Ad 3

Education makes a door to bright future

University admission and others information,International Scholarships, Postgraduate Scholarships, College Scholarship, Study Abroad Financial Aid, Scholarship Search Center and Exam resources for PEC, JSC, SSC, HSC, Degree and Masters Examinees in Bangladesh with take from update sports News, Live score, statistics, Government, Private, current Job Circular take from this site

Education is a way to success in life

University admission and others information,International Scholarships, Postgraduate Scholarships, College Scholarship, Study Abroad Financial Aid, Scholarship Search Center and Exam resources for PEC, JSC, SSC, HSC, Degree and Masters Examinees in Bangladesh with take from update sports News, Live score, statistics, Government, Private, current Job Circular take from this site

Education is a best friend goes lifelong

University admission and others information,International Scholarships, Postgraduate Scholarships, College Scholarship, Study Abroad Financial Aid, Scholarship Search Center and Exam resources for PEC, JSC, SSC, HSC, Degree and Masters Examinees in Bangladesh with take from update sports News, Live score, statistics, Government, Private, current Job Circular take from this site

Education makes a person a responsible citizen

University admission and others information,International Scholarships, Postgraduate Scholarships, College Scholarship, Study Abroad Financial Aid, Scholarship Search Center and Exam resources for PEC, JSC, SSC, HSC, Degree and Masters Examinees in Bangladesh with take from update sports News, Live score, statistics, Government, Private, current Job Circular take from this site

Education is a key to the door of all the dreams

University admission and others information,International Scholarships, Postgraduate Scholarships, College Scholarship, Study Abroad Financial Aid, Scholarship Search Center and Exam resources for PEC, JSC, SSC, HSC, Degree and Masters Examinees in Bangladesh with take from update sports News, Live score, statistics, Government, Private, current Job Circular take from this site

Showing posts with label একুশের চেতনা. Show all posts
Showing posts with label একুশের চেতনা. Show all posts

Friday, March 18, 2022

রচনা : একুশের চেতনা, একুশ আমার অহংকার,জাতীয় জীবনে একুশের চেতনা ও তাৎপর্য

 

রচনা : একুশের চেতনা

 

↬ একুশে ফেব্রুয়ারি ও একুশের চেতনা

↬ একুশ আমার অহংকার

↬ একুশে ফেব্রুয়ারির তাৎপর্য

↬ জাতীয় জীবনে একুশের চেতনা ও তাৎপর্য

↬ জাতী গঠনে একুশে ফেব্রুয়ারির গুরুত্ব

ভূমিকা : বাংলাদেশের মানুষের জাতীয় জীবনের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের একটি বড় অধ্যায় জুড়ে রয়েছে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। মায়ের মুখের ভাষার সতীত্ব রক্ষায় বাংলার নির্মম-মৃত্যু-ভয় নির্লিপ্ত দুর্জয় সন্তানেরা আপন বুকের রক্তে পীচ-ঢালা কালো রাস্তাকে রঞ্জিত করে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। এই ভাভা আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামের দুর্দমনীয় সংকল্পের গভীরে প্রোথিত শেকড় রস সঞ্চার করে, দেশকে তার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের দিকে নিয়ে গেছে। অমর একুশে তাই আমাদের জাতীয় জীবনে বেদনাবিজড়িত এক গৌরবগাথা। প্রতি বছর ভাষা আন্দোলনের বেদনা-বিধুর স্মৃতি ও সংগ্রামী চেতনার অমিয় ধারাকে বহন করে একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের দ্বারে ফিরে আসে। জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটাবার ক্ষেত্রে এর তাৎপর্য অপরিসীম। একুশের এই তাৎপর্যের প্রতি আলোকপাত করতে গিয়ে কবি শামসুর রহমান বলেছেন-

