জন্য উন্মুক্ত। ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী যেকোনো শ্রেণি-পেশার মানুষ একক বা যুগ্ম নামে এ দুই ধরনের সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন।

দেশে কয়েক ধরণের সঞ্চয়পত্র আছে !! কোন সঞ্চয়পত্র কিভাবে কিনবেন??


আগ্রহ আবার বাড়ছে: বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র খাতে বিনিয়োগ কমে এক বছরের ব্যবধানে এক-তৃতীয়াংশে নেমেছিল। আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ৪৯ হাজার কোটি টাকা থেকে নেমে হয়েছিল ১৪ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এক অর্থবছরেই কমেছিল প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা।

২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে কড়াকড়ি আরোপ করায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান। এর মধ্যে অন্যতম কারণ ছিল অনলাইন পদ্ধতিতে কেনা, ব্যাংক হিসাব থাকা, এক লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) থাকা ইত্যাদি শর্ত আরোপ করা হয়।

 করোনাভাইরাসের ফলে নতুন বিনিয়োগ তো দূরের কথা, অনেক বিনিয়োগকারীকে বরং সঞ্চয় ভেঙেও খেতে হয়। তবে খারাপ পরিস্থিতি কেটে গেছে প্রায়। বিনিয়োগকারীরা সঞ্চয়পত্রে ফিরতে শুরু করেছেন। অনলাইনে কিনতেও এরই মধ্যে অভ্যস্ত হয়েছেন তাঁরা। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) সঞ্চয়পত্র থেকে ১৫ হাজার ৬৪২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার, যা আগের পুরো অর্থবছরের পুরো সময়ের চেয়েও ১ হাজার ২১৪ কোটি টাকা বেশি।

আগের অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে ৫ হাজার ৫২১ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছিল সরকার। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেবে বলে ঠিক করে সরকার। বর্তমানে সব শ্রেণির মানুষের জন্য নিরাপদ বিনিয়োগের নাম হচ্ছে সঞ্চয়পত্র। আবার নিশ্চিত ও সর্বোচ্চ মুনাফার কারণে সঞ্চয়পত্র কিনতে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে।

বর্তমানে এ চার ধরনের সঞ্চয়পত্র চালু রয়েছে। পরিবার সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্র পাঁচ বছর মেয়াদের। এ ছাড়া রয়েছে তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র। পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদ মাসিক ভিত্তিতে এবং তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের সুদ ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে তোলা যায়।

আসুন জেনে নিই সঞ্চয়পত্র কিনতে চাইলে কি করবেন– ১. সব সঞ্চয়পত্রেরই নির্দিষ্ট ফরম রয়েছে। ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করেই এ ফরম পাবেন। সঞ্চয়পত্র কিনতে ফরম পূরণ করতে হবে এবং সঙ্গে দিতে হয় গ্রাহক ও নমিনির দুই কপি করে পাসপোর্ট আকারের ছবি। গ্রাহকের ছবি সত্যায়িত করতে হয় প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মচারীর মাধ্যমে। তবে নমিনির ছবির সত্যায়ন করতে হয় গ্রাহককে। ২. এক লাখ টাকার বেশি অঙ্কের সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে ইলেকট্রনিক কর শনাক্তকরণ নম্বর (ইটিআইএন) থাকতেই হবে। এক লাখ টাকা পর্যন্ত অবশ্য ইটিআইএন লাগে না। ৩. গ্রাহক ও নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি অবশ্যই দিতে হবে। নমিনি নাবালক হলে লাগে জন্মনিবন্ধনের কপি। ৪. গ্রাহকের নিজ ব্যাংক হিসাবের চেকের কপি, যে হিসাবে গ্রাহকের মুনাফা ও আসল টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে জমা হবে, সে হিসাবের নম্বর লাগে। পেনশনার সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে বাড়তি কাগজ হিসেবে লাগে সর্বশেষ নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সনদ। ৫. পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্র চালু রয়েছে।

পুরোনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন: আমার দুরন্ত শৈশব ও কৈশোরের উচ্ছলতা

ছোটবেলার স্মৃতি আমায় করে নস্টালজিক!  ব্যস্ত নাগরিক জীবনে বেড়ে ওঠা নবীন প্রজন্মকে দেশের মাটি-মানুষ-সংস্কৃতিকে চেনানো বেশ কঠিনই বটে। আমরা কত দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আজ এখানে এসে দাঁড়িয়েছি। ছোটবেলা যারা গ্রামে কাটাননি তাঁদের পক্ষে সেই পথ জানা মোটেই সহজ নয়। ইট-কংক্রিটের শহরের পরিবেশে ছোটরা সবুজ-শ্যামল প্রকৃতির মাঝে মুক্ত বিহঙ্গের মত ছুটতে পারে না। উদার আকাশের নিচে নির্মল বাতাসে স্বাধীনতার স্বাদ পায় না। আমাকে এখনো ছোটবেলার স্মৃতি-নস্টালজিয়া ঘিরে ধরে৷ ‘নস্টালজিয়া’ এর বাংলা প্রতিশব্দ স্মৃতিবিধুরতা। গ্রিক শব্দ নসটস (বাড়ি ফেরা) ও আলজিয়া (আশা বা প্রত্যাশা) নিয়ে নস্টালজিয়া শব্দের উৎপত্তি। নস্টালজিয়া বলতে সুখের স্মৃতি রোমন্থন করা, স্মৃতি মনে করে অতীত সময়ে ফিরে যেতে চাওয়া, আনন্দ-উদাস-ফিরে পাওয়ার মিশ্র অনুভূতি তৈরি। পুরনো বন্ধু, পরিবারিক স্মৃতি, ফেলে আসা গান, ছবি যেকোনো কিছুর স্মৃতিই মানুষকে নস্টালজিক করে তুলতে পারে।

পুরোনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন: আমার দুরন্ত শৈশব ও কৈশোরের উচ্ছলতা

পুরোনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন: আমার দুরন্ত শৈশব ও কৈশোরের উচ্ছলতা

পুরোনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন: আমার দুরন্ত শৈশব ও কৈশোরের উচ্ছলতা


ঘুড়ি উড়ানো

সুতা টেনে আকাশে  ঘুড়ি উড়ানোর সেই শৈশব ছিল খুবই আনন্দের।  ঘুড়ি উড়ানো আসলেই একটি মজার এক খেলা। বিনোদনের উপকরণ হিসেবে যা ছিল তুলনাহীন। কাগজের সাথে চিকন কঞ্চি লাগিয়ে তৈরি ঘুড়ি  উড়িয়েছি কত! বন্ধু সাত্তার রঙিন কাগজব্যবহার করে বিভিন্ন নকশার চমৎকার ঘুড়ি তৈরি করতো। ঘুড়িকে যথাযথ আকার ও ওজনের তৈরি করতে ওর পারদর্শীতা ছিল। সেলিম নানার সাথে ঘুড়ি (চং) উড়ানো দারুণ আনন্দের ছিল। দেখতে রংচঙা বা খুব সুন্দর আকৃতি না হলেও ঠিকভাবে সশব্দে উড়ার সক্ষমতা ছিল।

প্লাস্টিকের বস্তা থেকে তোলা পাতলা সুতা কিংবা বেত ও বাঁশের পাতলা চ্যাটা একটি ধনুকের মতো ছড়ের সঙ্গে বিশেষভাবে বেঁধে ঘুড়িতে জুড়ে দেয়ার কারণে উড়ন্ত ঘুড়ি থেকে সুরেলা শব্দ শোনা যেতো; যা এখনো আমার কানে বাজে! সেই ঘুড়ি ওড়ানো বিকালগুলো আজ হারিয়ে গেছে! কবি সুফিয়া কামাল ‘আজিকার শিশু’ কবিতায় লিখেছিলেন,‘আমাদের যুগে আমরা যখন আকাশের তলে উড়িয়েছি শুধু ঘুড়ি, তোমরা এখন কলের লাঙল চালাও গগন জুড়ি’। কবিতার  লাইন দুটি মনে করিয়ে দেয়, শৈশবে ঘুড়ি উড়ানোর সেই আনন্দময় স্মৃতির কথা।

এসব ঘুড়ি  তৈরিতে বাঁশের কাঠি বা শক্ত অথচ নমনীয় কাঠও  ফ্রেম  ব্যবহার হতো। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল সুতা কিংবা পাতলা দড়ি।  লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, বেগুনি কত রঙের ঘুড়িতে আকাশ ছেয়ে যাওয়া দেখলে মনে হতো, নানা রঙের মেলা বসেছে আকাশজুড়ে। বাংলাদেশে বিভিন্ন রকমের বিভিন্ন নামের ঘুড়ি  রয়েছে: চারকোণা আকৃতির বাংলা ঘুড়ি, ঘুড্ডি, ড্রাগন, বক্স, মাছরাঙা, ঈগল ঘুড়ি, ডলফিন, অক্টোপাস, সাপ ঘুড়ি, ব্যাঙ, মৌচাক, কামরাঙা, আগুন পাখি, প্যাঁচা, ফিনিক্স, জেমিনি, চরকি লেজ, পাল তোলা জাহাজ, পতাকা ঘুড়ি, ঢাউশ ঘুড়ি, চোঙা ঘুড়ি ইত্যাদি।   সুতাবিহীন ঘুড়ি হল ফানুস, বেলুন, হাউই ইত্যাদি। দুল ঘুড়ি, দরজা ঘুড়ি, ফেচ্ছা ঘুড়ি, চড়কি ঘুড়ি,  বিমান ঘুড়ি, হেলিকপ্টার ঘুড়ি, সাইকেল ঘুড়ি, ছাতা ঘুড়ি,  স্টার ঘুড়ি, স্টার ডোল ঘুড়ি, জামাই ঘুড়ি, বিল্ডিং ঘুড়ি, ডাকঘুড়ি, সাপঘুড়ি, মাছঘুড়ি, বাঙ্ঘুড়ি, মানুষঘুড়ি ও তারাঘুড়িও বিচিত্র নাম। মদনা, আউক্কা, পতেঙ্গা, সাপা, গোয়া ঘুড়িগুলোর নামও ছিল অদ্ভুত।

প্রায় ২ হাজার ৮০০ বছর আগে চীনে ঘুড়ি উড়ানো শুরু হয়। ইউরোপে ঘুড়ি খেলাটির প্রচলন ঘটে প্রায় ১,৬০০ বছর পূর্বে। আর এদেশে এমন একজন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল যিনি একবারের জন্যও নাটাই আর ঘুড়ি হাতে নেন নি। প্রথমে পাতা দিয়ে বানিয়ে ঘুড়ি উড়ানো হত। এরপর ঘুড়ি গাছের আগায় বেঁধে উড়িয়ে দেয়া হতো। আসে নাটাইয়ের দিন। পরে দিনে দিনে সেই ঘুড়ি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের সর্বত্র।

কলাগাছের ভেলা

চার-পাঁচটি বা তারও বেশি সংখ্যক কলাগাছ একত্রে বেঁধে কলাগাছের ভেলা তৈরি করা হতো। কলাগাছের কান্ড দিয়ে সমতল ভাসমান এই  ভেলার কাঠামো ছিল নৌকার সবচেয়ে সরল রূপ, একে ভাসিয়ে রাখার জন্য গলুই ছিল না । কাঠ বা বাঁশের মাধ্যমে শক্ত করে আটকায়ে ভেসে থাকতে সক্ষম করে তোলা হতো । হানারচালা থেকে ভালিকাচালা কিংবা ভালিকাচালা থেকে হানারচালায়  পারাপারে এই ভেলা ব্যবহার করা হতো। কলাগাছের ভেলা বাঙালি জাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অভিচ্ছেদ্য অংশ।  আমাদের শেকড় প্রোথিত গ্রামীণ জীবনে  একসময় কলাগাছ নানাভাবে নানা কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। কম খরচে তৈরি করা যায় বলে একে গরিবের জাহাজও বলা হতো।

প্রাচীন বাহন কলাগাছের ভেলা জলযান হিসেবে ব্যবহার এ প্রজন্মের অনেকের কাছেই অভিনব । তবে আমরা যারা গ্রামে বড় হয়েছি  বর্ষার সময় এপার-ওপারে, এখানে-ওখানে যাওয়া আসা করায় কলাগাছের ভেলায় ভেসে বেড়ানো স্মৃতিতে কমবেশি গেঁথে আছে। নতুন জলরাশির বুকে কলাগাছের ভেলায় চড়ে একটু ঘুরতে পারাতেই ছিল বর্ষার সুখ! পানিতে ভাসতে পারার মজা! পানি ছুঁই ছুঁই করেও পানির ওপর দিয়ে পাড়ি দিয়েও না ভেজার আনন্দ! সহজে ডুবে যাওয়ারও আশংকা না থাকায় নির্ভয় যাত্রা!  গ্রামাঞ্চলে বেড়ানোর ক্ষেত্রে এক ধরনের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।  যা টেনে নিয়ে যায় দূর অতীতে মধুর স্মৃতি জাগানিয়া দূরন্তপনার দিনগুলোতে।

কলাগাছের গেইট

গ্রামে বিয়ে অনুষ্ঠান উপলক্ষে কলাগাছের গেইট তৈরি করা হতো। বিয়ে বাড়িতে পরম যত্নে কলাগাছ, বাঁশ ও রঙ্গীন কাগজ দিয়ে চমৎকার গেইট সাজানোর দৃশ্য চোখে পড়তো। অসাধারণ আগ্রহ ও কৌশলে রঙ্গীন কাগজ কেটে চমৎকার ঝালট ও বিভিন্ন প্রকার ফুল তৈরি করা হতো। স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিশাল এক বাঁশের মাথার সাথে দড়ি বাঁধা হতো। দড়ির সাথে থাকতো রঙ্গীন কাগজের নিশান।

স্কুলের গেটে স্কুলের সামনের রাস্তায় শোভা পেত রঙ-বেরঙের কাগজে সাজানো হতো আর কলাগাছ দিয়ে তৈরি হতো দৃষ্টিনন্দন গেইট। লম্বা বাঁশের মাথায় কিংবা রেন্ট্রি কড়ই গাছে মাইক টাঙ্গিয়ে; মাইক বাজিয়ে স্কুল-কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা কিংবা বিয়ে অনুষ্ঠান, গ্রামের বিভিন্ন সামাজিক ও অন্যান্য আচার অনুষ্ঠান হতো; তাতে সাজানো-গোছানোর কাজে কলাগাছের নানাবিধ ব্যবহার হতো। যা ছিল আবহমান বাংলার লোকায়েত হারানো ঐতিহ্যসমুহের অন্যতম।

