Ad 3

Education makes a door to bright future

University admission and others information,International Scholarships, Postgraduate Scholarships, College Scholarship, Study Abroad Financial Aid, Scholarship Search Center and Exam resources for PEC, JSC, SSC, HSC, Degree and Masters Examinees in Bangladesh with take from update sports News, Live score, statistics, Government, Private, current Job Circular take from this site

Education is a way to success in life

University admission and others information,International Scholarships, Postgraduate Scholarships, College Scholarship, Study Abroad Financial Aid, Scholarship Search Center and Exam resources for PEC, JSC, SSC, HSC, Degree and Masters Examinees in Bangladesh with take from update sports News, Live score, statistics, Government, Private, current Job Circular take from this site

Education is a best friend goes lifelong

University admission and others information,International Scholarships, Postgraduate Scholarships, College Scholarship, Study Abroad Financial Aid, Scholarship Search Center and Exam resources for PEC, JSC, SSC, HSC, Degree and Masters Examinees in Bangladesh with take from update sports News, Live score, statistics, Government, Private, current Job Circular take from this site

Education makes a person a responsible citizen

University admission and others information,International Scholarships, Postgraduate Scholarships, College Scholarship, Study Abroad Financial Aid, Scholarship Search Center and Exam resources for PEC, JSC, SSC, HSC, Degree and Masters Examinees in Bangladesh with take from update sports News, Live score, statistics, Government, Private, current Job Circular take from this site

Education is a key to the door of all the dreams

University admission and others information,International Scholarships, Postgraduate Scholarships, College Scholarship, Study Abroad Financial Aid, Scholarship Search Center and Exam resources for PEC, JSC, SSC, HSC, Degree and Masters Examinees in Bangladesh with take from update sports News, Live score, statistics, Government, Private, current Job Circular take from this site

Showing posts with label Memorable. Show all posts
Showing posts with label Memorable. Show all posts

Friday, April 16, 2021

পুরোনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন: আমার দুরন্ত শৈশব ও কৈশোরের উচ্ছলতা

ছোটবেলার স্মৃতি আমায় করে নস্টালজিক!  ব্যস্ত নাগরিক জীবনে বেড়ে ওঠা নবীন প্রজন্মকে দেশের মাটি-মানুষ-সংস্কৃতিকে চেনানো বেশ কঠিনই বটে। আমরা কত দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আজ এখানে এসে দাঁড়িয়েছি। ছোটবেলা যারা গ্রামে কাটাননি তাঁদের পক্ষে সেই পথ জানা মোটেই সহজ নয়। ইট-কংক্রিটের শহরের পরিবেশে ছোটরা সবুজ-শ্যামল প্রকৃতির মাঝে মুক্ত বিহঙ্গের মত ছুটতে পারে না। উদার আকাশের নিচে নির্মল বাতাসে স্বাধীনতার স্বাদ পায় না। আমাকে এখনো ছোটবেলার স্মৃতি-নস্টালজিয়া ঘিরে ধরে৷ ‘নস্টালজিয়া’ এর বাংলা প্রতিশব্দ স্মৃতিবিধুরতা। গ্রিক শব্দ নসটস (বাড়ি ফেরা) ও আলজিয়া (আশা বা প্রত্যাশা) নিয়ে নস্টালজিয়া শব্দের উৎপত্তি। নস্টালজিয়া বলতে সুখের স্মৃতি রোমন্থন করা, স্মৃতি মনে করে অতীত সময়ে ফিরে যেতে চাওয়া, আনন্দ-উদাস-ফিরে পাওয়ার মিশ্র অনুভূতি তৈরি। পুরনো বন্ধু, পরিবারিক স্মৃতি, ফেলে আসা গান, ছবি যেকোনো কিছুর স্মৃতিই মানুষকে নস্টালজিক করে তুলতে পারে।

পুরোনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন: আমার দুরন্ত শৈশব ও কৈশোরের উচ্ছলতা

পুরোনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন: আমার দুরন্ত শৈশব ও কৈশোরের উচ্ছলতা

পুরোনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন: আমার দুরন্ত শৈশব ও কৈশোরের উচ্ছলতা


ঘুড়ি উড়ানো

সুতা টেনে আকাশে  ঘুড়ি উড়ানোর সেই শৈশব ছিল খুবই আনন্দের।  ঘুড়ি উড়ানো আসলেই একটি মজার এক খেলা। বিনোদনের উপকরণ হিসেবে যা ছিল তুলনাহীন। কাগজের সাথে চিকন কঞ্চি লাগিয়ে তৈরি ঘুড়ি  উড়িয়েছি কত! বন্ধু সাত্তার রঙিন কাগজব্যবহার করে বিভিন্ন নকশার চমৎকার ঘুড়ি তৈরি করতো। ঘুড়িকে যথাযথ আকার ও ওজনের তৈরি করতে ওর পারদর্শীতা ছিল। সেলিম নানার সাথে ঘুড়ি (চং) উড়ানো দারুণ আনন্দের ছিল। দেখতে রংচঙা বা খুব সুন্দর আকৃতি না হলেও ঠিকভাবে সশব্দে উড়ার সক্ষমতা ছিল।

প্লাস্টিকের বস্তা থেকে তোলা পাতলা সুতা কিংবা বেত ও বাঁশের পাতলা চ্যাটা একটি ধনুকের মতো ছড়ের সঙ্গে বিশেষভাবে বেঁধে ঘুড়িতে জুড়ে দেয়ার কারণে উড়ন্ত ঘুড়ি থেকে সুরেলা শব্দ শোনা যেতো; যা এখনো আমার কানে বাজে! সেই ঘুড়ি ওড়ানো বিকালগুলো আজ হারিয়ে গেছে! কবি সুফিয়া কামাল ‘আজিকার শিশু’ কবিতায় লিখেছিলেন,‘আমাদের যুগে আমরা যখন আকাশের তলে উড়িয়েছি শুধু ঘুড়ি, তোমরা এখন কলের লাঙল চালাও গগন জুড়ি’। কবিতার  লাইন দুটি মনে করিয়ে দেয়, শৈশবে ঘুড়ি উড়ানোর সেই আনন্দময় স্মৃতির কথা।