‘আবার ফুটেছে দ্যাখ কৃষ্ণচূড়া থরে থরে, শহরের পথে

কেবল নিবিড় হয়ে কখনও মিছিলে কখনও বা

একা হেঁটে যেতে মনে হয়, ফুল নয় ওরা

শহীদের ঝলকিত রক্তের বুদ্বুদ, স্মৃতিত-গল্পে ভরপুর

একুশের কৃষ্ণচূড়া আমাদের চেতনারই রঙ।’

২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালির জাতীয় জীবনে এক গৌরবময় ও ঐতিহাসিক দিন। একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আর শুধু আমাদের মাতৃভাষা দিবস নয়। প্রতি বছর ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ সারা বিশ্বে পালিত হবে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে।

একুশের ইতিহাস :

‘মাগো ওরা বলে,

সবার কথা কেড়ে নেবে

তোমার কোলে শুয়ে শুনতে দেবে না।

বলো মা, তাই কি হয়?

----- আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ।

ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল ১৯৪৮ সালে। অতঃপর ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে এসে এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নিয়েছিল। ১৯৪৮ সালের ২১শে মার্চ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা ও তদানিন্তন পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ ঢাকার রেসকোর্স (বর্তমানে সোহরাওয়াদী উদ্যান) ময়দানে এক জনসভায় ঘোষণা দেন : “Urdu only, and Urdu shall be the state language of Pakistan”. এর তিনদিন পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি একই কথা জোরের সাথে ঘোষণা করলে বিশ্ববিদ্যালয়-অঙ্গন তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। কিন্তু শত প্রতিবাদ সত্ত্বেও জিন্নাহ এতে কোনো কর্ণপাত করেন নি। ১৯৫০ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান এবং ১৯৫২ সালে পাকিস্তানের তদানিন্তন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন এই ঘোষণা দিলে ছাত্রসমাজ উত্তেজিত হয়ে ওঠে। এর প্রতিবাদে ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালিত হয়। সংগ্রাম পরিষদ সমগ্র পূর্ব বাংলায় ২১শে ফেব্রুয়ারিতে ‘রাষ্ট্রভাষা দিবস’ পালনের কর্মসূচি প্রদান করলে ছাত্র-জনতার মাঝে অভূতপূর্ব সাড়া জাগে। ২০শে ফেব্রুয়ারি মধ্যরাত থেকে সরকার ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু পূর্বসিদ্ধান্ত মোতাবেক একুশে ফেব্রুয়ারিতে ছাত্ররা ১৪৪ ধারার বিধি-নিষেধ ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। মিছিলে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা অংশ নেয় এবং কিছুক্ষণের মধ্যে তা উত্তাল জনসমুদ্রের রূপ ধারণ করে। মিছিলের ভয়াল রূপ দর্শন করে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিন আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করার নির্দেশ দেন। পুলিশের গুলিতে শহীদ হয় বরকত, সালাম, রফিক, জব্বার, সফিউরসহ নাম না জানা আরো অনেকে। এতে সারা বাংলায় প্রতিবাদের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। সমগ্র জাতি সম্মিলিতভাবে গর্জে ওঠে সিংহের মত। পরিশেষে, শাসকগোষ্ঠী ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকার করে নেয়।

একুশের চেতনায় স্বাধীনতার বীজমন্ত্র : একুশের আন্দোলন যদিও একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন ছিল কিন্তু তা কেবল সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকে নি। সে-আন্দোলনের তীব্রতা ক্রমশই ছড়িয়ে পড়ে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলেও। বাঙালির অধিকার আদায়ের প্রথম সফল সংগ্রাম হিসেবে পরবর্তী প্রতিটি আন্দোলনের ক্ষেত্রেই একুশের চেতনা বাঙালি জনমনে মাইল ফলক হিসেবে কাজ করেছে। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয় একুশের চেতনায় বাঙালি সাধারণের আত্মজাগরণ ঘটেছিল বলেই সম্ভব হয়েছিল। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনার পর থেকে বাংলার জনসাধারণ বুঝতে পেরেছিল মিষ্টি কথায় অধিকার আদায় হয় না। এর জন্য রক্ত ঝরাতে হয়। পরবর্তীকালে এ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েই ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণ অভ্যুত্থান, ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচন এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়লাভ বাংলার জনগণের পক্ষে সম্ভব হয়েছিল।