খেয়া পারাপার

বর্ষাকালে ভালিকাচালা-কামালিয়া চালায় পারাপারের জন্য খেয়া নৌকা ব্যবহার করা হতো। নৌকা ঘাটে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যাত্রী পারাপার করতে অপেক্ষা করতো মাঝি। খেয়া পারাপার করে জীবিকা নির্বাহ করতো! কখনো কখনো খেয়া পারাপার ঘাটে যাত্রীদের ভিড়ও দেখা যেত। খেয়ানৌকায় নদী পার হতে হতে  কুশলাদি বিনিময় হতো ।  বিশেষ করে গোদারা  ঘাটে অপেক্ষমান মানুষকে গল্প-গুজব করতেও দেখা যেত, অন্তরঙ্গতা দেখা যেত। রাতের অন্ধকারে প্রলম্বিত হাঁকে খেয়ামাঝিকে ডাকতেও শুনা যেত ।

ওয়াজ মাহফিল

ইসলামিক ওয়াজ মাহফিলের খুব জনপ্রিয়তা ছিল। আমলওয়ালা আলেম- হক্কানি ওলামারা ওয়াজ-নসিহত করতেন। অনেক দূরে দূরে ওয়াজ-নসিহত শুনতে যেতাম।  কারো কারো আলোচনা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতাম। তাদের ওয়াজে দরদ ছিল, মোলায়েম সুর ছিল, মন নরম হয়ে যাওয়ার মতো দরদ ভরা সুরের বর্ণনা ছিল।  যা শ্রোতাদের কানে নয় হৃদয়ে স্থান করে নিতো। বহু মানুষ বদলে যেত, আচার-আচরণ শুদ্ধ হতো, সমাজ সংস্কারে ভূমিকা রাখতো, দীন প্রচারের  মহতী সংস্কৃতি ছিল। মসজিদ, মাদরাসা কিংবা দ্বীনদরদী মুসলিমদের যৌথ বা ব্যক্তিগত উদ্যোগেও ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হতো। বয়ান ছিল- ধর্মীয় আদর্শের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ,  কোরআন-হাদিসের আলোতে উজ্জল , রাসূলের (স.) সিরাত এবং  সাহাবী-সালফে সালেহীনেরদের জীবনী নির্ভর।  শীতকাল জুড়ে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন হতো। 

গলার সুর বা গলার শক্তির উপর নির্ভরকারী এখনকার ওয়াজ ব্যবসায়ীদের ওয়াজ সংস্কৃতির মতো ছিল না ঐতিহ্যবাহী ওয়াজ সংস্কৃতি । ছিল না চিল্লাপাল্লা, হাসাহাসি, ব্যাঙ্গ-বিদ্রূপ, অন্যের দোষ ধরা, গিবত-পরনিন্দা-পরচর্চা, কৌতুক, গলার রগ ফুলিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি-হুমকি-ধামকি, চোখ রাঙ্গানো, আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গি, সিনেমা বায়োসকোপের গান, ঘুরেফিরে একই কথা বারবার  বলা, বিভ্রান্তিকর-অসত্য-ভুল-বানোয়াট তথ্য, অশুদ্ধ-অশালীন ভাষা,ব্যক্তিগত গল্প, পারিবারিক অদরকারী কেচ্ছা-কাহিনী, পরস্পরকে আক্রমণ করা, পরস্পর বিরোধী মনগড়া ফতোয়া দেয়া, ধর্মপ্রাণ মানুষের পকেট লুট করা  এবং অশ্লীলতা । ওয়াজ ও আওয়াজকে এক করে ফেলা হচ্ছে, আওয়াজের নিচে ওয়াজ চিরেচেপ্টা হচ্ছে, চলছে যেমন খুশি সাজো স্টাইলে, অভিনয়ও চলছে সমানতালে, বক্তা ও কমেডিয়ান প্রতিশব্দ হয়ে যাচ্ছে, প্যান্ডেল টাঙ্গিয়ে-স্টেজ সাজিয়ে আয়োজিত ওয়াজের মজলিস হয়ে যাচ্ছে গানের আসরের মতো। ওয়াজে কোকিল কণ্ঠে, টেনে টেনে বয়ান বলা এবং গানের স্বরে অপ্রাসঙ্গিক শে’র কবিতাও গাওয়া হচ্ছে। এরা ওয়াজ মাহফিলের মৌলিকত্ব ধ্বংস করছে, মাত্রাতিরিক্ত খরচ করায় অপচয় হচ্ছে।

অনেকে ওয়াজ মাহফিলে বক্তব্য দিচ্ছেন অথচ নেই— কোরআন-সুন্নাহর পর্যাপ্ত জ্ঞান, আল্লাহর সন্তুষ্ট ও তার দ্বীন প্রচারের উদ্দেশ্য,  বয়ান অনুযায়ী নিজের আমল, শ্রোতাদের ওপর দয়ার্দ্র ও বিনম্র হয়ে কথা বলা,  ধৈর্যশীল ও সহনশীল হওয়া। পথ খরচ বা তার অমূল্য সময়ের জন্য দেয়া হাদিয়া স্বতঃস্ফূর্তভাবে এবং সন্তুষ্টিচিত্তে নেন না। চুক্তিভিত্তিক টাকা নিয়ে কিছু বক্তা ওয়াজ করেন, তাদের কথায় মানুষেরও হেদায়েত হয় না। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তাদের অনুসরণ করো যারা দ্বীনি বিষয়ে কোনো পারিশ্রমিক চায় না এবং তারা সুপথপ্রাপ্ত।’ (সূরা ইয়াসিন : ২১)। তাফসিরে মাআরেফুল কোরআনে মুফতি শফী (রহ.) লিখেছেন, ‘দুই শ্রেণীর বক্তার বক্তৃতায় মানুষের কোনো হেদায়েত হয় না। ১. এক শ্রেণী যারা মানুষকে আমলের কথা বলে, ভালো পথে চলার কথা বলে আর নিজেই এর ওপর আমল করে না। ২. আরেক শ্রেণী হলো যারা ওয়াজ করে মানুষের কাছে টাকা চায়।

আমি খুব ভালো বুঝি না কিভাবে কখনো বিদেশেই যাননি অথবা কয়েকটি ভাষায় বক্তৃতা করতে সক্ষম নন তিনিও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ওলামায়ে কেরামগণের একজন হয়ে যান। ভারতবর্ষে ওয়াজ মাহফিল মূলত মোঘল আমলে প্রচার ও প্রসার পায়। এর পূর্বে ইরানে বা তৎকালীন পারস্যে ওয়াজ মাহফিল বা ইসলামিক জলসা হতো। বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলকে কেন্দ্র করে মেয়েরা শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসার মতো ঘটনাও ঘটত।  দীর্ঘদিনের প্রচলনের ফলে এক সময় তা বাঙালি মুসলিম কালচারের অংশে পরিণত হয়। পূর্বে ওয়াজ মাহফিলগুলোতে বক্তা দূর থেকে এসে বক্তব্য দিলেও বিনিময় নিতেন না। বক্তব্য দেয়ার নামে জনমনে হুজুগ তৈরি, নিজেদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া, ধর্মকে রাজনীতিক স্বার্থে ব্যবহার করার বিষয় ছিল না। বিভিন্ন দরদামে বক্তাকে উচ্চমূল্যে ভাড়া করে নিয়ে আসার ব্যাপারও দেখা যেত না; বড়জোর হাদিয়া তোহফার আদান-প্রদান ছিল, তাও অনেকে নিতে চাইতেন না।

গ্রামীণ হাট

হাটবাজার ছিল গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণ। সোমবার কামালিয়া চালায় হাটুরে মানুষের আনাগোনা শুরু হতো ভোরের কুয়াশা দূর হওয়া আগেই। ছিল কর্মচাঞ্চল্য, বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত মানুষের প্রাণস্পন্দন, ছোট-বড় নানা বয়সী মানুষের জমায়েত, শুরু হতো নিলাম; হাঁকডাক, পণ্যের হাতবদল আর গুঞ্জন। পণ্য বেচাকেনার সরু অলিগলিতে ভিড়ের মাঝেই এক বিস্ময়কর মুখরতা। গ্রামীণ সংস্কৃতির অন্যতম ধারক-বাহক ছিল হাট; এর সঙ্গে গ্রামীণ জনপদের সংস্কৃতি, কৃষ্টি আচার কিংবা সভ্যতার বিকাশের যোগাযোগ খুঁজে পাওয়া যায়। হাট ছিল কেবলই সাপ্তাহিক এবং পণ্য বেচাকেনা ছাপিয়েও উৎসব, হয়ে উঠত স্থানীয়দের মিলনমেলা। গ্রামীণ উন্নয়ন বা আঞ্চলিক উন্নয়নের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল গ্রামীণ হাটের। হাটকে ঘিরে অনেকের জীবন-জীবিকা আবর্তিত হতো। সময়ের বিবর্তনে অনেক হাট হারিয়েছে জৌলুস ঐতিহ্য। পণ্যের হাতবদল ছাপিয়ে স্থানীয় আচার, ঐতিহ্য, সংকট আর সভ্যতারও নানা ছাপ দেখা মেলে সেখানে।

২০০০ সালে রাজধানী ঢাকায় চলে আসার আগ পর্যন্ত গ্রামীণ হাটে যাওয়া হতো। কামালিয়া চালা, তক্তারচালা, পাথরঘাটা, জসিমনগর, চাকদহ ও কাইতলা হাটে গিয়েছি। কামালিয়াচালা-পাথরঘাটা-তক্তারচালা হাটে সদায় কিনেছি। হাটে আশপাশের গ্রামের লোকজনও আসে, জমজমাট হয়ে ওঠে হাট।

দেশে এখনো বহু হাট বিশেষায়িত পণ্যকে উপস্থাপন করে। যেমন টাঙ্গাইলের করোটিয়ার শাড়ির হাট, শাহজাদপুরে কাপড়ের হাট; যশোরের ফুলের হাট, পিরোজপুরের নৌকার হাট, বরিশালের স্বরূপকাঠির ভাসমান বাজার ইত্যাদি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বাড়তি পরিচয় বহন করে চলছে কানসাট আমের হাট। বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা ও হিউয়েন সাংয়ের ভ্রমণ কাহিনীতেও টাঙ্গাইলের বস্ত্র বা তাঁত শিল্পের কথা উঠে এসেছে। দৈনন্দিন কৃষিপণ্য, ফলমূল নিয়ে চাষীরা তা বিক্রি করেন ভাসমান বাজারে। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে গ্রামীণ অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে ছোট মাঝারি কিংবা বড় হাটবাজারগুলো। কেননা গ্রামীণ হাটবাজারের হাত ধরেই উৎপাদনকারীর পণ্য পৌঁছায় ভোক্তার কাছে, যা হাত ঘুরে পৌঁছে যায় শহুরে বাজারগুলোতেও। যদিও মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পেরে ওঠেন না কৃষকরা।

গ্রামীণ ডাক্তার

ছোটবেলায়  অসুস্থতায়  মাখন ডাক্তার, মিনহাজ ডাক্তার, লতিফ ডাক্তার, রওশন কবিরাজ- এদেরকেই চিনতাম। তাদের মানুষের প্রতি আন্তরিকতা, ভালোবাসা ও মমত্ববোধ ছিল।  জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাতদিন মানুষকে সেবা দিয়েছেন সাহসী ও লড়াকু মানুষরা।  সীমাবদ্ধতা, অপ্রতুলতা, অপমান ও লাঞ্ছনাও সহ্য করেছেন। দিন-রাত এক করে খেটে রোগীকে সারিয়ে তুলতেন।

আধুনিক শিক্ষিতরা ‘গ্রাম ডাক্তার’ ‘গ্রাম্য ডাক্তার’ ‘হাতুড়ে ডাক্তার’ ‘হাফ-ডাক্তার’ ‘রুরাল মেডিক্যাল প্র্যাকটিশনার’ কিংবা ‘গ্রামীণ চিকিৎসক’ ‘পল্লী চিকিৎসক’ যাই বলেন, গ্রামগঞ্জে অসুখ-বিসুখে এরাই ছিলেন একসময় ভরসা। বাগাড়ম্বর-সর্বস্ব আলোচনায় না গিয়ে বলা যায়- তাদের অনেকের ডিগ্রি ছিল না তবে আন্তরিকতা ছিল, অভিজ্ঞতা ছিল; স্বীকৃতি ছিল না, তবে মানুষের ভেতরে আশা জাগাতে পারতেন, চিকিৎসা করাতে গিয়ে গরিবকে সর্বস্বান্ত হতে হতো না। মানুষের বাড়তি আস্থা ছিল।

লোকচিকিৎসায় যে সনাতনী ওষুধ চর্চা করা হতো তাতে গাছ-গাছড়ার ব্যবহার ছিল, প্রাণীজ ও অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দ্রব্য দিয়ে চিকিৎসা চলতো; ফলে এখনকার অ্যান্টিবায়টিকের অপব্যবহারের মতো মারাত্মক ক্ষতি হতো না! এটা ঠিক যারা অদক্ষ ও প্রয়োজনীয় জ্ঞান নেই তারা অধিকাংশ সময়ে রোগ নির্ণয়ে ব্যর্থ হয় কিংবা ভুল চিকিৎসা প্রদান করে। প্রায় সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র দিতে গিয়ে, সব রোগের চিকিৎসা করতে গিয়ে রোগীকে বড় ধরনের বিপদে ফেলে এমনকি মৃত্যুমুখেও পতিত হয়।

তবে এজন্য ঢালাওভাবে গ্রাম এলাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে এদের ভূমিকাকে খাঁটো করে দেখার সুযোগ নেই। গ্রামীণ সমাজে তাদের কদর ও সম্মান আছে। অল্প টাকায় সন্তুষ্ট হয়ে ভালো চিকিৎসা দেন। গ্রামের মানুষকে মহৎ সেবা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে দিয়ে আসেন। মানুষের চিকিৎসা সেবা দেয়ার পবিত্র দায়িত্ব পালন করে মানুষের কাছে স্মরণীয় ও বরণীয়ও হয়ে থাকেন। মানুষের কাছে থাকেন, বিপদের সময় পাশে দাঁড়ান। তাদের সঠিক ভূমিকার জন্য বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। সহজ-সরল সেবাদানকারী মানুষগুলোর সঠিক মূল্যায়ন করি।