এসব ঘুড়ি  তৈরিতে বাঁশের কাঠি বা শক্ত অথচ নমনীয় কাঠও  ফ্রেম  ব্যবহার হতো। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল সুতা কিংবা পাতলা দড়ি।  লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, বেগুনি কত রঙের ঘুড়িতে আকাশ ছেয়ে যাওয়া দেখলে মনে হতো, নানা রঙের মেলা বসেছে আকাশজুড়ে। বাংলাদেশে বিভিন্ন রকমের বিভিন্ন নামের ঘুড়ি  রয়েছে: চারকোণা আকৃতির বাংলা ঘুড়ি, ঘুড্ডি, ড্রাগন, বক্স, মাছরাঙা, ঈগল ঘুড়ি, ডলফিন, অক্টোপাস, সাপ ঘুড়ি, ব্যাঙ, মৌচাক, কামরাঙা, আগুন পাখি, প্যাঁচা, ফিনিক্স, জেমিনি, চরকি লেজ, পাল তোলা জাহাজ, পতাকা ঘুড়ি, ঢাউশ ঘুড়ি, চোঙা ঘুড়ি ইত্যাদি।   সুতাবিহীন ঘুড়ি হল ফানুস, বেলুন, হাউই ইত্যাদি। দুল ঘুড়ি, দরজা ঘুড়ি, ফেচ্ছা ঘুড়ি, চড়কি ঘুড়ি,  বিমান ঘুড়ি, হেলিকপ্টার ঘুড়ি, সাইকেল ঘুড়ি, ছাতা ঘুড়ি,  স্টার ঘুড়ি, স্টার ডোল ঘুড়ি, জামাই ঘুড়ি, বিল্ডিং ঘুড়ি, ডাকঘুড়ি, সাপঘুড়ি, মাছঘুড়ি, বাঙ্ঘুড়ি, মানুষঘুড়ি ও তারাঘুড়িও বিচিত্র নাম। মদনা, আউক্কা, পতেঙ্গা, সাপা, গোয়া ঘুড়িগুলোর নামও ছিল অদ্ভুত।

প্রায় ২ হাজার ৮০০ বছর আগে চীনে ঘুড়ি উড়ানো শুরু হয়। ইউরোপে ঘুড়ি খেলাটির প্রচলন ঘটে প্রায় ১,৬০০ বছর পূর্বে। আর এদেশে এমন একজন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল যিনি একবারের জন্যও নাটাই আর ঘুড়ি হাতে নেন নি। প্রথমে পাতা দিয়ে বানিয়ে ঘুড়ি উড়ানো হত। এরপর ঘুড়ি গাছের আগায় বেঁধে উড়িয়ে দেয়া হতো। আসে নাটাইয়ের দিন। পরে দিনে দিনে সেই ঘুড়ি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের সর্বত্র।

কলাগাছের ভেলা

চার-পাঁচটি বা তারও বেশি সংখ্যক কলাগাছ একত্রে বেঁধে কলাগাছের ভেলা তৈরি করা হতো। কলাগাছের কান্ড দিয়ে সমতল ভাসমান এই  ভেলার কাঠামো ছিল নৌকার সবচেয়ে সরল রূপ, একে ভাসিয়ে রাখার জন্য গলুই ছিল না । কাঠ বা বাঁশের মাধ্যমে শক্ত করে আটকায়ে ভেসে থাকতে সক্ষম করে তোলা হতো । হানারচালা থেকে ভালিকাচালা কিংবা ভালিকাচালা থেকে হানারচালায়  পারাপারে এই ভেলা ব্যবহার করা হতো। কলাগাছের ভেলা বাঙালি জাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অভিচ্ছেদ্য অংশ।  আমাদের শেকড় প্রোথিত গ্রামীণ জীবনে  একসময় কলাগাছ নানাভাবে নানা কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। কম খরচে তৈরি করা যায় বলে একে গরিবের জাহাজও বলা হতো।

প্রাচীন বাহন কলাগাছের ভেলা জলযান হিসেবে ব্যবহার এ প্রজন্মের অনেকের কাছেই অভিনব । তবে আমরা যারা গ্রামে বড় হয়েছি  বর্ষার সময় এপার-ওপারে, এখানে-ওখানে যাওয়া আসা করায় কলাগাছের ভেলায় ভেসে বেড়ানো স্মৃতিতে কমবেশি গেঁথে আছে। নতুন জলরাশির বুকে কলাগাছের ভেলায় চড়ে একটু ঘুরতে পারাতেই ছিল বর্ষার সুখ! পানিতে ভাসতে পারার মজা! পানি ছুঁই ছুঁই করেও পানির ওপর দিয়ে পাড়ি দিয়েও না ভেজার আনন্দ! সহজে ডুবে যাওয়ারও আশংকা না থাকায় নির্ভয় যাত্রা!  গ্রামাঞ্চলে বেড়ানোর ক্ষেত্রে এক ধরনের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।  যা টেনে নিয়ে যায় দূর অতীতে মধুর স্মৃতি জাগানিয়া দূরন্তপনার দিনগুলোতে।

কলাগাছের গেইট

গ্রামে বিয়ে অনুষ্ঠান উপলক্ষে কলাগাছের গেইট তৈরি করা হতো। বিয়ে বাড়িতে পরম যত্নে কলাগাছ, বাঁশ ও রঙ্গীন কাগজ দিয়ে চমৎকার গেইট সাজানোর দৃশ্য চোখে পড়তো। অসাধারণ আগ্রহ ও কৌশলে রঙ্গীন কাগজ কেটে চমৎকার ঝালট ও বিভিন্ন প্রকার ফুল তৈরি করা হতো। স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিশাল এক বাঁশের মাথার সাথে দড়ি বাঁধা হতো। দড়ির সাথে থাকতো রঙ্গীন কাগজের নিশান।

স্কুলের গেটে স্কুলের সামনের রাস্তায় শোভা পেত রঙ-বেরঙের কাগজে সাজানো হতো আর কলাগাছ দিয়ে তৈরি হতো দৃষ্টিনন্দন গেইট। লম্বা বাঁশের মাথায় কিংবা রেন্ট্রি কড়ই গাছে মাইক টাঙ্গিয়ে; মাইক বাজিয়ে স্কুল-কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা কিংবা বিয়ে অনুষ্ঠান, গ্রামের বিভিন্ন সামাজিক ও অন্যান্য আচার অনুষ্ঠান হতো; তাতে সাজানো-গোছানোর কাজে কলাগাছের নানাবিধ ব্যবহার হতো। যা ছিল আবহমান বাংলার লোকায়েত হারানো ঐতিহ্যসমুহের অন্যতম।