তাৎপর্যের উত্তরণ ও একুশের চেতনা :

“একুশ ভাষার প্রাণ

একুশ করেছে দান

একুশ মোদের পাথেয়

একুশকে করো নাকো হেয়।”

বাঙালি জাতির আত্মোপলব্ধির উত্তরণ ঘটে ঊনিশ’শ বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির সংগ্রামের মাধ্যমে।

বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও চিন্তাবিদ ডক্টর মুহাম্মদ এনামূল হকের মতে

“একুশে ফেব্রুয়ারি কোন বিশেষ দিন, ক্ষণ বা তিথি নয়, একটি জাতির জীবন্ত ইতিহাস। এ ইতিহাস অগ্নিগর্ভ। যেন সজীব ‘লাভা স্রাবক আগ্নেগিরি’, কখনও অন্তর্দাহে গর্জন করছে, আর কখনও চারিদিকে অগ্নি ছড়াচ্ছে। সত্যি এ ইতিহাস মৃত নয়, একেবারে জীবন্ত।”

বাড়ালি জাতীর চেতনার উপলব্ধির ক্রমবিকাশে এখানে এসে গাঢ়তায় রূপ নেয়। সমগ্র জাতি ভাবতে শেখে তার জাতীয় সত্তা এবং রাষ্ট্রীয় সত্তার কথা।

সাংস্কৃতিক বিকাশের চেতনা : আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনার বিকাশে একুশে ফেব্রুয়ারির গুরুত্ব অপরিমেয়। একুশ জাতীয় চেতনার মানসপটে নতুন সাংস্কৃতিক চেতনার জন্ম নেয়। সৃষ্টি হয় চেতনাপুষ্ট শিল্প-সাহিত্য। মুনীর চৌধুরী রচিত ‘কবর’ নাটকটি বাঙালি সংস্কৃতি-চেতনার স্বাক্ষরই বহন করে। একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম বার্ষিকীতে অর্থাৎ ১৯৫৩ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে রাজবন্দি মুনীর চৌধুরীর লেখা ‘কবর’ নাটকটি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রথম অভিনীত হয়েছিল রাজবন্দিদের উদ্যোগে। আবদুল গাফফার চৌধুরীর অনন্য গান :

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি?’

এই গান একুশেরই ফসল। একুশের প্রথম কবিতা মাহবুব-উল আলম চৌধুরীর ‘কাঁদতে আসি নি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’। কলকাতায় ‘বাবু কালচার’ কেন্দ্রিক সংস্কৃতিধারার বিপরীতে ঐতিহ্যসমৃদ্ধ বাঙালি জাতীয় সংস্কৃতিধারা বিকাশ লাভ করে একুশের সংগ্রামী চেতনারই মাধ্যমে। এভাবে একুশে উদ্‌যাপন উপলক্ষে প্রতিবছরই একাধিক সংকলন হচ্ছে, ফলে একুশ পরিণত হয়েছে আমাদের জাতীয় উৎসবে।