কৈশরের দিনগুলি

কৈশরের উদ্যমে শত স্মৃতির মাঝে আছে- বাইসাইকেলে আব্বুর সামনে-পিছনে বসে রোজিনা ও আমার গোড়াকি বু’র বাসায় বেড়াতে যাওয়া, মতিয়ার ভাইয়ের সাথে পানি সেঁচে মাছ ধরার সুখানুভূতি, হাবিবুরের সাথে লাল গাভির জন্য ঘাস কেটে আনা, কাক ডাকা ভোরেও মৃত্যুহীন প্রাণ খলিফা ভাই (হাজী মরহুম আজিজুল ইসলাম) এর সাথে দড়ানীপাড়া জামে মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়ার আনন্দ, আমগাছের ছায়ায় মাদুর পেতে লেখাপড়া করা, ইব্রাহীম কাকাসহ আমের ঝাঁকা নিয়ে বাসাইলে ফুফুদের বাড়িতে যাওয়া, ছোটভাই আশিকের জন্মে বাধঁ ভাঙ্গা খুশি, টাঙ্গাইলে বৃত্তি পরীক্ষা দিতে বড় ফুফার নিয়ে যাওয়া এবং পরীক্ষার হলে আমাকে ডিস্টার্বকারীর ওপর রেগে অগ্নিশর্মা হওয়া, সহপাঠী ও বন্ধু জয়নালের (জয়নাল আবেদিন জনি) পড়াশুনা ছেড়ে দেয়া, সহপাঠী আব্দুল্লাহেল মিন্টুর গাছ থেকে ঢাল ভেঙ্গে টিনের চালে পড়ে যাওয়া, আমাকে মৌলভী কাকার বেত্রাঘাতে ছোটফুফুর কান্না, দাদির মৃত্যু এবং জানাযা পড়তে না পারা ইত্যাদি।

সেই সময়টাতে যে কী ভীষণ দুরন্তপনা আর ক্ষেপ্যামি ছিল! জোৎস্না রাতে ওঠানে মাদুর পেতে আসর বসতো, ভূত পেত্নীর গল্প শুনতাম। বৃষ্টির পানিতে ভেজা, দলবেঁধে বর্ষায় পানিতে গোসল, নতুন জামা-কাপড় পড়ে ইদগাহে যাওয়া, ইদের নামাযের আগে কবিতা আবৃত্তি-কুরআন তেলাওয়াত-ইসলামিক গান করার স্মৃতি।  মৌলভী কাকার চক্ষু এড়িয়ে ডাংগুলি আর মার্বেল খেলা, বৃষ্টিতে ভিজে কর্দমাক্ত শরীরেও ফুটবল খেলা, পিচ্ছিল মাঠেও লবনদারি খেলার স্মৃতি। রিয়াজ উদ্দিন কাকাদের বিশাল তেতুল গাছটা এখনো আছে, জাম গাছটাও কালের স্বাক্ষী হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে; আজও কেউ ঢিল ছুড়ে, আঁকশি বা কোন্টা দিয়ে কিংবা গাছে উঠে-পাড়ে। বালিয়াটায় নানুর বাড়ি যেয়ে- ছিপ-বড়শি দিয়ে মাছ ধরেছি, নৌকায় চড়ে বাকি ভাইয়ের সাথে শাপলা তোলেছি। খালায় বাসায় বেড়াতে গিয়ে আমড়া, কদবেল, বড়ই খেতাম। নাটাই ঘুরিয়ে ঘুড়ির আকাশ দাপিয়ে বেড়ানোর দৃশ্য যে কত আনন্দের তা’ বলে-লিখে বুঝানো অসম্ভব।

ছোটবেলায় দেশি ফল বেশি পেতাম ও বেশি খেতাম। পেয়ারা, জাম, আমলকি, খেজুর, বংকই, গাব, ডেউয়া, বেল, করমচা, শালুক, চালতা, জলপাই, আমলকি, বিচিকলা, কামরাঙ্গা খেয়েছি কাঁচা-পাকা আম ভর্তা আর আচার খেয়ে তৃপ্তির ডেকুর গিলেছি। গাছ থেকে পেড়ে ফল খাওয়ার মজাই আলাদা! এখন আর পূর্ব পার্শ্বের লেবুর বাগান নেই, লালটুকটুকে গাভিটা নেই; মায়ের হাতের তৈরি ঘি-দই নেই, সাদা-কালো ডোরাকাটা বিড়ালটা নেই, হাঁস-মুরগির ছুটাছুটি নেই। তখন হারিকেন ছিল, হাতপাখা ছিল, আখের গুড় আর লেবুর শরবত ছিল, খেজুরের রস, তালের রস, মধু ছিল; নিজেদের গাভীর দুধ, পুকুরের মাছ, চাষকৃত শাকসবজি, পালিত হাস মুরগি ছিল। খুশির ঘটনায় বাতাসা-কদমা-জিলাপি বিলানো হতো, জুম্মার নামায শেষে মুসুল্লিদের মাঝে ঝাল খিচুরি ও মিষ্টি ক্ষীরের মিশ্রণ বিলানো হতো। ছোটবেলার বন্ধুদের খুব মিস করি যারা ঘর থেকে টেনে বের করে নিয়ে যেতো খোলা সবুজ ঘাসের মাঠে, ছন্দহীন-নিরানন্দ জীবনে আনন্দের জোয়ার যোগ করতো, মনের কথা খুলে বলা যেতো অবলীলায়। অসাধারণ ছিল নির্ভরতা আর বিশ্বাসের সেই গভীর মমতা-মায়া-ভালোলাগা অন্য রকম অনুভূতি! এখন কয়েকজনের (মালেক, বানিজ, আমিনুর ভাই) সাথে ফেসবুকে যুক্ত থাকায় যোগাযোগ মাঝেমাঝে (প্রত্যক্ষ/পরোক্ষ) হয়।

ছোটবেলার স্মৃতি

শৈশবের উচ্ছ্বাসে মিশে থাকা স্মৃতির মাঝে আছে- বড় কাকার দরাজ গলায় পুথিঁ পড়া, ছোট ফুফুর মুখে মৌলভী কাকার লেখা কবিতা শুনা, বড় ফুফুর জোর করে গোসল করানো, ঝড়ের দিনে বৃষ্টিতে ভিজে ছোটবোনের সাথে দৌঁড়ে আম কুড়ানো, আমার শরীরে আম্মুর তৈল মাখানো থেকে বাঁচতে প্রাণপণ দৌঁড়ানো, আব্বার সাথে প্রথম ঢাকায় ভ্রমণে চিড়িয়াখানা-স্মৃতিসৌধ-শিশুপার্ক পরিদর্শন ও নৌকায় খাদ্যপ্রেমিক ফয়েজ ভাইয়ের (হাজী মরহুম ফয়েজ উদ্দিন মেম্বার) অবিরত খাওয়া অবাক-বিস্ময়ে দেখা, গোল্লাছুট খেলার সাথী জোৎস্না আপুর বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়ি চলে যাওয়া, দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াকালীন সহপাঠী কুলসুমের বিয়ে, সহপাঠী সাত্তার ও সালমার মা-বাবা হারানো ইত্যাদি।

ছোটবেলার তিক্ত-টক-ঝাল স্মৃতির মাঝে আছে- অভিমান করে জঙ্গলে গাছে লুকানোর পর খুঁজে না পেয়ে আম্মুর পেরেশান হওয়া, ‘এরশাদ জেলের ডালভাত কেমন লাগে’ বলে সফি হুজুরের ক্ষেপানো, আমাকে সা‍ঁতার শেখাতে ছোটকাকা-ছোটফুফা-গণি ভাইয়ের পরিশ্রম, ‘লাল গেঞ্জি’ চেয়ে বড় কাকাকে ঈদের দিনে সারা এলাকা ঘুরানো, কালাচানে (ভূতে) ধরার পর সুন্দরী শিক্ষার্থীদের চিকিৎসায় নরেশ স্যারের (বাবু নরেশ চন্দ্র সরকার) কার্যক্রম ইত্যাদি। রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছ কাটতে গিয়ে উপর থেকে নীচে পড়ে যাওয়া আহম্মদ হুজুরের অবস্থা ছিল ভীষণ কষ্টকর। দামান্দে (মরহুম রওশন আলী কবিরাজ) অত্যন্ত সাবলীল ও প্রাঞ্জল ভাষায় শিক্ষণীয় গল্প-ঘটনা-ইতিহাস বলতেন, শারীরিক-মানসিকভাবে সুস্থ থাকার টিপস দিতেন; আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতাম।

জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য সখিপুর-টাঙ্গাইল-ঢাকায় মৌলভী কাকা (মাওঃ ক্বারী মোঃ শামছুজ্জামান) ও করিম হুজুর (মাওঃ আ.ফ.ম আব্দুল করিম) আমাকে নিয়ে যেতেন। থানা-জেলা-বিভাগীয় পর্যায়ে পুরস্কৃত-বিজয়ী হলে আমার শিক্ষকদেরও অনেক খুশি হতে দেখতাম। ৩য় শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষায় প্রথম হওয়া, ৫ম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়ায় আত্মিয় স্বজনদেরও আনন্দিত হতে দেখতাম। অর্থাৎ তখন অন্যের সাফল্য-অর্জনেও খুশি হবার মতো মানসিক উদারতা বেশ ছিল। অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষা দেয়ার সময় নলুয়ার মনির কাকার আন্তরিকতা, দাদা-দাদির ভালোবাসাময় সান্নিধ্য ও সহপাঠী লিটনের (লোকমান হোসেন চান্দু) সাথে সময় কাটানো দারুণভাবে উপভোগ করেছিলাম। মনোরা ফুফুদের (মনোয়ারা আক্তার মুক্তা) বাড়ি থেকে বাহারি ফুল গাছের ঢাল বা বীজ এনে ছোটবোন ও আমি আমাদের উঠানে লাগাতাম।

গ্রামীণ প্রকৃতি

গ্রামে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়, ফসলের ক্ষেত দেখে চক্ষু শীতল করা যায়। যেদিকে দৃষ্টি যায় সবুজ আর সবুজ দেখা যায়, ছবির মতো সাজানো গোছানো প্রান্তর দেখা যায়, কুয়াশায় সূর্যের লুকোচুরি খেলা দেখার সুযোগ পাওয়া যায়, প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়া যায়, নৈসর্গিক পরিবেশে মুহুর্তে যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি ভুলা যায়।

গ্রাম মানেই যেন সবুজ শ্যামল, ছায়া ঢাকা, পাখি ঢাকা, শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশ। যেখানে পথিকের হাঁটার ক্লান্তি দূর হতে পারে ঘাসের সবুজ গালিচার পরশে। যেন কল্পনার চিত্রগুলো রংতুলিতে ফুঁটিয়ে তোলা। এখানকার খোলামেলা জায়গায় বসে আকাশ কিংবা চাঁদ দেখা যায়, নির্মল বাতাসে প্রাণ জুড়ানো যায়। কর্মক্লান্ত নগর জীবন এবং কোলাহল ছেড়ে বাড়ি যেয়ে বাড়ির উঠানে বসে গল্প করায় অন্যরকম আনন্দ পাওয়া যায় । মনের খোরাক জোগাড় করতে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের নিকট সবুজের সমারোহ মনোমুগ্ধকর হয় নি:সন্দেহে।

সবুজ প্রকৃতিকে নিবিড়ভাবে উপভোগ করতে গ্রামের সবুজে ঘেরা জায়গা নানাদিক থেকে আকর্ষনীয়। গ্রামীণ নয়ন জুড়ানো আর মন ভুলানো দৃশ্য ও মানুষের হৃদ্যতা-সরলতা-আন্তরিকতা প্রমাণ করে দেশের মাটি ও মানুষকে জানতে-বুঝতে হলে গ্রামের কাছে যেতে হবে। অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দযমন্ডিত গ্রামীণ পরিবেশের সুনিবিড় ছোঁয়ার অনুভূতি সত্যি খুব চমৎকার। গ্রামে পশুপাখি ও গাছের সারি যেন ছায়া ঢাকা এক স্বপ্নপূরী তৈরি করে।

ভিলেজ পলিটিক্স

গ্রামের কথা মনে এলেই মনের মধ্যে ভেসে ওঠে সুশীতল ছায়া ঘেরা কোনো দৃশ্যের ছবি। ফসলের মাঠের মাঝ দিয়ে আঁকা বাঁকা সরু মোঠো পথ। সবুজ গ্রামের মধ্যে উঁকি দেওয়া সবুজ গাছের সারি। গ্রামের মানুষগুলোও যেন ছিল একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। একে অপরের সুখে-দুখে এগিয়ে আসত। যে কোনো ধরনের সমস্যা গ্রামীণ সালিশেই সমাধান হয়ে যেত। শত্রুতা পরিণত হতো বন্ধুত্বে। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সেই গ্রামীণ সালিশ ব্যবস্থায়ও ঢুকে পড়েছে স্বার্থপরতা, পক্ষপাতিত্ব ও অবৈধ অর্থনৈতিক লেনদেন ইত্যাদি; যা সৌহার্দপূর্ণ সেই গ্রামীণ শৃঙ্খলাকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

গ্রামীণ বিচার বা সালিশ ব্যবস্থা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে; ন্যায় সঙ্গত না হওয়ায় সমাজ জীবনে প্রতিহিংসা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগে গ্রামে বসবাসকারীদের জীবনযাপনে নানাবিধ সমস্যা সমাধান করত গ্রাম্য সালিশ ব্যবস্থা। কিন্তু এখন গ্রাম্য সালিশ ব্যবস্থা মানুষকে শোষণের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় ৮০ ভাগ সালিশ ন্যায়সঙ্গত হয় না। ফলে দুর্নীতিগ্রস্ত গ্রাম্য সালিশী ব্যবস্থাই গ্রাম্য উন্নয়নে পথে অন্তরায়। গ্রাম্য সালিশে সরকারের প্রতিনিধির ক্ষমতার দাপটে প্রতিপক্ষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সালিশগণ যে পক্ষ থেকে টাকা বেশি সেই পক্ষে রায় চলে যায়। বিচারপ্রার্থী ব্যক্তির ন্যায় কথাকে সমর্থন না দেয়ার লোক না থাকার কারণে ন্যায় বিচার পাওয়া যায় না।

সহজ-সরল ও ভালোবাসায় পরিপূর্ণ গ্রামের সাধারণ জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে এদের নীচতা, হীনতা ও হিংস্রতা। গ্রামে কোনো সুন্দরী মেয়ের দিকে কু-দৃষ্টি পড়লে ফাঁয়দা হাসিল করতে ঐ সুন্দরী মেয়েকে নানা কৌশলে সমাজের কাছে দুশ্চরিত্রা পর্যন্ত বানান। চরম সুবিধাবাদী পেশাদার কূটবুদ্ধি সম্পন্ন ষড়যন্ত্রপ্রিয়রা যখন যে সরকার আসে তার পক্ষেই কাজ করে, সারাক্ষণ মামলা মোকদ্দমা ও বিচার সালিশ নিয়েই ব্যস্ত থাকে, তিলকে তাল করে, প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য ঘটনার ব্যাখ্যা নিজ সুবিধামতো করে তুচ্ছ ঘটনাকে বড় করে লড়াই বাধিয়ে দেয়। উপঢৌকন-ঘুষ আদায়ই হয় তাদের মূল উদ্দেশ্য।ভিলেজ পলিটিকসের নেতিবাচক প্রভাব অনেক সময় জাতীয় রাজনীতিকে আক্রান্ত করে, সঙ্কীর্ণ ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষা করে। কখনও কখনও শহরের ডার্টি পলিটিক্স বা নোংরা রাজনীতির চেয়েও ভিলেজ পলিটিক্স বেশি মারাত্মক হয়ে ওঠে।