খেয়া পারাপার

বর্ষাকালে ভালিকাচালা-কামালিয়া চালায় পারাপারের জন্য খেয়া নৌকা ব্যবহার করা হতো। নৌকা ঘাটে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যাত্রী পারাপার করতে অপেক্ষা করতো মাঝি। খেয়া পারাপার করে জীবিকা নির্বাহ করতো! কখনো কখনো খেয়া পারাপার ঘাটে যাত্রীদের ভিড়ও দেখা যেত। খেয়ানৌকায় নদী পার হতে হতে  কুশলাদি বিনিময় হতো ।  বিশেষ করে গোদারা  ঘাটে অপেক্ষমান মানুষকে গল্প-গুজব করতেও দেখা যেত, অন্তরঙ্গতা দেখা যেত। রাতের অন্ধকারে প্রলম্বিত হাঁকে খেয়ামাঝিকে ডাকতেও শুনা যেত ।

ওয়াজ মাহফিল

ইসলামিক ওয়াজ মাহফিলের খুব জনপ্রিয়তা ছিল। আমলওয়ালা আলেম- হক্কানি ওলামারা ওয়াজ-নসিহত করতেন। অনেক দূরে দূরে ওয়াজ-নসিহত শুনতে যেতাম।  কারো কারো আলোচনা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতাম। তাদের ওয়াজে দরদ ছিল, মোলায়েম সুর ছিল, মন নরম হয়ে যাওয়ার মতো দরদ ভরা সুরের বর্ণনা ছিল।  যা শ্রোতাদের কানে নয় হৃদয়ে স্থান করে নিতো। বহু মানুষ বদলে যেত, আচার-আচরণ শুদ্ধ হতো, সমাজ সংস্কারে ভূমিকা রাখতো, দীন প্রচারের  মহতী সংস্কৃতি ছিল। মসজিদ, মাদরাসা কিংবা দ্বীনদরদী মুসলিমদের যৌথ বা ব্যক্তিগত উদ্যোগেও ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হতো। বয়ান ছিল- ধর্মীয় আদর্শের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ,  কোরআন-হাদিসের আলোতে উজ্জল , রাসূলের (স.) সিরাত এবং  সাহাবী-সালফে সালেহীনেরদের জীবনী নির্ভর।  শীতকাল জুড়ে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন হতো। 

গলার সুর বা গলার শক্তির উপর নির্ভরকারী এখনকার ওয়াজ ব্যবসায়ীদের ওয়াজ সংস্কৃতির মতো ছিল না ঐতিহ্যবাহী ওয়াজ সংস্কৃতি । ছিল না চিল্লাপাল্লা, হাসাহাসি, ব্যাঙ্গ-বিদ্রূপ, অন্যের দোষ ধরা, গিবত-পরনিন্দা-পরচর্চা, কৌতুক, গলার রগ ফুলিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি-হুমকি-ধামকি, চোখ রাঙ্গানো, আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গি, সিনেমা বায়োসকোপের গান, ঘুরেফিরে একই কথা বারবার  বলা, বিভ্রান্তিকর-অসত্য-ভুল-বানোয়াট তথ্য, অশুদ্ধ-অশালীন ভাষা,ব্যক্তিগত গল্প, পারিবারিক অদরকারী কেচ্ছা-কাহিনী, পরস্পরকে আক্রমণ করা, পরস্পর বিরোধী মনগড়া ফতোয়া দেয়া, ধর্মপ্রাণ মানুষের পকেট লুট করা  এবং অশ্লীলতা । ওয়াজ ও আওয়াজকে এক করে ফেলা হচ্ছে, আওয়াজের নিচে ওয়াজ চিরেচেপ্টা হচ্ছে, চলছে যেমন খুশি সাজো স্টাইলে, অভিনয়ও চলছে সমানতালে, বক্তা ও কমেডিয়ান প্রতিশব্দ হয়ে যাচ্ছে, প্যান্ডেল টাঙ্গিয়ে-স্টেজ সাজিয়ে আয়োজিত ওয়াজের মজলিস হয়ে যাচ্ছে গানের আসরের মতো। ওয়াজে কোকিল কণ্ঠে, টেনে টেনে বয়ান বলা এবং গানের স্বরে অপ্রাসঙ্গিক শে’র কবিতাও গাওয়া হচ্ছে। এরা ওয়াজ মাহফিলের মৌলিকত্ব ধ্বংস করছে, মাত্রাতিরিক্ত খরচ করায় অপচয় হচ্ছে।

অনেকে ওয়াজ মাহফিলে বক্তব্য দিচ্ছেন অথচ নেই— কোরআন-সুন্নাহর পর্যাপ্ত জ্ঞান, আল্লাহর সন্তুষ্ট ও তার দ্বীন প্রচারের উদ্দেশ্য,  বয়ান অনুযায়ী নিজের আমল, শ্রোতাদের ওপর দয়ার্দ্র ও বিনম্র হয়ে কথা বলা,  ধৈর্যশীল ও সহনশীল হওয়া। পথ খরচ বা তার অমূল্য সময়ের জন্য দেয়া হাদিয়া স্বতঃস্ফূর্তভাবে এবং সন্তুষ্টিচিত্তে নেন না। চুক্তিভিত্তিক টাকা নিয়ে কিছু বক্তা ওয়াজ করেন, তাদের কথায় মানুষেরও হেদায়েত হয় না। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তাদের অনুসরণ করো যারা দ্বীনি বিষয়ে কোনো পারিশ্রমিক চায় না এবং তারা সুপথপ্রাপ্ত।’ (সূরা ইয়াসিন : ২১)। তাফসিরে মাআরেফুল কোরআনে মুফতি শফী (রহ.) লিখেছেন, ‘দুই শ্রেণীর বক্তার বক্তৃতায় মানুষের কোনো হেদায়েত হয় না। ১. এক শ্রেণী যারা মানুষকে আমলের কথা বলে, ভালো পথে চলার কথা বলে আর নিজেই এর ওপর আমল করে না। ২. আরেক শ্রেণী হলো যারা ওয়াজ করে মানুষের কাছে টাকা চায়।

আমি খুব ভালো বুঝি না কিভাবে কখনো বিদেশেই যাননি অথবা কয়েকটি ভাষায় বক্তৃতা করতে সক্ষম নন তিনিও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ওলামায়ে কেরামগণের একজন হয়ে যান। ভারতবর্ষে ওয়াজ মাহফিল মূলত মোঘল আমলে প্রচার ও প্রসার পায়। এর পূর্বে ইরানে বা তৎকালীন পারস্যে ওয়াজ মাহফিল বা ইসলামিক জলসা হতো। বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলকে কেন্দ্র করে মেয়েরা শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসার মতো ঘটনাও ঘটত।  দীর্ঘদিনের প্রচলনের ফলে এক সময় তা বাঙালি মুসলিম কালচারের অংশে পরিণত হয়। পূর্বে ওয়াজ মাহফিলগুলোতে বক্তা দূর থেকে এসে বক্তব্য দিলেও বিনিময় নিতেন না। বক্তব্য দেয়ার নামে জনমনে হুজুগ তৈরি, নিজেদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া, ধর্মকে রাজনীতিক স্বার্থে ব্যবহার করার বিষয় ছিল না। বিভিন্ন দরদামে বক্তাকে উচ্চমূল্যে ভাড়া করে নিয়ে আসার ব্যাপারও দেখা যেত না; বড়জোর হাদিয়া তোহফার আদান-প্রদান ছিল, তাও অনেকে নিতে চাইতেন না।