একুশের চেতনা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য : ১৯৫৩ সালে শহীদ দিবস উদ্‌যাপন করতে গিয়ে তখনকার প্রগতিশীল কর্মীরা কালো পতাকা উত্তোলন, নগ্নপায়ে প্রভাতফেরী ও সমবেত কণ্ঠে একুশের গান, শহীদদের কবর ও মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করেন। সেই থেকে এসব কর্মসূচি বাঙালির জাতীয় চেতনার নবজাগরণের প্রতীক হয়ে দাঁগিয়েছে। এখন এসব আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। এছাড়া ১৯৫৪ সালে বাংলা একাডেমীর প্রতিষ্ঠা এবং তারপর থেকে একুশ উপলক্ষে বাংলা একাডেমী প্রতি বছর অমর একুশের যেসব অনুষ্ঠানমালা এবং বইমেলার আয়োজন করে তার সবকটিই একুশের চেতনার ফল।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশের ক্ষেত্রে একুশের ভূমিকা অপরিসীম। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের শহীদদের রক্ত বৃথা যায় নি। আমরা মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি। সেই ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত এ সুদীর্ঘপথে লাখো লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে এদেশের মাটি। কিন্তু মহান ফেব্রুয়ারি এদেশের ইতিহাসে চিহ্নিত হয়েছে আপোষহীন সংগ্রাম ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে। একুশ হোক জগতের সকল অনৈক্য, সংঘাত ও অশান্তির বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ হাতিয়ার। হোক সমুদ্রপথের ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ অন্ধকার রাতের আশার প্রদীপ, দিক নির্দেশক আলোক বর্তিকা।


[ একই রচনা আরেকটি বই থেকে সংগ্রহ করে দেয়া হলো ]


ভূমিকা : কোনো কোনো মহৎ দিন কখনো কখনো জাতীয় জীবনে নিয়ে আসে যুগান্তরের সম্ভাবনা। আমাদের জাতীয় জীবনে একুশে ফেব্রুয়ারি তেমনি একটি দিন। বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার স্মৃতিচিহ্নিত এ দিনটি সংগ্রামের আগুনে জ্বলন্ত, রক্তাক্ত আত্মত্যাগের মহিমায় ভাস্বর। এ দিনটি ইতিহাসের একটি বিবর্ণ তারিখ নয়। তা এমন একটি দিন যা আমাদের জাতীয় ইতিহাসের প্রতিটি মুহূর্তে গতিময়, প্রাণবন্ত, তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত সংগ্রামের ভেতর দিয়ে জন্ম নিয়েছিল ঐ চেতনা। আমাদের জাতীয় জীবনে এ এক অবিনাশী চেতনা। 

ভাষা আন্দোলনের পটভূমি : জাতিগত, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশের সুদীর্ঘ পথপরিক্রমার এক পর্যায়ে পূর্ব বাংলার জনগণের অস্তিত্ব ও ভাগ্য যুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল কৃত্রিম ও সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র পাকিস্তানের সঙ্গে। তদানীন্তন পাকিস্তানে শতকরা ৫৬ জনের মুখের ভাষা বাংলা হলেও শতকরা ৭ ভাগ লোকের মুখের ভাষা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। ১৯৪৮ সালে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা বলে ঘোষণা করা হয়। প্রতিবাদে গর্জে ওঠে পূর্ব বাংলা। বাংলা ভাষার দাবিতে ধূমায়িত হতে থাকে পুঞ্জীভূত ঘোষণা করা হয়। প্রতিবাদে গর্জে ওঠে পূর্ব বাংলা। বাংলা ভাষার দাবিতে ধূমায়িত হতে থাকে পুঞ্জীভূত বিক্ষোভ। ১৯৪৯ থেকে ১৯৫১ পর্যন্ত জোরালো হয়ে ওঠে ভাষার দাবি। বাংলা ভাষার মর্যাদা আদায়ের দাবি পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক আন্দোলনের মূল ইস্যু হয়ে ওঠে। ১৯৫২ সালের শুরুতেই বাংলা ভাষা আন্দোলন প্রবল হয়ে ওঠে। ’৫২-র ২১ ফেব্রুয়ারি ‘রাষ্ট্রভাষা দিবস’ পালন ও সাধারণ ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত হয়। পাকিস্তান সরকার আন্দোলন দমন করার জন্যে ১৪৪ ধারা জারি করে জনসভা, মিছিল নিষিদ্ধ করে দেয়। ছাত্ররা সংগঠিতভাবে ১৪৪ ধারা ভাঙলে পুলিশ গুলি চালায়। শহীদ হন সালাম, রফিক, জব্বার, বরকতসহ নাম-না-জানা অনেকে। প্রতিবাদে ফেটে পড়ে সারা পূর্ব বাংলা। পরদিন সারারাত জেগে শহীদ স্মৃতি স্মরণে গড়া হয় শহীদ মিনার। পুলিশ তা ভেঙে ফেললে আবারও গড়ে ওঠে শহীদ মিনার। এই শহীদ মিনার একুশের শোক, সংগ্রাম ও শপথের প্রতীক। তা অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও জাতিচেতনামূলক আন্দোলনের চালিকাকেন্দ্র হয়ে আছে আমাদের জাতীয় জীবনে। 