ঈদের দিন

খোলা মাঠের ইদগাহে ঈদের জামাত হতো। কোলাকুলি-করমর্দন করে শুভেচ্ছা বিনিময় হতো। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু, প্রতিবেশীর বাড়িতে যাতায়াত ও খাওয়া-দাওয়ার রেওয়াজ ছিল। ঈদ উপলক্ষে নতুন জামাকাপড় কেনা হতো। যারা ঢাকায় থাকতেন, তারাও ছেলে-মেয়ে নিয়ে নাড়ির টানে গ্রামে ফিরতেন। চাঁদ রাতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ। তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানি তাগিদ’ গান বাজতো। আনন্দের হিল্লোল বয়ে আনতো, প্রসন্ন প্রফুল্ল চিত্তে ঘরে ঘরে রেডিওতে বাজতো এই গান। অনেকেই মুখে মুখে গাইতো। ঘরবন্দি জীবনে উৎসবের প্রাণটাই আজ বড় শুকনো, বিবর্ণ।

বন্ধুদের মিলনমেলা, হৈ-হুল্লোড়, ঘুরে বেড়ানো, প্রতিবেশীদের নিয়ে খাওয়াদাওয়া, আড্ডা দেওয়া। প্রবাসীরাও দেশে এসে মা-বাবা ও ভাই-বোনদের সঙ্গে একত্র হতো। অনাবিল আনন্দের আবহ, খুশির জোয়ার। শান্তি, সম্প্রীতি ও মানবতার নতুন বার্তা নিয়ে আসা ঈদ আসতো। হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে মনে মানব প্রেম জেগে উঠতো। মন হতো উদার, সহমর্মিতাপূর্ণ ও আল্লাহর প্রেমের রঙিন। প্রবৃত্তির প্ররোচনাকে দমন করে বিবেকের শক্তি জাগ্রত হতো। সব ক্ষুদ্রতা, সংকীর্ণতা, তুচ্ছতা ভুলে সামাজিক ঐক্য, সংহতি ও ভালবাসার নিবিড় বন্ধন সৃষ্টি হতো। একজন আরেকজনের সুখ, সমৃদ্ধি, শান্তি কামনা করতো।

ছেলেবেলার ঈদে নিজের মতো করে সময় কাটানো যেত। সেসব স্মৃতিই করোনাকালের ঈদের বড় সম্বল। সাধারণত ছোটবেলায় ঈদ আনন্দ নতুন জামা-জুতা ঘরে আসার পর থেকেই শুরু হয়ে যেত! ঈদের মৌসুমে নতুন জামাকাপড় নিয়ে বেশ একটা আমেজে থাকতাম। বাড়িতে বাড়িতে ইফতার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের ফলে অনেকের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ ছিল আনন্দের; ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে দীর্ঘ সময় ধরে মোনাজাত হতো। ঈদের চাঁদ দেখার জন্য সুমনদের বাড়ির উত্তর পাশের খোলা জায়গায় ছোটদের সাথে বড়রাও যোগ দিতেন। ঈদের চাঁদ একসাথে দেখা যে কতটা আনন্দের হতে পারে তা তখনকার স্মৃতি ভুলে গেলে আর অনুভবই করতে পারতাম না। চাঁদ দেখার পর রীতিমতো আনন্দ মিছিল হতো, শ্লোগান দিতো!  ভোরবেলায় ঈদের গোসলের সাবান নতুন হতে হতো, কে আগে গোসল করবে তা নিয়েও ভাই-বোনদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হতো!

নতুন জামা-কাপড় পড়ে টুপি মাথায় দিয়ে আতর মেখে সেমাই খেয়েই মতিয়ার ভাই, সেলিম নানা, হারুন নানা, হাবিবুর, সুমনসহ দলবেঁধে ইদগাহে যেতাম। চোখে-মুখে থাকতো আনন্দের ঝলক। ঈদের নামাযের আগে কবিতা আবৃত্তি-কুরআন তেলাওয়াত-ইসলামিক গান করতাম! নামাজ শেষে কোলাকুলি, সাথে পরিচিতজনদের বাসায় নিয়ে আসা, দলবেঁধে বেড়ানোর অনুভূতি ছিল অন্যরকম আনন্দের।  ঈদ আসে ঈদ যায়। হানারচালা গ্রামের মধুর ঈদের দিনগুলো খুবই মিস করি।  ঈদে এখনো হাতীবান্ধায় গ্রামে যেতে খুব ইচ্ছে করে। সাধারণত তক্তারচালায় ঈদের নামাজ আদায় করলেও দড়ানীপাড়া জামে মসজিদকে মিস করি!বড় কাকার দরাজ গলায় পুথিঁ পড়া, ছোট ফুফুর মুখে মাওঃ ক্বারী মোঃ শামছুজ্জামান কাকার লেখা কবিতা শুনা খুব আনন্দের ছিল। আসলে আমার বেড়ে ওঠা অনেকের অবদানে ভরপুর।

প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত গ্রামেই পড়েছি; সে সময়ের ঈদগুলো ছিল এমনই। শৈশবের ঈদের স্মৃতি গ্রামকে ঘিরেই। কী যে মায়া আর আনন্দঘেরা ছিল গ্রামীণ ঈদ! ছোটবেলায় হাতে লিখে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে ঈদকার্ড বানাতাম! ঈদের আগে প্রবাসী বাবার পাঠানো চিঠি পেলে তা নিয়েই অনেক আনন্দে দিনটা কেটে যেত আমার। তখন অতি অল্পতেই অসাধারণ আনন্দ হতো। মনটা ছিল প্রশস্ত নদীর মতো। মনে এত বেশি জায়গা ছিল যে ছোট একেকটা ঘটনায় প্রাণখোলা আনন্দ হতো। গনি ভাই কর্তৃক কিনে আনা প্যান্ট-শার্ট ছিল দারুণ উত্তেজনার, আনন্দের জোয়ারে ভেসেছিলাম। খুবই দুরন্ত ছিলাম বলে ছেলেবেলায় আমাকে চোখে চোখে রাখতো আমার দুই ফুফু। তবে ঈদের সময় একটু স্বাধীনতা বেশি পাওয়া খুবই প্রাণভরে উপভোগ করতাম। বড়দের কাছ থেকে নতুন টাকা বা ঈদের সেলামি পাওয়া আনন্দে ভিন্ন মাত্রা যোগ করতো। গ্রামে শৈশবের প্রাণখোলা ঈদ অনেক বেশি তাড়িত করে আমাকে। শৈশবের ঈদ ধীরে ধীরে বিবর্তিত হয়েছে এবং হচ্ছে এখনো। এবারের ঈদটাতো স্বাভাবিক ভাবে হচ্ছে না। কোনো কোলাকুলি হয়নি, কোনো সেলামি আদান প্রদান হয়নি, কারো বাসায় যাওয়া হয়নি, কেউ বাসায় আসেনি। করোনাকালের এই ঈদটা আমার ছোট্ট মেয়ে দুজনের সাথেই কাটলো। ভাবনায় ছিল পুরোনো দিনের কথা। মনে পড়ছিল ছোটবেলার ঈদ-স্মৃতি।

রমজান মাস, তারাবীহ ও ইফতার

রমজানে মসজিদে খতম তারাবিহ হতো। মসজিদে ইফতার অনুষ্ঠান হতো ও ইতেকাফ হতো। নামাজ মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে পড়াকে তাগিদ দেয়া হতো। নামাজ শেষে জিকির-আজকার, তাওবা-ইসতেগফার, দোয়া-দরূদ পড়া হতো। জুম্মার নামাজ শেষে দান-খয়রাত করা হতো। কুরআন শিক্ষার আসর বসতো, অনেক পরিবারই সামাজিকভাবে ইফতার অনুষ্ঠান আয়োজন করতো, মসজিদ ও মক্তব্যে নৈতিক ও ধর্মীয় প্রশিক্ষণ হতো।  অভুক্ত ও অসহায় মানুষেরকে ইফতার সামগ্রী ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হতো।  অনেকই জাকাতের অর্থ পৌঁছে দিতেন। প্রতিবছর চাঁদ দেখার ঘোষণা হওয়ার পর বিভিন্ন স্থানের মসজিদে থেকে ঘোষণা আসতো, রমজানুল মোবারক, আর ঘোষণা করা হতো তারাবির নামাজের সময়।  মসজিদে তারাবির নামাজে শরিক হওয়া ছিল খুবই আনন্দের। উৎসবমুখর পরিবশে বিরাজ করতো । মসজিদে শেষ দশকে কয়েকজন ইতিকাফে বসতো।

ধর্মীয় শিক্ষা

রমজানে মসজিদে খতম তারাবিহর আগে-পরে মাদানী হুজুরের (হাফেজ মাওঃ আনিসুর রহমান আল মাদানী) হৃদয়স্পর্শী বয়ান থেকে ধর্ম-নৈতিকতার (মাসআলা-মাসায়েল) জ্ঞানার্জন হয়েছে। আহম্মদ হুজুরের (ক্বরী আহমাদ আলী) বাসায় ও জুম্মাপাড়া মক্তবে মুন্সি হাফিজ উদ্দিনের কাছে কোরআনের সহীহ তেলাওয়াত শিখতে যেতাম ছোটবোনসহ। ঢাকা থেকে সাঈদ কাকা (হাফেজ মাওঃ সাঈদুর রহমান) গ্রামে আসলে সুমধুর কণ্ঠে কোরআন তেলাওয়াত শুনাতেন-শুনতেন এবং ইসলামী গান শুনাতেন। ধর্মীয় ও নৈতিক বিষয়াদি নিয়ে হৃদয়স্পর্শী বয়ান এবং এসব আড্ডার কথা খুব মনে পড়ে!  কাক ডাকা ভোরে মৃত্যুহীন প্রাণ মরহুম হাজী আজিজুল ইসলাম খলিফা ভাই এর সাথে মসজিদে নামাজ পড়তে যেতাম। রমজান মাসের শেষ দশকে শামসুজ্জামান কাকাসহ হাজী মরহুম ফয়েজ উদ্দিন মেম্বার, ক্বারী আহমাদ আলী হুজুর, মসজিদের মোয়াজ্জিন ও মক্তবের প্রশিক্ষক মুন্সি হাফিজ উদ্দিন কাকা ইতিকাফে বসতেন। উনাদের জানাশুনা-অভিজ্ঞতা থেকে জেনেও আমরা সমৃদ্ধ হতাম।

ডাকঘর ও চিঠি

বাবাসহ আত্মীয়-স্বজন অনেকেই বিদেশ থাকতো। মোবাইল ফোন সহজলভ্য ছিল না। ডাকই ছিল যোগাযোগের একমাত্র ব্যবস্থা। মতিয়ার ভাইয়ের সাথে  বিকালে কামালিয়া চালায় যেতাম। সাইকেল চালিয়ে চিঠিভর্তী ঝোলা নিয়ে  বাসাইল থেকে একজন ডাকঘরে আসতেন।  পোস্ট মাস্টার নতুন চিঠিগুলো হাতে নিয়ে নাম বলতেন। যদি কোনোদিন চিঠি হাতে তুলে দিতেন তাহলে আনন্দে মন ভরে যেতো। পোষ্ট অফিসে চিঠি পোষ্ট করা বা নতুন চিঠির খোঁজ নেয়া। খামের ওপর সাঁটানো থাকতো নানান সুন্দর ডাকটিকেট। চিঠিপত্রের মধুর  বিষয়টি এখন অতীত দিনের স্মৃতি।

ডাকটিকিট সংগ্রহ

ডাকটিকিট সংগ্রহের মজার শখের পেছেনের কারণ ছিল অনেক আত্মীয় স্বজনের বিদেশ থাকা। বাবা, বড় কাকা, ছোট কাকাসহ অনেকেই বিদেশ থাকতেন। চিঠি পাঠাতেন। ইনভেলাপে ডাকটিকিট লাগানো থাকতো।  সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার ডাকটিকিট বেশি ছিল। ফেলে দেয়া খাম বা আত্মীয়-স্বজনের বাসায় বেড়াতে গেলে পাওয়া ডাকটিকিটও নিয়ে আসতাম। ডাকটিকিট সংগ্রহ একটি শখে পরিণত হযয়েছিল। ডাকটিকিট তুলে অ্যালবাম বা খাতার মাঝে সংগ্রহ করে রাখতাম এবং  বন্ধুদের দেখিয়ে আনন্দিতও হতাম। আসলে ডাকটিকিট সংগ্রহকে ‘জগতের বৃহত্তম শখ’ বলা হয়।

প্রেমের কবিতা: সেরা ৩০টি ভালোবাসার কবিতা || বাংলা সেরা প্রেমের কবিতা সমগ্র || Best Romantic Bangla Premer Kobita

 প্রেমের কবিতা - প্রেম ও প্রেমের কবিতা পড়তে প্রতিটি মানুষই পছন্দ করেন । আপনি কি ইন্টারনেটে সেরা প্রেমের কবিতা ( Premer Kobita )  বা ভালোবাসার কবিতা (Valobashar Kobita ) খুঁজছেন ? তাহলে বলবো আপনার খোঁজ এখানে শেষ হতে পারে । কারন এই পোস্টে বং কানেকশনের তরফ থেকে রয়েছে বাংলার সেরা কবিদের সেরা কিছু ভালোবাসায় মাখানো সেরা প্রেমের কবিতা । ভালোবাসা আর প্রিয় ভালোবাসার মানুষটির  জন্য এই ভালোবাসার কবিতাগুলো আপনার প্রেমকে নিয়ে যাবে এক অন্য আঙ্গিকে ।