গ্রামীণ হাট

হাটবাজার ছিল গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণ। সোমবার কামালিয়া চালায় হাটুরে মানুষের আনাগোনা শুরু হতো ভোরের কুয়াশা দূর হওয়া আগেই। ছিল কর্মচাঞ্চল্য, বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত মানুষের প্রাণস্পন্দন, ছোট-বড় নানা বয়সী মানুষের জমায়েত, শুরু হতো নিলাম; হাঁকডাক, পণ্যের হাতবদল আর গুঞ্জন। পণ্য বেচাকেনার সরু অলিগলিতে ভিড়ের মাঝেই এক বিস্ময়কর মুখরতা। গ্রামীণ সংস্কৃতির অন্যতম ধারক-বাহক ছিল হাট; এর সঙ্গে গ্রামীণ জনপদের সংস্কৃতি, কৃষ্টি আচার কিংবা সভ্যতার বিকাশের যোগাযোগ খুঁজে পাওয়া যায়। হাট ছিল কেবলই সাপ্তাহিক এবং পণ্য বেচাকেনা ছাপিয়েও উৎসব, হয়ে উঠত স্থানীয়দের মিলনমেলা। গ্রামীণ উন্নয়ন বা আঞ্চলিক উন্নয়নের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল গ্রামীণ হাটের। হাটকে ঘিরে অনেকের জীবন-জীবিকা আবর্তিত হতো। সময়ের বিবর্তনে অনেক হাট হারিয়েছে জৌলুস ঐতিহ্য। পণ্যের হাতবদল ছাপিয়ে স্থানীয় আচার, ঐতিহ্য, সংকট আর সভ্যতারও নানা ছাপ দেখা মেলে সেখানে।

২০০০ সালে রাজধানী ঢাকায় চলে আসার আগ পর্যন্ত গ্রামীণ হাটে যাওয়া হতো। কামালিয়া চালা, তক্তারচালা, পাথরঘাটা, জসিমনগর, চাকদহ ও কাইতলা হাটে গিয়েছি। কামালিয়াচালা-পাথরঘাটা-তক্তারচালা হাটে সদায় কিনেছি। হাটে আশপাশের গ্রামের লোকজনও আসে, জমজমাট হয়ে ওঠে হাট।

দেশে এখনো বহু হাট বিশেষায়িত পণ্যকে উপস্থাপন করে। যেমন টাঙ্গাইলের করোটিয়ার শাড়ির হাট, শাহজাদপুরে কাপড়ের হাট; যশোরের ফুলের হাট, পিরোজপুরের নৌকার হাট, বরিশালের স্বরূপকাঠির ভাসমান বাজার ইত্যাদি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বাড়তি পরিচয় বহন করে চলছে কানসাট আমের হাট। বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা ও হিউয়েন সাংয়ের ভ্রমণ কাহিনীতেও টাঙ্গাইলের বস্ত্র বা তাঁত শিল্পের কথা উঠে এসেছে। দৈনন্দিন কৃষিপণ্য, ফলমূল নিয়ে চাষীরা তা বিক্রি করেন ভাসমান বাজারে। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে গ্রামীণ অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে ছোট মাঝারি কিংবা বড় হাটবাজারগুলো। কেননা গ্রামীণ হাটবাজারের হাত ধরেই উৎপাদনকারীর পণ্য পৌঁছায় ভোক্তার কাছে, যা হাত ঘুরে পৌঁছে যায় শহুরে বাজারগুলোতেও। যদিও মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পেরে ওঠেন না কৃষকরা।

গ্রামীণ ডাক্তার

ছোটবেলায়  অসুস্থতায়  মাখন ডাক্তার, মিনহাজ ডাক্তার, লতিফ ডাক্তার, রওশন কবিরাজ- এদেরকেই চিনতাম। তাদের মানুষের প্রতি আন্তরিকতা, ভালোবাসা ও মমত্ববোধ ছিল।  জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাতদিন মানুষকে সেবা দিয়েছেন সাহসী ও লড়াকু মানুষরা।  সীমাবদ্ধতা, অপ্রতুলতা, অপমান ও লাঞ্ছনাও সহ্য করেছেন। দিন-রাত এক করে খেটে রোগীকে সারিয়ে তুলতেন।

আধুনিক শিক্ষিতরা ‘গ্রাম ডাক্তার’ ‘গ্রাম্য ডাক্তার’ ‘হাতুড়ে ডাক্তার’ ‘হাফ-ডাক্তার’ ‘রুরাল মেডিক্যাল প্র্যাকটিশনার’ কিংবা ‘গ্রামীণ চিকিৎসক’ ‘পল্লী চিকিৎসক’ যাই বলেন, গ্রামগঞ্জে অসুখ-বিসুখে এরাই ছিলেন একসময় ভরসা। বাগাড়ম্বর-সর্বস্ব আলোচনায় না গিয়ে বলা যায়- তাদের অনেকের ডিগ্রি ছিল না তবে আন্তরিকতা ছিল, অভিজ্ঞতা ছিল; স্বীকৃতি ছিল না, তবে মানুষের ভেতরে আশা জাগাতে পারতেন, চিকিৎসা করাতে গিয়ে গরিবকে সর্বস্বান্ত হতে হতো না। মানুষের বাড়তি আস্থা ছিল।

লোকচিকিৎসায় যে সনাতনী ওষুধ চর্চা করা হতো তাতে গাছ-গাছড়ার ব্যবহার ছিল, প্রাণীজ ও অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দ্রব্য দিয়ে চিকিৎসা চলতো; ফলে এখনকার অ্যান্টিবায়টিকের অপব্যবহারের মতো মারাত্মক ক্ষতি হতো না! এটা ঠিক যারা অদক্ষ ও প্রয়োজনীয় জ্ঞান নেই তারা অধিকাংশ সময়ে রোগ নির্ণয়ে ব্যর্থ হয় কিংবা ভুল চিকিৎসা প্রদান করে। প্রায় সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র দিতে গিয়ে, সব রোগের চিকিৎসা করতে গিয়ে রোগীকে বড় ধরনের বিপদে ফেলে এমনকি মৃত্যুমুখেও পতিত হয়।