একুশের চেতনায় স্বাধীনতার বীজমন্ত্র : একুশের চেতনা আমাদের জাতীয় জীবনের আত্মত্যাগের বীজমন্ত্র। ’৫২-র ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই পূর্ব বাংলার অধিকার-বঞ্চিত মানুষের প্রথম সংগঠিত সংগ্রামের বাহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। পরবর্তীকালে প্রতিটি গণ-আন্দোলনের প্রেরণাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে ঐ আন্দোলন। সেদিন বাঙালির আত্মচেতনতার যে উদ্বোধন ঘটেছিল তাই নানা আন্দোলন-সংগ্রামের ভেতর দিয়ে রূপ নিয়েছিল স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামে। একুশের চেতনা পরিণতি লাভ করেছিল স্বাধীনতার চেতনায়। 

একুশের তাৎপর্য : একুশের তাৎপর্য বহুমুখী। একুশের চেতনায় কেবল যে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা নয়, বাঙালির জাতীয় চেতনাকেও একুশ স্ফটিক-স্বচ্ছতা দিয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা আমাদের ওপর যে জাতিগত শোষণ ও নিপীড়ন চালায় তার বিরুদ্ধে জাতীয় চেতনায় সংগঠিত হতে একুশ আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছে। আমাদের সচেতন, সক্রিয় ও উদ্বুদ্ধ করেছে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক আন্দোলনে। 

একুশের চেতনা ও জাতিসত্তার স্বরূপ : আমাদের জাতিসত্তার স্বরূপ আবিষ্কারেও একুশের অবদান অসামান্য। আমরা জেনেছি আমরা বাঙালি। জেনেছি বাংলা ভাষা আমাদের অস্তিত্বের অঙ্গীকার। বাংলাদেশ আমাদের দেশ। একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েই আমরা বাষট্টি, ছেষট্টি, ঊনসত্তর ও একাত্তরে আমাদের আত্মপরিচয়, আমাদের ঠিকানা ও দেশমাতৃকার মুক্তির জন্যে লড়াই করেছি। একুশের পথ ধরেই এসেছে স্বাধীনতা। 

সাংস্কৃতিক বিকাশের চেতনা : আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনার বিকাশে একুশে ফেব্রুয়ারি যেন হাজার তারের এক বীণা। তাতে কত না সুর, কত না ঝংকার। একুশের এই বীণায় ঝংকৃত হয়েছে আমাদের ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি। একুশের ফসল আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর অনন্য গান : 

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি?’

এ গান আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনার বিকাশে উজ্জীবনী মন্ত্রের প্রেরণা। একুশের চেতনার পথ ধরে আমরা অর্জন করেছি আরো কত দেশাত্মবোধক গান। 

একুশের চেতনা ও সাহিত্য : একুশের চেতনা আমাদের সাহিত্য-অঙ্গনেও সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছে ফলিয়েছে অজস্র ফসল। একুশের প্রথম কবিতা মাহবুব উল আলম চৌধুরীর ‘কাঁদতে আসি নি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি।’ এর পর অফুরান সৃষ্টিতে ভরে গেছে আমাদের সাহিত্যের ডালি। একুশের আরেক অনবদ্য ফসল চিরভাস্বর হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত একুশের সংকলন- ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’। তারপর প্রতিবছর একুশ উদ্‌যাপন উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে অজস্র সংকলন। এভাবে একুশ পরিণত হয়েছে আমাদের জাতীয় উৎসবে। 