এখানে রয়েছে :-

বিবাহিতাকে - জয় গোস্বামী
কথা আছে - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
হঠাৎ দেখা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আমার ভিতরে বাহিরে - রুদ্র শহীদুল্লাহ
প্রেমিক - জয় গোস্বামী
চন্দরীতি - মহাদেব সাহা
নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
পাগলী তোমার সঙ্গে - জয় গোস্বামী
একবার ভালোবেসে দেখো - মহাদেব সাহা
প্রেমিক জনের চিঠি - শ্রীজাত
একটি মেয়ের জন্য - রুদ্র গোস্বামী
গোপন প্রিয়া - কাজী নজরুল ইসলাম
হৃদয়ের ঋণ - হেলাল হাফিজ
তুই কি আমার হবি - আনিসুল হক
তোকে নিয়ে এলোমেলো - হাবিব কাশফ
ভালোবাসি ভালোবাসি - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
তোমার চোখ এত লাল কেন ? - নির্মলেন্দু গুণ
আমি খুব অল্প কিছু চাই - হুমায়ুন আহমেদ
একবার তুমি - শক্তি চট্টোপাধ্যায়
যদি বাসোই - তসলিমা নাসরিন
আকাশলীনা - জীবনানন্দ দাশ
তুমি - রাজদ্বীপ দত্ত

                               

                                         বিবাহিতাকে
                                       – জয় গোস্বামী



কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে, তুমি আমার সামনে দাড়ালেই আমি
তোমার ভিতরে একটা বুনো ঝোপ দেখতে পাই।
ওই ঝোপে একটা মৃতদেহ ঢাকা দেওয়া আছে।
অনেকদিন ধ’রে আছে। কিন্তু আশ্চর্য যে
এই মৃতদেহ জল, বাতাস, রৌদ্র ও সকলপ্রকার
কীট-বীজাণুকে প্রতিরোধ করতে পারে। এরপচন নেই।
বন্য প্রাণীরাও এর কাছে ঘেঁষে না।
রাতে আলো বেরোয় এর গা থেকে।
আমি জানি, মৃতদেহটা আমার।
কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে, এই জারিজুরি এবার ফাঁস হওয়া প্রয়োজন।
আর তা হবেও, যেদিন চার পায়ে গুঁড়ি মেরেগিয়ে
পা কামড়ে ধ’রে, ওটাকে, ঝোপ থেকে
টেনে বার করব আমি।

            

                   কথা আছে

                         – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
 
 
বহুক্ষণ মুখোমুখি চুপচাপ, একবার চোখ তুলে সেতু
আবার আলাদা দৃষ্টি, টেবিলে রয়েছে শুয়ে
পুরোনো পত্রিকা
প্যান্টের নিচে চটি, ওপাশে শাড়ির পাড়ে
দুটি পা-ই ঢাকা
এপাশে বোতাম খোলা বুক, একদিন না-কামানো দাড়ি
ওপাশে এলো খোঁপা, ব্লাউজের নীচে কিছু
মসৃণ নগ্নতা
বাইরে পায়ের শব্দ, দূরে কাছে কারা যায়
কারা ফিরে আসে
বাতাস আসেনি আজ, রোদ গেছে বিদেশ ভ্রমণে।
আপাতত প্রকৃতির অনুকারী ওরা দুই মানুষ-মানুষী
দু‘খানি চেয়ারে স্তব্ধ, একজন জ্বলে সিগারেট
অন্যজন ঠোঁটে থেকে হাসিটুকু মুছেও মোছে না
আঙুলে চিকচিকে আংটি, চুলের কিনারে একটু ঘুম
ফের চোখ তুলে কিছু স্তব্ধতার বিনিময়,
সময় ভিখারী হয়ে ঘোরে
অথচ সময়ই জানে, কথা আছে, ঢের কথা আছে।
 
 
             হঠাৎ দেখা
              - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা,
ভাবি নি সম্ভব হবে কোনোদিন।
আগে ওকে বারবার দেখেছি
লালরঙের শাড়িতে
দালিম ফুলের মতো রাঙা;
আজ পরেছে কালো রেশমের কাপড়,
আঁচল তুলেছে মাথায়
দোলনচাঁপার মতো চিকনগৌর মুখখানি ঘিরে।
মনে হল, কালো রঙে একটা গভীর দূরত্ব
ঘনিয়ে নিয়েছে নিজের চার দিকে,
যে দূরত্ব সর্ষেখেতের শেষ সীমানায়
শালবনের নীলাঞ্জনে।
থমকে গেল আমার সমস্ত মনটা;
চেনা লোককে দেখলেম অচেনার গাম্ভীর্যে।
হঠাৎ খবরের কাগজ ফেলে দিয়ে
আমাকে করলে নমস্কার।
সমাজবিধির পথ গেল খুলে,
আলাপ করলেম শুরু —
কেমন আছ, কেমন চলছে সংসার
ইত্যাদি।
সে রইল জানলার বাইরের দিকে চেয়ে
যেন কাছের দিনের ছোঁয়াচ-পার-হওয়া চাহনিতে।
দিলে অত্যন্ত ছোটো দুটো-একটা জবাব,
কোনোটা বা দিলেই না।
বুঝিয়ে দিলে হাতের অস্থিরতায় —
কেন এ-সব কথা,
এর চেয়ে অনেক ভালো চুপ করে থাকা।
আমি ছিলেম অন্য বেঞ্চিতে
ওর সাথিদের সঙ্গে।
এক সময়ে আঙুল নেড়ে জানালে কাছে আসতে।
মনে হল কম সাহস নয়;
বসলুম ওর এক-বেঞ্চিতে।
গাড়ির আওয়াজের আড়ালে
বললে মৃদুস্বরে,
“কিছু মনে কোরো না,
সময় কোথা সময় নষ্ট করবার।
আমাকে নামতে হবে পরের স্টেশনেই;
দূরে যাবে তুমি,
দেখা হবে না আর কোনোদিনই।
তাই যে প্রশ্নটার জবাব এতকাল থেমে আছে,
শুনব তোমার মুখে।
সত্য করে বলবে তো?
আমি বললেম, “বলব।”
বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়েই শুধোল,
“আমাদের গেছে যে দিন
একেবারেই কি গেছে,
কিছুই কি নেই বাকি।”
একটুকু রইলেম চুপ করে;
তারপর বললেম,
“রাতের সব তারাই আছে
দিনের আলোর গভীরে।”
খটকা লাগল, কী জানি বানিয়ে বললেম না কি।
ও বললে, “থাক্‌, এখন যাও ও দিকে।”
সবাই নেমে গেল পরের স্টেশনে;
আমি চললেম একা।


আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে
                 – রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ


আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে ,
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে।

ঢেকে রাখে যেমন কুসুম, পাপড়ির আবডালে ফসলের ঘুম।
তেমনি তোমার নিবিঢ় চলা, মরমের মূল পথ ধরে।

পুষে রাখে যেমন ঝিনুক , খোলসের আবরণে মুক্তোর সুখ।
তেমনি তোমার গভীর ছোঁয়া, ভিতরের নীল বন্দরে।

ভাল আছি ভাল থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো।
দিয়ো তোমার মালাখানি, বাউলের এই মনটারে।
আমার ভিতরে বাহিরে………

Valobasar Kobita


                          প্রেমিক 
                                 – জয় গোস্বামী

তুমি আমাকে মেঘ ডাকবার যে বইটা দিয়েছিলে একদিন
আজ খুলতেই দেখি তার মধ্যে এক কোমর জল।
পরের পাতায় গিয়ে সে এক নদীর অংশ হয়ে দূরে বেঁকে
গেছে।

আমাকে তুমি উদ্ভিদ ভরা যে বইটা দিয়েছিলে
আজ সেখানে এক পা-ও এগোনো যাচ্ছে না, এত জঙ্গল।
গাছগুলো এত বড় হয়েছে যে মাটিতে আলো আসতে
দিচ্ছে না।

তুমি আমাকে ঝর্ণা শেখবার যে বইটা দিয়েছিলে
আজ সেখানে মস্ত এক জলপ্রপাত লাফিয়ে পড়ছে
সারাদিন।

এমনকি তোমার দেওয়া পেজ-মার্কের সাদা পালকটাও
যে বইতে রেখেছিলাম, সেখানে আজ
কত সব পাখি উড়ছে, বসছে, সাঁতার কাটছে।
তোমার দেওয়া সব বই এখন মরুভূমি আর পর্বতমালা,
সব বই আজ সূর্য, সব বই দিগন্ত …

অথচ আজকেই যে আমার লাইব্রেরি দেখতে আসছে বন্ধুরা
আমার পড়াশোনা আছে কিনা জানার জন্য! তাদের আমি
কী দেখাবো? তাদের সামনে কোন মুখে দাঁড়াবো আমি!

তুমি আমাকে ঝর্ণা শেখবার যে বইটা দিয়েছিলে
আজ সেখানে মস্ত এক জলপ্রপাত লাফিয়ে পড়ছে
সারাদিন।

এমনকি তোমার দেওয়া পেজ-মার্কের সাদা পালকটাও
যে বইতে রেখেছিলাম, সেখানে আজ
কত সব পাখি উড়ছে, বসছে, সাঁতার কাটছে।
তোমার দেওয়া সব বই এখন মরুভূমি আর পর্বতমালা,
সব বই আজ সূর্য, সব বই দিগন্ত …

অথচ আজকেই যে আমার লাইব্রেরি দেখতে আসছে বন্ধুরা
আমার পড়াশোনা আছে কিনা জানার জন্য! তাদের আমি
কী দেখাবো? তাদের সামনে কোন মুখে দাঁড়াবো আমি!


        ছন্দরীতি
            – মহাদেব সাহা

তোমাদের কথায় কথায় এতো ব্যকরণ
তোমাদের উঠতে বসতে এতো অভিধান,
কিন্তু চঞ্চল ঝর্ণার কোনো ব্যাকরণ নেই
আকাশের কোনো অভিধান নেই, সমুদ্রের নেই।
ভালোবাসা ব্যাকরণ মানে না কখনো
হৃদয়ের চেয়ে বড়ো কোনো সংবিধান নেই
হৃদয় যা পারে তা জাতিসঙ্ঘ পারে না
গোলাপ ফোটে না কোনো ব্যাকরণ বুঝে।
প্রেমিক কি ছন্দ পড়ে সম্বোধন করে?
নদী চিরছন্দময়, কিন্তু সে কি ছন্দ কিছু জানে,
পাখি গান করে কোন ব্যাকরণ মেনে?
তোমারাই বলো শুধু ব্যাকরণ, শুধু অভিধান!
বলো প্রেমের কি শুদ্ধ বই, শুদ্ধ ব্যাকরণ
কেউ কি কখনো সঠিক বানান খোঁজে প্রেমের চিঠিতে
কেউ কি জানতে চায় প্রেমালাপ স্বরে না মাত্রায়?
নীরব চুম্বনই জানি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ছন্দরীতি।


 
নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে
                  – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে
রয়েছ নয়নে নয়নে,
হৃদয় তোমারে পায় না জানিতে
হৃদয়ে রয়েছ গোপনে।

বাসনা বসে মন অবিরত,
ধায় দশ দিশে পাগলের মতো।
স্থির আঁখি তুমি ক্ষরণে শতত
জাগিছ শয়নে স্বপনে।

সবাই ছেড়েছে নাই যার কেহ
তুমি আছ তার আছে তব কেহ
নিরাশ্রয় জন পথ যার যেও
সেও আছে তব ভবনে।

তুমি ছাড়া কেহ সাথি নাই আর
সমুখে অনন্ত জীবন বিস্তার,
কাল পারাপার করিতেছ পার
কেহ নাহি জানে কেমনে।

জানি শুধু তুমি আছ তাই আছি
তুমি প্রাণময় তাই আমি বাঁচি,
যতো পাই তোমায় আরো ততো যাচি
যতো জানি ততো জানি নে।

জানি আমি তোমায় পাবো নিরন্তন
লোক লোকান্তরে যুগ যুগান্তর
তুমি আর আমি, মাঝে কেহ নাই
কোনো বাঁধা নাই ভুবনে।

নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে
রয়েছ নয়নে নয়নে।
 

      পাগলী, তোমার সঙ্গে
                          – জয় গোস্বামী


পাগলী, তোমার সঙ্গে ভয়াবহ জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ধুলোবালি কাটাব জীবন
এর চোখে ধাঁধা করব, ওর জল করে দেব কাদা
পাগলী, তোমার সঙ্গে ঢেউ খেলতে যাব দু’কদম।

অশান্তি চরমে তুলব, কাকচিল বসবে না বাড়িতে
তুমি ছুঁড়বে থালা বাটি, আমি ভাঙব কাঁচের বাসন
পাগলী, তোমার সঙ্গে বঙ্গভঙ্গ জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ৪২ কাটাব জীবন।

মেঘে মেঘে বেলা বাড়বে, ধনে পুত্রে লক্ষ্মী লোকসান
লোকাসান পুষিয়ে তুমি রাঁধবে মায়া প্রপন্ঞ্চ ব্যন্জ্ঞন
পাগলী, তোমার সঙ্গে দশকর্ম জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে দিবানিদ্রা কাটাব জীবন।

পাগলী, তোমার সঙ্গে ঝোলভাত জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে মাংসরুটি কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে নিরক্ষর জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে চার অক্ষর কাটাব জীবন।

পাগলী, তোমার সঙ্গে বই দেখব প্যারামাউন্ট হলে
মাঝে মাঝে মুখ বদলে একাডেমি রবীন্দ্রসদন
পাগলী, তোমার সঙ্গে নাইট্যশালা জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে কলাকেন্দ্র কাটাব জীবন।

পাগলী, তোমার সঙ্গে বাবুঘাট জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে দেশপ্রিয় কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে সদা সত্য জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ‘কী মিথ্যুক’ কাটাব জীবন।

এক হাতে উপায় করব, দুহাতে উড়িয়ে দেবে তুমি
রেস খেলব জুয়া ধরব ধারে কাটাব সহস্র রকম
লটারি, তোমার সঙ্গে ধনলক্ষ্মী জীবন কাটাব
লটারি, তোমার সঙ্গে মেঘধন কাটাব জীবন।

দেখতে দেখতে পুজো আসবে, দুনিয়া চিত্‍কার করবে সেল
দোকানে দোকানে খুঁজব রূপসাগরে অরূপরতন
পাগলী, তোমার সঙ্গে পুজোসংখ্যা জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে রিডাকশনে কাটাব জীবন।

পাগলী, তোমার সঙ্গে কাঁচা প্রুফ জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ফুলপেজ কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে লে আউট জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে লে হালুয়া কাটাব জীবন।

কবিত্ব ফুড়ুত্‍ করবে, পিছু পিছু ছুটব না হা করে
বাড়ি ফিরে লিখে ফেলব বড়ো গল্প উপন্যাসোপম
পাগলী, তোমার সঙ্গে কথাশিল্প জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে বকবকম কাটাব জীবন।

নতুন মেয়ের সঙ্গে দেখা করব লুকিয়ে চুরিয়ে
ধরা পড়ব তোমার হাতে, বাড়ি ফিরে হেনস্তা চরম
পাগলী, তোমার সঙ্গে ভ্যাবাচ্যাকা জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে হেস্তনেস্ত কাটাব জীবন।