তবে এজন্য ঢালাওভাবে গ্রাম এলাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে এদের ভূমিকাকে খাঁটো করে দেখার সুযোগ নেই। গ্রামীণ সমাজে তাদের কদর ও সম্মান আছে। অল্প টাকায় সন্তুষ্ট হয়ে ভালো চিকিৎসা দেন। গ্রামের মানুষকে মহৎ সেবা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে দিয়ে আসেন। মানুষের চিকিৎসা সেবা দেয়ার পবিত্র দায়িত্ব পালন করে মানুষের কাছে স্মরণীয় ও বরণীয়ও হয়ে থাকেন। মানুষের কাছে থাকেন, বিপদের সময় পাশে দাঁড়ান। তাদের সঠিক ভূমিকার জন্য বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। সহজ-সরল সেবাদানকারী মানুষগুলোর সঠিক মূল্যায়ন করি।

কৈশরের দিনগুলি

কৈশরের উদ্যমে শত স্মৃতির মাঝে আছে- বাইসাইকেলে আব্বুর সামনে-পিছনে বসে রোজিনা ও আমার গোড়াকি বু’র বাসায় বেড়াতে যাওয়া, মতিয়ার ভাইয়ের সাথে পানি সেঁচে মাছ ধরার সুখানুভূতি, হাবিবুরের সাথে লাল গাভির জন্য ঘাস কেটে আনা, কাক ডাকা ভোরেও মৃত্যুহীন প্রাণ খলিফা ভাই (হাজী মরহুম আজিজুল ইসলাম) এর সাথে দড়ানীপাড়া জামে মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়ার আনন্দ, আমগাছের ছায়ায় মাদুর পেতে লেখাপড়া করা, ইব্রাহীম কাকাসহ আমের ঝাঁকা নিয়ে বাসাইলে ফুফুদের বাড়িতে যাওয়া, ছোটভাই আশিকের জন্মে বাধঁ ভাঙ্গা খুশি, টাঙ্গাইলে বৃত্তি পরীক্ষা দিতে বড় ফুফার নিয়ে যাওয়া এবং পরীক্ষার হলে আমাকে ডিস্টার্বকারীর ওপর রেগে অগ্নিশর্মা হওয়া, সহপাঠী ও বন্ধু জয়নালের (জয়নাল আবেদিন জনি) পড়াশুনা ছেড়ে দেয়া, সহপাঠী আব্দুল্লাহেল মিন্টুর গাছ থেকে ঢাল ভেঙ্গে টিনের চালে পড়ে যাওয়া, আমাকে মৌলভী কাকার বেত্রাঘাতে ছোটফুফুর কান্না, দাদির মৃত্যু এবং জানাযা পড়তে না পারা ইত্যাদি।

সেই সময়টাতে যে কী ভীষণ দুরন্তপনা আর ক্ষেপ্যামি ছিল! জোৎস্না রাতে ওঠানে মাদুর পেতে আসর বসতো, ভূত পেত্নীর গল্প শুনতাম। বৃষ্টির পানিতে ভেজা, দলবেঁধে বর্ষায় পানিতে গোসল, নতুন জামা-কাপড় পড়ে ইদগাহে যাওয়া, ইদের নামাযের আগে কবিতা আবৃত্তি-কুরআন তেলাওয়াত-ইসলামিক গান করার স্মৃতি।  মৌলভী কাকার চক্ষু এড়িয়ে ডাংগুলি আর মার্বেল খেলা, বৃষ্টিতে ভিজে কর্দমাক্ত শরীরেও ফুটবল খেলা, পিচ্ছিল মাঠেও লবনদারি খেলার স্মৃতি। রিয়াজ উদ্দিন কাকাদের বিশাল তেতুল গাছটা এখনো আছে, জাম গাছটাও কালের স্বাক্ষী হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে; আজও কেউ ঢিল ছুড়ে, আঁকশি বা কোন্টা দিয়ে কিংবা গাছে উঠে-পাড়ে। বালিয়াটায় নানুর বাড়ি যেয়ে- ছিপ-বড়শি দিয়ে মাছ ধরেছি, নৌকায় চড়ে বাকি ভাইয়ের সাথে শাপলা তোলেছি। খালায় বাসায় বেড়াতে গিয়ে আমড়া, কদবেল, বড়ই খেতাম। নাটাই ঘুরিয়ে ঘুড়ির আকাশ দাপিয়ে বেড়ানোর দৃশ্য যে কত আনন্দের তা’ বলে-লিখে বুঝানো অসম্ভব।

ছোটবেলায় দেশি ফল বেশি পেতাম ও বেশি খেতাম। পেয়ারা, জাম, আমলকি, খেজুর, বংকই, গাব, ডেউয়া, বেল, করমচা, শালুক, চালতা, জলপাই, আমলকি, বিচিকলা, কামরাঙ্গা খেয়েছি কাঁচা-পাকা আম ভর্তা আর আচার খেয়ে তৃপ্তির ডেকুর গিলেছি। গাছ থেকে পেড়ে ফল খাওয়ার মজাই আলাদা! এখন আর পূর্ব পার্শ্বের লেবুর বাগান নেই, লালটুকটুকে গাভিটা নেই; মায়ের হাতের তৈরি ঘি-দই নেই, সাদা-কালো ডোরাকাটা বিড়ালটা নেই, হাঁস-মুরগির ছুটাছুটি নেই। তখন হারিকেন ছিল, হাতপাখা ছিল, আখের গুড় আর লেবুর শরবত ছিল, খেজুরের রস, তালের রস, মধু ছিল; নিজেদের গাভীর দুধ, পুকুরের মাছ, চাষকৃত শাকসবজি, পালিত হাস মুরগি ছিল। খুশির ঘটনায় বাতাসা-কদমা-জিলাপি বিলানো হতো, জুম্মার নামায শেষে মুসুল্লিদের মাঝে ঝাল খিচুরি ও মিষ্টি ক্ষীরের মিশ্রণ বিলানো হতো। ছোটবেলার বন্ধুদের খুব মিস করি যারা ঘর থেকে টেনে বের করে নিয়ে যেতো খোলা সবুজ ঘাসের মাঠে, ছন্দহীন-নিরানন্দ জীবনে আনন্দের জোয়ার যোগ করতো, মনের কথা খুলে বলা যেতো অবলীলায়। অসাধারণ ছিল নির্ভরতা আর বিশ্বাসের সেই গভীর মমতা-মায়া-ভালোলাগা অন্য রকম অনুভূতি! এখন কয়েকজনের (মালেক, বানিজ, আমিনুর ভাই) সাথে ফেসবুকে যুক্ত থাকায় যোগাযোগ মাঝেমাঝে (প্রত্যক্ষ/পরোক্ষ) হয়।