একুশের চেতনা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য : ১৯৫৩ সালে শহীদ দিবস উদ্‌যাপন করতে গিয়ে তখনকার প্রগতিশীল কর্মীরা কালো পতাকা উত্তোলন, নগ্নপদে প্রভাতফেরি, শহীদদের কবরে ও শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ, প্রভাতফেরিতে সমবেত কণ্ঠে একুশের গান পরিবেশন ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করেন। সেই থেকে এসব কর্মসূচি বাঙালির জাতীয় চেতনার নবজাগরণের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন এসব আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অঙ্গ। 

একুশের চেতনা ও বাংলাদেশের নাট্য-আন্দোলন : একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম বার্ষিকীতে অর্থাৎ ১৯৫৩ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে রাজবন্দি মুনীর চৌধূরীর লেখা বিখ্যাত ‘কবর’ নাটকটি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রথম অভিনীত হয়েছিল রাজবন্দিদের উদ্যোগে। এভাবে একুশের চেতনা বাংলাদেশের নাট্য-আন্দোলনে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার ধারাকে পরিব্যাপ্ত করেছিল। 

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় একুশের চেতনা : একুশের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষা স্বীকৃতি পেলেও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে তাদের চক্রান্ত অব্যাহত রাখে। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে বাংলা ভাষার বিকৃতি ঘটানোর জন্যে তারা নানা অপপ্রয়াস চালায়। তাদের চেষ্টা ছিল বাংলা ও উর্দু মিলে একটা ভাষা তৈরি করা, বাংলা বর্ণমালা তুলে দিয়ে রোমান হরফে বাংলা প্রবর্তন করা ইত্যাদি। পাকিস্তানি আমলে বাংলা সাহিত্যকে জোর করে পাকিস্তানিকরণের চেষ্টাও কম হয় নি। রবীন্দ্রনাথকে বর্জনের ষড়যন্ত্র, রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপনে বাধা প্রদান, রবীন্দ্র সংগীত নিষিদ্ধকরণের অপচেষ্টা ও নজরুলের রচনাকে আংশিক ও খণ্ডিতভাবে গ্রহণ ছিল তাদের হীন তৎপরতার অঙ্গ। এসব হীন তৎপরতার বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রেরণা জুগিয়েছে একুশ। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের হাজার বছরের ঐতিহ্য রক্ষার আন্দোলনে একুশ এক অনির্বাণ চেতনা। 

একুশের চেতনা ও বাংলা একাডেমি : একুশের সাংস্কৃতিক চেতনার আর একটি অসামান্য ফসল ১৯৫৪ সালে আমাদের জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির প্রতিষ্ঠা। বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চা, গবেষণা ও বিকাশে আমাদের জাতীয় জীবনে এ প্রতিষ্ঠানের অবদান অসামান্য। একুশ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি প্রতি বছর অমর একুশে অনুষ্ঠানমালাসহ যে বইমেলার আয়োজন করে তা আমাদের জাতীয় সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। 

উপসংহার : আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনার বিকাশে একুশ একাধারে ইতিহাস ও ঐতিহ্য, গৌরবগাথা ও প্রেরণা। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ একুশের চেতনারই মহান ফসল। তাই একুশের অবিনশ্বর চেতনা আজও আমাদের প্রেরণা দেয়। এই চেতনা অম্লান রেখে জাতির সর্বময় কল্যাণ ও অগ্রগতির পথে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। একুশের চেতনার পতাকা সমুন্নত রাখার জন্যে এগিয়ে আসতে হবে নতুন প্রজন্মকে।

রচনা : একুশের চেতনা