পাগলী, তোমার সঙ্গে পাপবিদ্ধ জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ধর্মমতে কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে পুজা বেদি জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে মধুমালা কাটাব জীবন।

দোঁহে মিলে টিভি দেখব, হাত দেখাতে যাব জ্যোতিষীকে
একুশটা উপোস থাকবে, ছাব্বিশটা ব্রত উদযাপন
পাগলী, তোমার সঙ্গে ভাড়া বাড়ি জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে নিজ ফ্ল্যাট কাটাব জীবন।

পাগলী, তোমার সঙ্গে শ্যাওড়াফুলি জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে শ্যামনগর কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে রেল রোকো জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে লেট স্লিপ কাটাব জীবন।

পাগলী, তোমার সঙ্গে আশাপূর্ণা জীবন কাটাব
আমি কিনব ফুল, তুমি ঘর সাজাবে যাবজ্জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে জয় জওয়ান জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে জয় কিষান কাটাব জীবন।

সন্ধেবেলা ঝগড়া হবে, হবে দুই বিছানা আলাদা
হপ্তা হপ্তা কথা বন্ধ মধ্যরাতে আচমকা মিলন
পাগলী, তোমার সঙ্গে ব্রক্ষ্মচারী জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে আদম ইভ কাটাব জীবন।

পাগলী, তোমার সঙ্গে রামরাজ্য জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে প্রজাতন্ত্রী কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে ছাল চামড়া জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে দাঁতে দাঁত কাটাব জীবন।

এর গায়ে কনুই মারব রাস্তা করব ওকে ধাক্কা দিয়ে
এটা ভাঙলে ওটা গড়ব, ঢেউ খেলব দু দশ কদম
পাগলী, তোমার সঙ্গে ধুলোঝড় জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ‘ভোর ভয়োঁ’ কাটাব জীবন।

  একবার ভালোবেসে দেখো
                    – মহাদেব সাহা

তুমি যদি আমাকে না ভালোবাসো আর
এই মুখে কবিতা ফুটবে না,
এই কণ্ঠ আবৃতি করবে না কোনো প্রিয় পঙ্‌ক্তিমালা
তাহলে শুকিয়ে যাবে সব আবেগের নদী।
আমি আর পারবো না লিখতে তাহলে
অনবদ্য একটি চরণ, একটিও ইমেজ হবে না রচিত,
তুমি যদি আমাকে না ভালোবাসো তবে
কবিতার পান্ডুলিপি জুড়ে দেখা দেবে ঘুরে ঘুরে অনাবৃষ্টি, খরা।
তুমি যদি না তাকাও এই চোখ দেখবে না কিছু
উজ্জ্বল আলোর ভোর ঘন অন্ধকারে ঢেকে যাবে,
সন্ধ্যাতারা মনে হবে মৃত নিষ্পলক চোখ
যদি ফিরে না তাকাও মর্মে আর পল্লবিত হবে না কবিতা।
তুমি যদি না দাও চুম্বন এই মুখে ফুটবে না ভাষা
মরা গাঙে জাগবে না ঢেউ, দুই তীরে প্রাণের স্পন্দন,
হবে না শস্যের মাঠে শ্রাবণের ব্যাপক বর্ষণ
হৃদয়ে হৃদয়ে আর অঙ্কুরিত হবে না কবিতা, বাজবে না গান।
তুমি যদি আমাকে না ভালোবাসো আর
প্রকৃতই আমি আগের মতন পারবো না লিখতে কবিতা
আমার আঙুলে আর খেলবে না জাদুর ঝিলিক,
এই শাদা পৃষ্ঠা জুড়ে ফুটবে না জুঁই আর চাঁপা।
একবার ভালোবেসে দেখো, একবার কাছে ডেকে দেখো
আবার আগের মতো কীভাবে ফুটাই এক লক্ষ একটি গোলাপ
অনায়াসে কীভাবে আবার অনুভূতি করি সঞ্চারিত,
একবার ভালোসেবে দেখো আবার কীভাবে লিখি দুহাতে কবিতা।


    প্রেমিক জনের চিঠি 
                               – শ্রীজাত

ওই কথা কি এভাবে কেউ বলতে পারে?
হঠাৎ করে, সিড়ির বাঁকে, অন্ধকারে

নিশ্বাস নাক গন্ধ পোহায়, চনমিয়া…
ঘুপচি মতাে মুঠোর ভেতর একলা টিয়া

ছটফটাচ্ছে দেখতে পাচ্ছি। চাই না উড়ান?
ঠাকুর ঘরের চাল থেকে পাহাড়চূড়া?

ঠোটের উপর ঘাম মুছে নাও। ডাকছে নীচে।
নখের ঘরে কেটেছে হাত, ওষুধ মিছে।

বুকটুকুনির ওঠানামায় ধুকপুকুনি
জড়িয়ে নেওয়ার মন হলে কে ছাড়ত শুনি?

কিন্তু এখন সবটা ইচ্ছে করছে না যে
হয়তো হঠাৎ উড়ে টিয়া, ভিড়ের মাঝে…

এইটুকু তো অতৃপ্তি দাও প্রেমিক জনে,
একটা চুমু না-খাওয়া থাক, এই জীবনে!



     একটি মেয়ের জন্য
              – রুদ্র গোস্বামী

একা ফুটপাথ
আলো ককটেল
ভিজে নাগরিক রাত পদ্য।

তুই হেঁটে যাস
কাঁচ কুয়াশায়
জল ভ্রূণ ভাঙা চাঁদ সদ্য।

আমি প্রশ্ন
তুই বিস্ময়
চোখ চশমার নীচে বন্ধ।

ঠোঁট নির্বাক
চাওয়া বন্য
আমি ভুলে যাই দ্বিধা দ্বন্দ্ব।

জাগা রাত্রি
ঘুম পস্তায়
মোড়া রূপকথা পিচ রাস্তা

পোষা স্বপ্ন
ছিঁড়ে ছারখার
প্রিয় রিংটোন লাগে সস্তা।

তুই সত্যি
আরও সত্যি
তুই শিশিরের কুঁড়ি পদ্ম।

বাকি মিথ্যে
সব মিথ্যে
চেনা চার দেয়ালের গদ্য।

                  গোপন প্রিয়া 

                      – কাজী নজরুল ইসলাম

পাইনি ব’লে আজো তোমায় বাসছি ভালো, রাণি,
মধ্যে সাগর, এ-পার ও-পার করছি কানাকানি!
আমি এ-পার, তুমি ও-পার,
মধ্যে কাঁদে বাধার পাথার
ও-পার হ’তে ছায়া-তরু দাও তুমি হাত্‌ছানি,
আমি মরু, পাইনে তোমার ছায়ার ছোঁওয়াখানি।

নাম-শোনা দুই বন্ধু মোরা, হয়নি পরিচয়!
আমার বুকে কাঁদছে আশা, তোমার বুকে ভয়!
এই-পারী ঢেউ বাদল-বায়ে
আছড়ে পড়ে তোমার পায়ে,
আমার ঢেউ-এর দোলায় তোমার ক’রলো না কূল ক্ষয়,
কূল ভেঙেছে আমার ধারে-তোমার ধারে নয়!

চেনার বন্ধু, পেলাম না ক’ জানার অবসর।
গানের পাখী ব’সেছিলাম দু’দিন শাখার’ পর।
গান ফুরালো যাব যবে
গানের কথাই মনে রবে,
পাখী তখন থাকবো না ক’-থাকবে পাখীর ঘর,
উড়ব আমি,-কাঁদবে তুমি ব্যথার বালুচর!

তোমার পারে বাজল কখন আমার পারের ঢেউ,
অজানিতা! কেউ জানে না, জানবে না ক’ কেউ।
উড়তে গিয়ে পাখা হ’তে
একটি পালক প’ড়লে পথে
ভুলে’ প্রিয় তুলে যেন খোঁপায় গুঁজে নেও!
ভয় কি সখি? আপনি তুমি ফেলবে খুলে এ-ও!

বর্ষা-ঝরা এমনি প্রাতে আমার মত কি
ঝুরবে তুমি একলা মনে, বনের কেতকী?
মনের মনে নিশীথ-রাতে
চুমু দেবে কি কল্পনাতে?
স্বপ্ন দেখে উঠবে জেগে, ভাববে কত কি!
মেঘের সাথে কাঁদবে তুমি, আমার চাতকী!

দূরের প্রিয়া! পাইনি তোমায় তাই এ কাঁদন-রোল!
কূল মেলে না,-তাই দরিয়ায় উঠতেছে ঢেউ-দোল!
তোমায় পেলে থামত বাঁশী,
আসত মরণ সর্বনাশী।
পাইনি ক’ তাই ভ’রে আছে আমার বুকের কোল।
বেণুর হিয়া শূন্য ব’লে উঠবে বাঁশীর বোল।

বন্ধু, তুমি হাতের-কাছের সাথের-সাথী নও,
দূরে যত রও এ হিয়ার তত নিকট হও।
থাকবে তুমি ছায়ার সাথে
মায়ার মত চাঁদনী রাতে!
যত গোপন তত মধুর-নাই বা কথা কও!
শয়ন-সাথে রও না তুমি নয়ন-পাতে রও!

ওগো আমার আড়াল-থাকা ওগো স্বপন-চোর!
তুমি আছ আমি আছি এই তো খুশি মোর।
কোথায় আছ কেমনে রাণি
কাজ কি খোঁজে, নাই বা জানি!
ভালোবাসি এই আনন্দে আপনি আছি ভোর!
চাই না জাগা, থাকুক চোখে এমনি ঘুমের ঘোর!

রাত্রে যখন এক্‌লা শোব-চাইবে তোমার বুক,
নিবিড়-ঘন হবে যখন একলা থাকার দুখ,
দুখের সুরায় মস্ত্‌ হ’য়ে
থাকবে এ-প্রাণ তোমায় ল’য়ে,
কল্পনাতে আঁকব তোমার চাঁদ-চুয়ানো মুখ!
ঘুমে জাগায় জড়িয়ে র’বে, সেই তো চরম সুখ!

গাইব আমি, দূরের থেকে শুনবে তুমি গান।
থামবে আমি-গান গাওয়াবে তোমার অভিমান!
শিল্পী আমি, আমি কবি,
তুমি আমার আঁকা ছবি,
আমার লেখা কাব্য তুমি, আমার রচা গান।
চাইব না ক’, পরান ভ’রে ক’রে যাব দান।

তোমার বুকে স্থান কোথা গো এ দূর-বিরহীর,
কাজ কি জেনে?- তল কেবা পায় অতল জলধির।
গোপন তুমি আসলে নেমে
কাব্যে আমার, আমার প্রেমে,
এই-সে সুখে থাকবে বেঁচে, কাজ কি দেখে তীর?
দূরের পাখী-গান গেয়ে যাই, না-ই বাঁধিলাম নীড়!

বিদায় যেদিন নেবো সেদিন নাই-বা পেলাম দান,
মনে আমায় ক’রবে না ক’-সেই তো মনে স্থান!
যে-দিন আমায় ভুলতে গিয়ে
করবে মনে, সে-দিন প্রিয়ে
ভোলার মাঝে উঠবে বেঁচে, সেই তো আমার প্রাণ!
নাই বা পেলাম, চেয়ে গেলাম, গেলে গেলাম গান!

        হৃদয়ের ঋণ
              – হেলাল হাফিজ

আমার জীবন ভালোবাসাহীন গেলে
কলঙ্ক হবে কলঙ্ক হবে তোর,
খুব সামান্য হৃদয়ের ঋণ পেলে
বেদনাকে নিয়ে সচ্ছলতার ঘর

বাঁধবো নিমেষে। শর্তবিহীন হাত
গচ্ছিত রেখে লাজুক দু’হাতে আমি
কাটাবো উজাড় যুগলবন্দী হাত
অযুত স্বপ্নে। শুনেছি জীবন দামী,

একবার আসে, তাকে ভালোবেসে যদি
অমার্জনীয় অপরাধ হয় হোক,
ইতিহাস দেবে অমরতা নিরবধি
আয় মেয়ে গড়ি চারু আনন্দলোক।

দেখবো দেখাবো পরস্পরকে খুলে
যতো সুখ আর দুঃখের সব দাগ,
আয় না পাষাণী একবার পথ ভুলে
পরীক্ষা হোক কার কতো অনুরাগ।
 

   তুই কি আমার দুঃখ হবি 
                  – আনিসুল হক


তুই কি আমার দুঃখ হবি?
এই আমি এক উড়নচন্ডী আউলা বাউল
রুখো চুলে পথের ধুলো
চোখের নীচে কালো ছায়া।
সেইখানে তুই রাত বিরেতে স্পর্শ দিবি।
তুই কি আমার দুঃখ হবি?

তুই কি আমার শুষ্ক চোখে অশ্রু হবি?
মধ্যরাতে বেজে ওঠা টেলিফোনের ধ্বনি হবি?
তুই কি আমার খাঁ খাঁ দুপুর
নির্জনতা ভেঙে দিয়ে
ডাকপিয়নের নিষ্ঠ হাতে
ক্রমাগত নড়তে থাকা দরজাময় কড়া হবি?
একটি নীলাভ এনভেলাপে পুরে রাখা
কেমন যেন বিষাদ হবি।

তুই কি আমার শুন্য বুকে
দীর্ঘশ্বাসের বকুল হবি?
নরম হাতের ছোঁয়া হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি।
নিজের ঠোট কামড়ে ধরা রোদন হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি।
প্রতীক্ষার এই দীর্ঘ হলুদ বিকেল বেলায়
কথা দিয়েও না রাখা এক কথা হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি।

তুই কি একা আমার হবি?
তুই কি আমার একান্ত এক দুঃখ হবি?


      তোকে নিয়ে এলোমেলো 
                               – হাবীব কাশফ

নিঃসঙ্গতার সাথে সখ্য গড়েছিলাম ভালোই,
তারপর…

চোখে মোটা গ্লাসের চশমা
রুক্ষ চুলের লুকোচুরি
আর তার বন্য হাসির উচ্ছলতা,
ভেবেছিলাম তোকে নিয়ে লিখবো কবিতা,
এলোমেলো বন্য কবিতা।

আগুনঝরা ফাগুনে ঝাপসা চোখে
বাসন্তি শাড়ি জড়িয়ে খুজেছিলি আমাকে
হাজারো ভীড়ের মাঝে,
রঙ্গিন বৈশাখের তপ্ত রৌদ্দুরের নিঃস্বঙ্গতায়
হারিয়ে ফেলেছি তোকে
হাজারো রঙের ভীড়ে,
ভেবেছিলাম তোকে নিয়ে লিখবো আরো একটি কবিতা
এলোমেলো রঙ্গিন কবিতা।

তোর আঙ্গুলের ফাঁকে আঙ্গুল জড়িয়ে
ইচ্ছে ছিলো কাটাবো কতো অলস দুপুর,
তুই চেয়েরবি আমার চোখে
মোটা গ্লাসের চশমার ফাকে,
ভেবেছিলাম তোকে নিয়ে লিখবো একটি কবিতা
এলোমেলো অলস দুপুরের কবিতা।

একটি বর্ষা পেরিয়ে যায়
অঝোর বর্ষনে বিষন্নতার চাদর হয়ে,
শরতের স্নিগ্ধ বিকেলে
হাটবো কি দুজন আবারো একই ধারে?