ছোটবেলার স্মৃতি

শৈশবের উচ্ছ্বাসে মিশে থাকা স্মৃতির মাঝে আছে- বড় কাকার দরাজ গলায় পুথিঁ পড়া, ছোট ফুফুর মুখে মৌলভী কাকার লেখা কবিতা শুনা, বড় ফুফুর জোর করে গোসল করানো, ঝড়ের দিনে বৃষ্টিতে ভিজে ছোটবোনের সাথে দৌঁড়ে আম কুড়ানো, আমার শরীরে আম্মুর তৈল মাখানো থেকে বাঁচতে প্রাণপণ দৌঁড়ানো, আব্বার সাথে প্রথম ঢাকায় ভ্রমণে চিড়িয়াখানা-স্মৃতিসৌধ-শিশুপার্ক পরিদর্শন ও নৌকায় খাদ্যপ্রেমিক ফয়েজ ভাইয়ের (হাজী মরহুম ফয়েজ উদ্দিন মেম্বার) অবিরত খাওয়া অবাক-বিস্ময়ে দেখা, গোল্লাছুট খেলার সাথী জোৎস্না আপুর বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়ি চলে যাওয়া, দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াকালীন সহপাঠী কুলসুমের বিয়ে, সহপাঠী সাত্তার ও সালমার মা-বাবা হারানো ইত্যাদি।

ছোটবেলার তিক্ত-টক-ঝাল স্মৃতির মাঝে আছে- অভিমান করে জঙ্গলে গাছে লুকানোর পর খুঁজে না পেয়ে আম্মুর পেরেশান হওয়া, ‘এরশাদ জেলের ডালভাত কেমন লাগে’ বলে সফি হুজুরের ক্ষেপানো, আমাকে সা‍ঁতার শেখাতে ছোটকাকা-ছোটফুফা-গণি ভাইয়ের পরিশ্রম, ‘লাল গেঞ্জি’ চেয়ে বড় কাকাকে ঈদের দিনে সারা এলাকা ঘুরানো, কালাচানে (ভূতে) ধরার পর সুন্দরী শিক্ষার্থীদের চিকিৎসায় নরেশ স্যারের (বাবু নরেশ চন্দ্র সরকার) কার্যক্রম ইত্যাদি। রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছ কাটতে গিয়ে উপর থেকে নীচে পড়ে যাওয়া আহম্মদ হুজুরের অবস্থা ছিল ভীষণ কষ্টকর। দামান্দে (মরহুম রওশন আলী কবিরাজ) অত্যন্ত সাবলীল ও প্রাঞ্জল ভাষায় শিক্ষণীয় গল্প-ঘটনা-ইতিহাস বলতেন, শারীরিক-মানসিকভাবে সুস্থ থাকার টিপস দিতেন; আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতাম।

জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য সখিপুর-টাঙ্গাইল-ঢাকায় মৌলভী কাকা (মাওঃ ক্বারী মোঃ শামছুজ্জামান) ও করিম হুজুর (মাওঃ আ.ফ.ম আব্দুল করিম) আমাকে নিয়ে যেতেন। থানা-জেলা-বিভাগীয় পর্যায়ে পুরস্কৃত-বিজয়ী হলে আমার শিক্ষকদেরও অনেক খুশি হতে দেখতাম। ৩য় শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষায় প্রথম হওয়া, ৫ম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়ায় আত্মিয় স্বজনদেরও আনন্দিত হতে দেখতাম। অর্থাৎ তখন অন্যের সাফল্য-অর্জনেও খুশি হবার মতো মানসিক উদারতা বেশ ছিল। অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষা দেয়ার সময় নলুয়ার মনির কাকার আন্তরিকতা, দাদা-দাদির ভালোবাসাময় সান্নিধ্য ও সহপাঠী লিটনের (লোকমান হোসেন চান্দু) সাথে সময় কাটানো দারুণভাবে উপভোগ করেছিলাম। মনোরা ফুফুদের (মনোয়ারা আক্তার মুক্তা) বাড়ি থেকে বাহারি ফুল গাছের ঢাল বা বীজ এনে ছোটবোন ও আমি আমাদের উঠানে লাগাতাম।

গ্রামীণ প্রকৃতি

গ্রামে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়, ফসলের ক্ষেত দেখে চক্ষু শীতল করা যায়। যেদিকে দৃষ্টি যায় সবুজ আর সবুজ দেখা যায়, ছবির মতো সাজানো গোছানো প্রান্তর দেখা যায়, কুয়াশায় সূর্যের লুকোচুরি খেলা দেখার সুযোগ পাওয়া যায়, প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়া যায়, নৈসর্গিক পরিবেশে মুহুর্তে যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি ভুলা যায়।

গ্রাম মানেই যেন সবুজ শ্যামল, ছায়া ঢাকা, পাখি ঢাকা, শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশ। যেখানে পথিকের হাঁটার ক্লান্তি দূর হতে পারে ঘাসের সবুজ গালিচার পরশে। যেন কল্পনার চিত্রগুলো রংতুলিতে ফুঁটিয়ে তোলা। এখানকার খোলামেলা জায়গায় বসে আকাশ কিংবা চাঁদ দেখা যায়, নির্মল বাতাসে প্রাণ জুড়ানো যায়। কর্মক্লান্ত নগর জীবন এবং কোলাহল ছেড়ে বাড়ি যেয়ে বাড়ির উঠানে বসে গল্প করায় অন্যরকম আনন্দ পাওয়া যায় । মনের খোরাক জোগাড় করতে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের নিকট সবুজের সমারোহ মনোমুগ্ধকর হয় নি:সন্দেহে।

সবুজ প্রকৃতিকে নিবিড়ভাবে উপভোগ করতে গ্রামের সবুজে ঘেরা জায়গা নানাদিক থেকে আকর্ষনীয়। গ্রামীণ নয়ন জুড়ানো আর মন ভুলানো দৃশ্য ও মানুষের হৃদ্যতা-সরলতা-আন্তরিকতা প্রমাণ করে দেশের মাটি ও মানুষকে জানতে-বুঝতে হলে গ্রামের কাছে যেতে হবে। অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দযমন্ডিত গ্রামীণ পরিবেশের সুনিবিড় ছোঁয়ার অনুভূতি সত্যি খুব চমৎকার। গ্রামে পশুপাখি ও গাছের সারি যেন ছায়া ঢাকা এক স্বপ্নপূরী তৈরি করে।

ভিলেজ পলিটিক্স

গ্রামের কথা মনে এলেই মনের মধ্যে ভেসে ওঠে সুশীতল ছায়া ঘেরা কোনো দৃশ্যের ছবি। ফসলের মাঠের মাঝ দিয়ে আঁকা বাঁকা সরু মোঠো পথ। সবুজ গ্রামের মধ্যে উঁকি দেওয়া সবুজ গাছের সারি। গ্রামের মানুষগুলোও যেন ছিল একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। একে অপরের সুখে-দুখে এগিয়ে আসত। যে কোনো ধরনের সমস্যা গ্রামীণ সালিশেই সমাধান হয়ে যেত। শত্রুতা পরিণত হতো বন্ধুত্বে। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সেই গ্রামীণ সালিশ ব্যবস্থায়ও ঢুকে পড়েছে স্বার্থপরতা, পক্ষপাতিত্ব ও অবৈধ অর্থনৈতিক লেনদেন ইত্যাদি; যা সৌহার্দপূর্ণ সেই গ্রামীণ শৃঙ্খলাকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

গ্রামীণ বিচার বা সালিশ ব্যবস্থা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে; ন্যায় সঙ্গত না হওয়ায় সমাজ জীবনে প্রতিহিংসা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগে গ্রামে বসবাসকারীদের জীবনযাপনে নানাবিধ সমস্যা সমাধান করত গ্রাম্য সালিশ ব্যবস্থা। কিন্তু এখন গ্রাম্য সালিশ ব্যবস্থা মানুষকে শোষণের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় ৮০ ভাগ সালিশ ন্যায়সঙ্গত হয় না। ফলে দুর্নীতিগ্রস্ত গ্রাম্য সালিশী ব্যবস্থাই গ্রাম্য উন্নয়নে পথে অন্তরায়। গ্রাম্য সালিশে সরকারের প্রতিনিধির ক্ষমতার দাপটে প্রতিপক্ষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সালিশগণ যে পক্ষ থেকে টাকা বেশি সেই পক্ষে রায় চলে যায়। বিচারপ্রার্থী ব্যক্তির ন্যায় কথাকে সমর্থন না দেয়ার লোক না থাকার কারণে ন্যায় বিচার পাওয়া যায় না।

সহজ-সরল ও ভালোবাসায় পরিপূর্ণ গ্রামের সাধারণ জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে এদের নীচতা, হীনতা ও হিংস্রতা। গ্রামে কোনো সুন্দরী মেয়ের দিকে কু-দৃষ্টি পড়লে ফাঁয়দা হাসিল করতে ঐ সুন্দরী মেয়েকে নানা কৌশলে সমাজের কাছে দুশ্চরিত্রা পর্যন্ত বানান। চরম সুবিধাবাদী পেশাদার কূটবুদ্ধি সম্পন্ন ষড়যন্ত্রপ্রিয়রা যখন যে সরকার আসে তার পক্ষেই কাজ করে, সারাক্ষণ মামলা মোকদ্দমা ও বিচার সালিশ নিয়েই ব্যস্ত থাকে, তিলকে তাল করে, প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য ঘটনার ব্যাখ্যা নিজ সুবিধামতো করে তুচ্ছ ঘটনাকে বড় করে লড়াই বাধিয়ে দেয়। উপঢৌকন-ঘুষ আদায়ই হয় তাদের মূল উদ্দেশ্য।ভিলেজ পলিটিকসের নেতিবাচক প্রভাব অনেক সময় জাতীয় রাজনীতিকে আক্রান্ত করে, সঙ্কীর্ণ ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষা করে। কখনও কখনও শহরের ডার্টি পলিটিক্স বা নোংরা রাজনীতির চেয়েও ভিলেজ পলিটিক্স বেশি মারাত্মক হয়ে ওঠে।

ঈদের দিন

খোলা মাঠের ইদগাহে ঈদের জামাত হতো। কোলাকুলি-করমর্দন করে শুভেচ্ছা বিনিময় হতো। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু, প্রতিবেশীর বাড়িতে যাতায়াত ও খাওয়া-দাওয়ার রেওয়াজ ছিল। ঈদ উপলক্ষে নতুন জামাকাপড় কেনা হতো। যারা ঢাকায় থাকতেন, তারাও ছেলে-মেয়ে নিয়ে নাড়ির টানে গ্রামে ফিরতেন। চাঁদ রাতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ। তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানি তাগিদ’ গান বাজতো। আনন্দের হিল্লোল বয়ে আনতো, প্রসন্ন প্রফুল্ল চিত্তে ঘরে ঘরে রেডিওতে বাজতো এই গান। অনেকেই মুখে মুখে গাইতো। ঘরবন্দি জীবনে উৎসবের প্রাণটাই আজ বড় শুকনো, বিবর্ণ।

বন্ধুদের মিলনমেলা, হৈ-হুল্লোড়, ঘুরে বেড়ানো, প্রতিবেশীদের নিয়ে খাওয়াদাওয়া, আড্ডা দেওয়া। প্রবাসীরাও দেশে এসে মা-বাবা ও ভাই-বোনদের সঙ্গে একত্র হতো। অনাবিল আনন্দের আবহ, খুশির জোয়ার। শান্তি, সম্প্রীতি ও মানবতার নতুন বার্তা নিয়ে আসা ঈদ আসতো। হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে মনে মানব প্রেম জেগে উঠতো। মন হতো উদার, সহমর্মিতাপূর্ণ ও আল্লাহর প্রেমের রঙিন। প্রবৃত্তির প্ররোচনাকে দমন করে বিবেকের শক্তি জাগ্রত হতো। সব ক্ষুদ্রতা, সংকীর্ণতা, তুচ্ছতা ভুলে সামাজিক ঐক্য, সংহতি ও ভালবাসার নিবিড় বন্ধন সৃষ্টি হতো। একজন আরেকজনের সুখ, সমৃদ্ধি, শান্তি কামনা করতো।

ছেলেবেলার ঈদে নিজের মতো করে সময় কাটানো যেত। সেসব স্মৃতিই করোনাকালের ঈদের বড় সম্বল। সাধারণত ছোটবেলায় ঈদ আনন্দ নতুন জামা-জুতা ঘরে আসার পর থেকেই শুরু হয়ে যেত! ঈদের মৌসুমে নতুন জামাকাপড় নিয়ে বেশ একটা আমেজে থাকতাম। বাড়িতে বাড়িতে ইফতার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের ফলে অনেকের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ ছিল আনন্দের; ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে দীর্ঘ সময় ধরে মোনাজাত হতো। ঈদের চাঁদ দেখার জন্য সুমনদের বাড়ির উত্তর পাশের খোলা জায়গায় ছোটদের সাথে বড়রাও যোগ দিতেন। ঈদের চাঁদ একসাথে দেখা যে কতটা আনন্দের হতে পারে তা তখনকার স্মৃতি ভুলে গেলে আর অনুভবই করতে পারতাম না। চাঁদ দেখার পর রীতিমতো আনন্দ মিছিল হতো, শ্লোগান দিতো!  ভোরবেলায় ঈদের গোসলের সাবান নতুন হতে হতো, কে আগে গোসল করবে তা নিয়েও ভাই-বোনদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হতো!