অচেনা পথের ধুলো মাড়িয়ে
আঙ্গুলের ফাকে আঙ্গুল জড়িয়ে,
সেই মোটা গ্লাসের চশমা চোখে
পাড় হবে কতো শত গোধূলী বেলা।
ভেবেছিলাম তোকে নিয়ে লিখবো গোধুলি মাখা একটি কবিতা,

শত শত কবিতা
এলোমেলো কবিতা
কিছু তুচ্ছ কবিতা।
 

  ভালোবাসি, ভালোবাসি
             – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

ধরো কাল তোমার পরীক্ষা,
রাত জেগে পড়ার
টেবিলে বসে আছ,
ঘুম আসছে না তোমার
হঠাত করে ভয়ার্ত কন্ঠে উঠে আমি বললাম-
ভালবাসো?
তুমি কি রাগ করবে?
নাকি উঠে এসে জড়িয়ে ধরে বলবে,
ভালোবাসি, ভালোবাসি…..

ধরো ক্লান্ত তুমি,
অফিস থেকে সবে ফিরেছ,
ক্ষুধার্ত তৃষ্ণার্ত পীড়িত,
খাওয়ার টেবিলে কিছুই তৈরি নেই,
রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে
ঘর্মাক্ত আমি তোমার
হাত ধরে যদি বলি- ভালবাসো?
তুমি কি বিরক্ত হবে?
নাকি আমার হাতে আরেকটু চাপ দিয়ে বলবে,
ভালোবাসি, ভালোবাসি…..

ধরো দুজনে শুয়ে আছি পাশাপাশি,
সবেমাত্র ঘুমিয়েছ তুমি
দুঃস্বপ্ন দেখে আমি জেগে উঠলাম
শতব্যস্ত হয়ে তোমাকে ডাক দিয়ে যদি বলি-ভালবাসো?
তুমি কি পাশ ফিরে শুয়ে থাকবে?
নাকি হেসে উঠে বলবে,
ভালোবাসি, ভালোবাসি…..

ধরো রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি দুজনে,
মাথার উপর তপ্ত রোদ,
বাহন পাওয়া যাচ্ছেনা এমন সময়
হঠাত দাঁড়িয়ে পথ
রোধ করে যদি বলি-ভালবাসো?
তুমি কি হাত সরিয়ে দেবে?
নাকি রাস্তার সবার
দিকে তাকিয়ে
কাঁধে হাত দিয়ে বলবে,
ভালোবাসি, ভালোবাসি…..

ধরো শেভ করছ তুমি,
গাল কেটে রক্ত পড়ছে,
এমন সময় তোমার এক ফোঁটা রক্ত হাতে নিয়ে যদি বলি- ভালবাসো?
তুমি কি বকা দেবে?
নাকি জড়িয়ে তোমার গালের রক্ত আমার
গালে লাগিয়ে দিয়ে খুশিয়াল গলায় বলবে,
ভালোবাসি, ভালোবাসি…..

ধরো খুব অসুস্থ তুমি,
জ্বরে কপাল পুড়েযায়,
মুখে নেই রুচি,
নেই কথা বলার অনুভুতি,
এমন সময় মাথায় পানি দিতে দিতে তোমার মুখের
দিকে তাকিয়ে যদি বলি-ভালবাসো?
তুমি কি চুপ করে থাকবে?
নাকি তোমার গরম শ্বাস আমার শ্বাসে বইয়ে দিয়ে বলবে,
ভালোবাসি, ভালোবাসি..

ধরো যুদ্ধের দামামা বাজছে ঘরে ঘরে,
প্রচন্ড যুদ্ধে তুমিও অংশীদার,
শত্রুবাহিনী ঘিরে ফেলেছে ঘর
এমন সময় পাশে বসে পাগলিনী আমি তোমায়
জিজ্ঞেস করলাম-
ভালবাসো?
ক্রুদ্ধস্বরে তুমি কি বলবে যাও….
নাকি চিন্তিত আমায় আশ্বাস দেবে, বলবে,
ভালোবাসি, ভালোবাসি…….

ধরো দূরে কোথাও যাচ্ছ
তুমি,
দেরি হয়ে যাচ্ছে,বেরুতে যাবে,
হঠাত বাধা দিয়ে বললাম-ভালবাসো?
কটাক্ষ করবে?
নাকি সুটকেস ফেলে চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলবে,
ভালোবাসি, ভালোবাসি

ধরো প্রচন্ড ঝড়,উড়ে গেছে ঘরবাড়ি,
আশ্রয় নেই
বিধাতার দান এই পৃথিবীতে,
বাস করছি দুজনে চিন্তিত তুমি
এমন সময় তোমার
বুকে মাথা রেখে যদি বলি ভালবাসো?
তুমি কি সরিয়ে দেবে?
নাকি আমার মাথায় হাত রেখে বলবে,
ভালোবাসি, ভালোবাসি..

ধরো সব ছেড়ে চলে গেছ কত দুরে,
আড়াই হাত মাটির নিচে শুয়ে আছ
হতভম্ব আমি যদি চিতকার করে বলি-
ভালবাসো?
চুপ করে থাকবে?
নাকি সেখান থেকেই
আমাকে বলবে,
ভালোবাসি, ভালোবাসি…..

যেখানেই যাও,যেভাবেই থাক,
না থাকলেও দূর
থেকে ধ্বনি তুলো,
ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি..

দূর থেকে শুনব তোমার কন্ঠস্বর,
বুঝব তুমি আছ, তুমি আছ
ভালোবাসি,ভালোবাসি……..!

  তোমার চোখ এতো লাল কেন?
                            – নির্মলেন্দু গুণ

আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে , আমি চাই
কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক,
শুধু ঘরের ভেতর থেকে দরোজা খুলে দেবার জন্য ।
বাইরে থেকে দরোজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত ।

আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ আমাকে খেতে দিক । আমি হাতপাখা নিয়ে
কাউকে আমার পাশে বসে থাকতে বলছি না,
আমি জানি, এই ইলেকট্রিকের যুগ
নারীকে মুক্তি দিয়েছে স্বামী -সেবার দায় থেকে ।
আমি চাই কেউ একজন জিজ্ঞেস করুক :
আমার জল লাগবে কি না, নুন লাগবে কি না,
পাটশাক ভাজার সঙ্গে আরও একটা
তেলে ভাজা শুকনো মরিচ লাগবে কি না ।
এঁটো বাসন, গেঞ্জি-রুমাল আমি নিজেই ধুতে পারি ।

আমি বলছি না ভলোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন ভিতর থেকে আমার ঘরের দরোজা
খুলে দিক । কেউ আমাকে কিছু খেতে বলুক ।
কাম-বাসনার সঙ্গী না হোক, কেউ অন্তত আমাকে
জিজ্ঞেস করুক : ‘তোমার চোখ এতো লাল কেন ?’


    আমি খুব অল্প কিছু চাই
                       – হুমায়ুন আহমেদ

আমাকে ভালবাসতে হবে না,
ভালবাসি বলতে হবে না.
মাঝে মাঝে গভীর আবেগ
নিয়ে আমার ঠোঁট
দুটো ছুয়ে দিতে হবে না.
কিংবা আমার জন্য রাত
জাগা পাখিও
হতে হবে না.
অন্য সবার মত আমার
সাথে রুটিন মেনে দেখা
করতে হবে না. কিংবা বিকেল বেলায় ফুচকাও
খেতে হবে না. এত
অসীম সংখ্যক “না”এর ভিড়ে
শুধু মাত্র একটা কাজ
করতে হবে আমি যখন
প্রতিদিন এক বার “ভালবাসি” বলব
তুমি প্রতিবার
একটা দীর্ঘশ্বাস
ফেলে একটু
খানি আদর মাখা
গলায় বলবে “পাগলি”

           একবার তুমি 
             –  শক্তি চট্টোপাধ্যায়

একবার তুমি ভালোবাসতে চেষ্টা কর–
দেখবে, নদির ভিতরে, মাছের বুক থেকে পাথর ঝরে পড়ছে
পাথর পাথর পাথর আর নদী-সমুদ্রের জল
নীল পাথর লাল হচ্ছে, লাল পাথর নীল
একবার তুমি ভাল বাসতে চেষ্টা কর ।

বুকের ভেতরে কিছু পাথর থাকা ভাল–ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
সমস্ত পায়ে-হাঁটা পথই যখন পিচ্ছিল, তখন ওই পাথরের পাল একের পর এক বিছিয়ে
যেন কবিতার নগ্ন ব্যবহার, যেন ঢেউ, যেন কুমোরটুলির সলমা-চুমকি-জরি-মাখা প্রতিমা
বহুদূর হেমন্তের পাঁশুটেনক্ষত্রের দরোজা পর্যন্ত দেখে আসতে পারি ।

বুকের ভেতরে কিছু পাথর থাকা ভাল
চিঠি-পত্রের বাক্স বলতে তো কিছু নেই–পাথরের ফাঁক-ফোকরে রেখে এলেই কাজ হাসিল–
অনেক সময় তো ঘর গড়তেও মন চায় ।

মাছের বুকের পাথর ক্রমেই আমাদের বুকে এসে জায়গা করে নিচ্ছে
আমাদের সবই দরকার । আমরা ঘরবাড়ি গড়বো–সভ্যতার একটা স্থায়ী স্তম্ভ তুলে ধরবো ।

রূপোলি মাছ পাথর ঝরাতে-ঝরাতে চলে গেলে
একবার তুমি ভালবাসতে চেষ্টা করো ।

              যদি বাসোই 
                      – তসলিমা নাসরিন

তুমি যদি ভালোই বাসো আমাকে, ভালোই যদি বাসো,
তবে বলছো না কেন যে ভালো বাসো! কেন সব্বাইকে জানিয়ে দিচ্ছ না যে ভালোবাসো!
আমার কানের কাছেই যত তোমার দুঃসাহস!

যদি ভালোবাসো, ওই জুঁইফুলটি কেন জানে না যে ভালোবাসো!
ফুলটির দিকে এত যে চেয়ে রইলাম, আমাকে একবারও তো বললো না যে ভালোবাসো!
এ কীরকম ভালোবাসা গো! কেবল আমার সামনেই নাচো!
এরকম তো দুয়োর বন্ধ করে চুপি চুপি তুমি যে কারও সামনেই নাচতে পারো।
আমি আর বিশ্বাস করছি না, যতই বলো।
আগে আমাকে পাখিরা বলুক, গাছেরা গাছের পাতারা ফুলেরা বলুক,
আকাশ বলুক, মেঘ বৃষ্টি বলুক, রোদ বলুক চাঁদের আলো বলুক, নক্ষত্ররা বলুক,
পাড়া পড়শি বলুক, হাট বাজারের লোক বলুক, পুকুরঘাট বলুক, পুকুরের জল বলুক যে
তুমি ভালোবাসো আমাকে!
শুনতে শুনতে যখন আর তিষ্ঠোতে না পারবো তখন তোমাকে ওই চৌরাস্তায় তুলে একশ
লোককে দেখিয়ে চুমু খাবো, যা হয় হবে।

ভালোবাসা কি গোপন করার জিনিস! দেখিয়ে দেখিয়েই তো
শুনিয়ে শুনিয়েই তো ভালোবাসতে হয়।
ভালোবাসা নিয়ে আমরা জাঁকালো উৎসব করবো, ধেই ধেই নাচবো, নাচাবো,
সুখবর বুঝি আমরা চারদিকে ঢোল বাজিয়ে জানিয়ে দিই না!
জুইঁফুলটি যেদিন বলবে যে তুমি আমাকে ভালোবাসো, সেদিনই কিন্তু তোমাকে বলবো যে
তোমাকেও বাসি, তার আগে একটুও নয় !


       আকাশলীনা 
             – জীবনানন্দ দাশ


সুরঞ্জনা, ঐখানে যেয়োনাকো তুমি,
বোলোনাকো কথা অই যুবকের সাথে;
ফিরে এসো সুরঞ্জনা:
নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে;

ফিরে এসো এই মাঠে, ঢেউয়ে;
ফিরে এসো হৃদয়ে আমার;
দূর থেকে দূরে – আরও দূরে
যুবকের সাথে তুমি যেয়োনাকো আর।

কী কথা তাহার সাথে? – তার সাথে!
আকাশের আড়ালে আকাশে
মৃত্তিকার মতো তুমি আজ:
তার প্রেম ঘাস হয়ে আসে।

সুরঞ্জনা,
তোমার হৃদয় আজ ঘাস :
বাতাসের ওপারে বাতাস –
আকাশের ওপারে আকাশ।


         তুমি 
    – রাজদ্বীপ দত্ত


যখন আঁধারেরা নামে,
তোমার প্রতিক্ষার শোকগাথায়-
তখন আমি অর্ধনিমগ্ন ।
গলা চিপা ঘুপচি আঁধারে
স্মৃতির জাবর কাটি ।
ওই জনাকীর্ণ নিস্তব্ধতায়
তুমি মনে রেখো আমায় ।
আলোময় ওই বিশাল গোলকধাধায় হয়তো হারাবো
কিন্তু তুমি মনে রেখো আমায় ।
আবার যখন নিভে যাবে আলো ;
যখন ওই অলস আলোটাকে-
বুভুক্ষের মতো গিলবে আঁধার
“রাতজাগা পাখি”,
তুমি ভুলে যেয়ো না আমায় ।
যেদিন তোমার মনের চাতক পাখিটা
মুক্ত হয়ে উড়বে,
ওই সাদা মেঘেদের দলে-
তুমি মনে রাখবে তো আমায়!
গুটিয়ে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত
শামুকের মতো
হয়তো খোলসবন্দি হবো শীঘ্রই!
সেদিন
তুমি ভুলে যাবে নাতো আমায়?


 ভালবাসার সময় তো নেই 
         – রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ


ভালবাসার সময় তো নেই
ব্যস্ত ভীষন কাজে,
হাত রেখো না বুকের গাড় ভাজে।

ঘামের জলে ভিজে সাবাড়
করাল রৌদ্দুরে,
কাছএ পাই না, হৃদয়- রোদ দূরে।

কাজের মাঝে দিন কেটে যায়
কাজের কোলাহল
তৃষ্নাকে ছোয় ঘড়ায় তোলা জল।

নদী আমার বয় না পাশে
স্রোতের দেখা নেই,
আটকে রাখে গেরস্থালির লেই।

তোমার দিকে ফিরবো কখন
বন্দী আমার চোখ
পাহারা দেয় খল সামাজিক নখ।


   তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা 
                          – শহীদ কাদরী


শুধু একটি বার বল ভালবাসি
তোমাকে আর কোনদিন ভালবাসতে হবে না।
মরুভূমির তপ্ত বালিতেও পা দিতে হবে না।
আমার জন্য তোমকে নিশি রাতে পা ভিজাতে হবে না।
আকাশ বাতাস শুনুক তোমার প্রতিধ্বনি।
সবাই জানুক কেউ আমাকে ভালবেসেছিল।
আমার হৃদয়ের ডাকে কেউ সাড়া দিয়েছিলো।
শুধু এতটুকুই আমি চাই, এর চেয়ে বেশি চাই না।
কাছে আস বা না আস, তাতে আমার কোন আপত্তি নেই।
হৃদয়কে না হয় একটি বার হলেও সান্তনা দিতে পারব
কেউতো অন্তত একটি বার হলেও প্রাণের ছোয়া দিয়েছিল।
কয়েক সেকেন্ড এর জন্য হলেও শুকিয়ে যাওয়া নদীতে
আবার ঝড়ের বেগে অশ্রুর বন্যা বয়েছিল।
শুধু এতটুকুই আমি চাই, এর চেয়ে বেশি চাই না।
এর জন্য তুমি কি চাও?
হয়তোবা আমি তোমাকে আকাশের চাঁদটি এনে দিতে পারবোনা
পূর্ব দিকে উঠা সূর্যটিকেও হাতে তুলে দিতে পারবোনা।
কিন্তু পারবো তোমার জন্য আমি রজনীর পর রজনী জেগে থাকতে
পারবো আজীবন তোমার জন্য অপেক্ষা করতে।
হয়তো আমার এই শুন্য হৃদয়ে এক সময় কেউ স্থান করে নিবে
কিন্তু তুমিতো আর আমার হলে না।
কি হবে ভরে এই শুন্য হৃদয় ?
আমি তো চাইনি অন্য কেউ এসে আমার হৃদয়ে গোলাপ ফুটাক
পোড়া মন আবার সতেজ হয়ে উঠুক।
আমি চেয়েছি শুধু তোমার মুখ থেকে একটি বার হলেও
প্রতিধ্বনি হয়ে বেজে উঠুক একটি শব্দ “ভালবাসি”
শুধু এতটুকুই আমি চাই, এর চেয়ে বেশি চাই না।
                         
   
 
                       বউ 
                   - নির্মলেন্দু গুণ

কে কবে বলেছে হবে না? হবে,বউ থেকে হবে ।
একদিন আমিও বলেছিঃ ‘ওসবে হবে না ।’
বাজে কথা। আজ বলি, হবে, বউ থেকে হবে ।
বউ থেকে হয় মানুষের পুনর্জন্ম, মাটি,লোহা,
সোনার কবিতা, —কী সে নয়?

গোলাপ, শেফালি, যুঁই, ভোরের আকাশে প্রজাপতি,
ভালোবাসা, ভাগ্য, ভাড়াবাড়ি ইতিপূর্বে এভাবে মিশেনি ।
ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল, দুইজন্ম এবার মিশেছে, দেখা যাক ।

হতচ্ছাড়া ব্যর্থ প্রেম, গাঁজা, মদ, নৈঃসঙ্গ আমার
ভালোবেসে হে তরুণ, তোমাকে দিলাম, তুমি নাও ।
যদি কোনদিন বড় কবি হও, আমার সাফল্য
কতদূর একদিন তুমি তা বুঝিবে ।

আমি কতো ভালোবাসা দু’পায়ে মাড়িয়ে অবশেষে,
কল্পনার মেঘলোক ছেড়ে পৌঁছেছি বাস্তব মেঘে ।
আজ রাত বৃষ্টি হবে মানুষের চিরকাম্য দাবির ভিতরে ।

তার শয্যাপাশে আমার হয়েছে স্থান, মুখোমুখি,
অনায়াসে আমি তা বলি না, বলে যারা জানে দূর থেকে ।
আমি কাছে থেকে জানি, বিনিময়ে আমাকে হয়েছে দিতে
জীবনের নানা মূল্যে কেনা বিশ্বখানি, তার হাতে তুলে ।
অনায়াসে আমিও পারিনি । ক্রমে ক্রমে, বিভিন্ন কিস্তিতে
আমি তা দিয়েছি, ফুলে ফুলে ভালোবেসে যেভাবে প্রেমিক ।

প্রথমে আত্মার দ্যুতি, তারপর তাকে ঘিরে মুগ্ধ আনাগোনা ।
স্বর্গের সাজানো বাগানে পদস্পর্শে জ্বলে গেছি দূরে, তারপর
পেয়েছি বিশ্রাম । আজ রাত সম্পর্কের ভিতরে এসেছি ।

সবাই মিলবে এসে মৌন-মিহি শিল্পে অতঃপর,
তোমার প্রদত্ত দানে পূর্ণ হবে পৃথিবী আমার ।

             বনলতা সেন 
               – জীবনানন্দ দাশ


হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন।

চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের ’পর
হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে , ‘এতোদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।

সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে — সব নদী- ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।


      যদি ভালবাসা পাই 
                  – রফিক আজাদ


যদি ভালবাসা পাই আবার শুধরে নেব
জীবনের ভুলগুলি
যদি ভালবাসা পাই ব্যাপক দীর্ঘপথে
তুলে নেব ঝোলাঝুলি
যদি ভালবাসা পাই শীতের রাতের শেষে
মখমল দিন পাব
যদি ভালবাসা পাই পাহাড় ডিঙ্গাবো
আর সমুদ্র সাঁতরাবো
যদি ভালবাসা পাই আমার আকাশ হবে
দ্রুত শরতের নীল
যদি ভালবাসা পাই জীবনে আমিও পাব
মধ্য অন্তমিল।
প্রেমের কবিতা: সেরা ৩০টি ভালোবাসার কবিতা || বাংলা সেরা প্রেমের কবিতা সমগ্র || Best Romantic Bangla Premer Kobita


Saturday, March 16, 2019

সকল প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর মনে রাখার বিশেষ কৌশল [ পঞ্চম খন্ড ]

সকল প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর মনে রাখার বিশেষ কৌশল [ পঞ্চম খন্ড ],,,,,,,,

টেকনিক-৯১

#বঙ্কিমচন্দ্র_চট্টোপাধ্যায়ের
১৪টি উপন্যাস একটিমাত্র লাইনে সীমাবদ্ধ।
,
""""""[রাসীআন কবিরাই কদম দেবীর চন্দ্রযুগ]"""""""
,
১। রা - রাজসিংহ : ঐতিহাসিক উপন্যাস,
২। সী - সীতারাম : সর্বশেষ উপন্যাস,
৩। আন - আনন্দমঠ : ঐতিহাসিক উপন্যাস,এতে দেশ প্রেম ফুটে উঠেছে।,
৪। ক - কপালাকুণ্ডলা : বাংলা সাহিত্যে প্রথম রোমান্টিক উপন্যাস।,
৫। বি - বিষবৃক্ষ : সামাজিক উপন্যাস।,
৬। রা - রাঁধারানী,
৭। ই - ইন্দিরা
৮। ক - কৃষ্ণকান্তের উইল : সর্বশ্রেষ্ঠ সামাজিক উপন্যাস হিসেবে বিবেচিত।
৯। দ - দুর্গেশনন্দিনী (১৮৬৫) প্রথম বাংলা উপন্যাস।
১০। ম - মৃণালিনী : এটি ত্রয়োদশ শতাব্দীর বাংলাদেশ ও তুর্কি আক্রমণের ঐতিহাসিক পটভূমিতে রচিত।
১১। দেবী - দেবী চৌধুরানী।
১২। র - রজনী : বাংলা ভাষায় প্রথম মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ মূলক উপন্যাস (সামাজিক)।
১৩। চন্দ্র - চন্দ্রশেখর।
১৪। যুগ - যুগালাঙ্গুরীয়।
********

কবি নজরুলের নিষিদ্ধ ৬ টি গ্রন্থ
#টেকনিক::৯২

BAP J VC
#B= বিষের বাঁশী
#A= অগ্নিবীণা
#P= প্রলয়শিখা
#J= যুগবাণী
#V= ভাঙ্গার গান
#C= চন্দ্রবিন্দু
Note:
অগ্নিবীণা কাব্যটি কখনও নিষিদ্ধ
হয়নি। বিষের বাঁশি, ভাঙার গান, প্রলয়
শিখা, চন্দ্রবিন্দু ও যুগবাণী এ পাঁচটি
কাব্যগ্রন্হ নিষিদ্ধহয়।
********
সুকান্ত_ভট্রাচার্য এর কাব্যগ্রন্থ মনে রাখার টেকনিক:::
#টেকনিক: ৯৩

হরতালের পূর্বাভাস যখন আমরা পাই ছাড়পত্রের অভিযানে ঘুম নেয় সুকান্তের চোখে
#হরতাল
#পূর্বাভাস
#ছাড়পত্র
#অভিযান
#ঘুম নেয়
**********
টেকনিকে মধ্যে আফ্রিকার দেশ সমুহঃ
#টেকনিক::::৯৪
[টেকনিকে মধ্যে আফ্রিকার দেশ সমুহঃ

#টেকনিক::::[ চাদ মধ্যে গগনে কেমনে থাকি একা সাথি বিহনে]
#চাদ→চাদ
#মধ্যে→মধ্যে আফ্রিকার প্রজাতন্ত্র
#গগনে=গ-গনতান্ত্রিক কংগো প্রজাতন্ত্র/গ-গ্যাবন/নে-নিরক্ষীয় গিনি
#কেমনে→ক্যামেরুন
#একা→এ-এংগোলা/কা-কংগো
#সাথি-সাওটোপ এন্ড প্রিন্সিপে চাদ মধ্যে গগনে কেমনে থাকি একা সাথি বিহনে]
#চাদ→চাদ
#মধ্যে→মধ্যে আফ্রিকার প্রজাতন্ত্র
#গগনে=গ-গনতান্ত্রিক কংগো প্রজাতন্ত্র/গ-গ্যাবন/নে-নিরক্ষীয় গিনি
#কেমনে→ক্যামেরুন
#একা→এ-এংগোলা/কা-কংগো
#সাথি-সাওটোপ এন্ড প্রিন্সিপে
*******
#টেকনিক:::::৯৫

গণ জাতীয় মহিলা :শাহ মো.শিরীন
#ব্যাখা::::
দেশের ১ম মহিলা স্পিকার ড.শিরীন শারমিন চৌধুরী
জাতীয় সংসদের ১ম স্পিকার:মোহাম্মদ উল্ল্যাহ
গণপরিষদেরর ১ম স্পিকার::: শাহ আব্দুল হামিদ
*******
উত্তর আফ্রিকার দেশগুলো মনে রাখার
কৌশল
#টেকনিক:- ৯৬

MoSST WEAL come
দেশ ( রাজধানী )
Mo=মরক্কো (রাবাত)
S=সুদান (খার্তুম)
S= দক্ষিণ সুদান/South Sudan (জুবা)
T=তিউনিশিয়া (তিউনিশ)
W= পশ্চিম সাহারা/West Sahara (আল আইয়ুন)
E= মিশর/Egypt (কায়রো)
L= আলজেরিয়া (আলজিয়ার্স)।
*******
টেকনিকে মনে রাখুন #পর্বতমালা-
*------------------**----------------*
#টেকনিক:::৯৭

এশিয়ার হিমালয় আফ্রিকার ক্যামেরায় ইউরোপের কাছে অল্প মনে হওয়ায় উত্তর আমেরিকা আলাস্কায় বসে দক্ষিনে আন্দাজ করে বলল অষ্ট্রেলিয়াই গ্রেট।
(এশিয়ার-হিমালয়, আফ্রিকার- ক্যামেরুন, ইউরোপের- আল্পস, উত্তর আমেরিকা-আলাস্কা, দক্ষিন আমেরিকা-আন্দিজ, অষ্ট্রেলিয়া-গ্রেট ডিভাইডিং রেঞ্জ)
*******
নদী সম্পকীত
টেকনিক-৯৮
-------------------------------------
**পদ্মা নদীর পুর্বনাম:- কীর্তীনাশা।
**যমুনা নদীর পুর্বনাম:- জোনাই নদী।
**বুড়িগঙ্গা নদীর পুর্বনাম:- দোলাই নদী।
** ব্রক্ষ্মপুত্র নদীর পুর্বনাম:- লৌহিত্য।
#টেকনিক (১)ঃ
#পদ্মার #কীর্তি দেখে #যমুনাবিবির কন্যা #জোনাকিকে #বুড়ি হওয়ার পুর্বেই
#ধোলাইখালের #ব্রাহ্মণ পুত্র #লোহিতের নিকট সপে দিল।
#টেকনিক(০২):- তিস্তা সিকিম থেকে #লাল,
#নীল,
#রং
হয়ে বাংলাদেশে এসেছে।
অথাৎ, তিস্তা নদী সিকিমের পার্বত অঞ্চল হয়ে #লালমনিরহাট,
#নীলফামারী,
#রংপুর অঞ্চল হয়ে বাংলাদেশে এসেছে।
#টেকনিক(০৩):- ব্রক্ষ্মপুত্র হিমালয়ে জন্ম নিয়ে #কুড়ি বছর
বয়সে বাংলাদেশে এসেছে।
অথাৎ, ব্রক্ষ্মপুত্র নদ হিমালয় থেকে ঊৎপত্তি হয়ে #কুঁড়িগ্রাম
জেলা দিয়ে বাংলাদেশে এসেছে।
*****
*ইলেকট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রন
এর আবিষ্কারকের
নামগুলা।

#টেকনিক:- ৯৯

ইট পরে নিচে।
ই = ইলেকট্রন,
ট = টমসন(থমসন)
প = প্রোটন,
রে = রাদারফোর্ড
নি = নিউট্রন,
চে = চ্যাডউইক
*********
যেসব দেশে লিখিত সংবিধান নেই।
#টেকনিক :১০০
ESPN
♦England,
♦Saudi Arabia,
♦Spain and
♦New Zealand


সকল প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর মনে রাখার বিশেষ কৌশল [ পঞ্চম খন্ড ]