নতুন জামা-কাপড় পড়ে টুপি মাথায় দিয়ে আতর মেখে সেমাই খেয়েই মতিয়ার ভাই, সেলিম নানা, হারুন নানা, হাবিবুর, সুমনসহ দলবেঁধে ইদগাহে যেতাম। চোখে-মুখে থাকতো আনন্দের ঝলক। ঈদের নামাযের আগে কবিতা আবৃত্তি-কুরআন তেলাওয়াত-ইসলামিক গান করতাম! নামাজ শেষে কোলাকুলি, সাথে পরিচিতজনদের বাসায় নিয়ে আসা, দলবেঁধে বেড়ানোর অনুভূতি ছিল অন্যরকম আনন্দের।  ঈদ আসে ঈদ যায়। হানারচালা গ্রামের মধুর ঈদের দিনগুলো খুবই মিস করি।  ঈদে এখনো হাতীবান্ধায় গ্রামে যেতে খুব ইচ্ছে করে। সাধারণত তক্তারচালায় ঈদের নামাজ আদায় করলেও দড়ানীপাড়া জামে মসজিদকে মিস করি!বড় কাকার দরাজ গলায় পুথিঁ পড়া, ছোট ফুফুর মুখে মাওঃ ক্বারী মোঃ শামছুজ্জামান কাকার লেখা কবিতা শুনা খুব আনন্দের ছিল। আসলে আমার বেড়ে ওঠা অনেকের অবদানে ভরপুর।

প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত গ্রামেই পড়েছি; সে সময়ের ঈদগুলো ছিল এমনই। শৈশবের ঈদের স্মৃতি গ্রামকে ঘিরেই। কী যে মায়া আর আনন্দঘেরা ছিল গ্রামীণ ঈদ! ছোটবেলায় হাতে লিখে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে ঈদকার্ড বানাতাম! ঈদের আগে প্রবাসী বাবার পাঠানো চিঠি পেলে তা নিয়েই অনেক আনন্দে দিনটা কেটে যেত আমার। তখন অতি অল্পতেই অসাধারণ আনন্দ হতো। মনটা ছিল প্রশস্ত নদীর মতো। মনে এত বেশি জায়গা ছিল যে ছোট একেকটা ঘটনায় প্রাণখোলা আনন্দ হতো। গনি ভাই কর্তৃক কিনে আনা প্যান্ট-শার্ট ছিল দারুণ উত্তেজনার, আনন্দের জোয়ারে ভেসেছিলাম। খুবই দুরন্ত ছিলাম বলে ছেলেবেলায় আমাকে চোখে চোখে রাখতো আমার দুই ফুফু। তবে ঈদের সময় একটু স্বাধীনতা বেশি পাওয়া খুবই প্রাণভরে উপভোগ করতাম। বড়দের কাছ থেকে নতুন টাকা বা ঈদের সেলামি পাওয়া আনন্দে ভিন্ন মাত্রা যোগ করতো। গ্রামে শৈশবের প্রাণখোলা ঈদ অনেক বেশি তাড়িত করে আমাকে। শৈশবের ঈদ ধীরে ধীরে বিবর্তিত হয়েছে এবং হচ্ছে এখনো। এবারের ঈদটাতো স্বাভাবিক ভাবে হচ্ছে না। কোনো কোলাকুলি হয়নি, কোনো সেলামি আদান প্রদান হয়নি, কারো বাসায় যাওয়া হয়নি, কেউ বাসায় আসেনি। করোনাকালের এই ঈদটা আমার ছোট্ট মেয়ে দুজনের সাথেই কাটলো। ভাবনায় ছিল পুরোনো দিনের কথা। মনে পড়ছিল ছোটবেলার ঈদ-স্মৃতি।

রমজান মাস, তারাবীহ ও ইফতার

রমজানে মসজিদে খতম তারাবিহ হতো। মসজিদে ইফতার অনুষ্ঠান হতো ও ইতেকাফ হতো। নামাজ মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে পড়াকে তাগিদ দেয়া হতো। নামাজ শেষে জিকির-আজকার, তাওবা-ইসতেগফার, দোয়া-দরূদ পড়া হতো। জুম্মার নামাজ শেষে দান-খয়রাত করা হতো। কুরআন শিক্ষার আসর বসতো, অনেক পরিবারই সামাজিকভাবে ইফতার অনুষ্ঠান আয়োজন করতো, মসজিদ ও মক্তব্যে নৈতিক ও ধর্মীয় প্রশিক্ষণ হতো।  অভুক্ত ও অসহায় মানুষেরকে ইফতার সামগ্রী ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হতো।  অনেকই জাকাতের অর্থ পৌঁছে দিতেন। প্রতিবছর চাঁদ দেখার ঘোষণা হওয়ার পর বিভিন্ন স্থানের মসজিদে থেকে ঘোষণা আসতো, রমজানুল মোবারক, আর ঘোষণা করা হতো তারাবির নামাজের সময়।  মসজিদে তারাবির নামাজে শরিক হওয়া ছিল খুবই আনন্দের। উৎসবমুখর পরিবশে বিরাজ করতো । মসজিদে শেষ দশকে কয়েকজন ইতিকাফে বসতো।

ধর্মীয় শিক্ষা

রমজানে মসজিদে খতম তারাবিহর আগে-পরে মাদানী হুজুরের (হাফেজ মাওঃ আনিসুর রহমান আল মাদানী) হৃদয়স্পর্শী বয়ান থেকে ধর্ম-নৈতিকতার (মাসআলা-মাসায়েল) জ্ঞানার্জন হয়েছে। আহম্মদ হুজুরের (ক্বরী আহমাদ আলী) বাসায় ও জুম্মাপাড়া মক্তবে মুন্সি হাফিজ উদ্দিনের কাছে কোরআনের সহীহ তেলাওয়াত শিখতে যেতাম ছোটবোনসহ। ঢাকা থেকে সাঈদ কাকা (হাফেজ মাওঃ সাঈদুর রহমান) গ্রামে আসলে সুমধুর কণ্ঠে কোরআন তেলাওয়াত শুনাতেন-শুনতেন এবং ইসলামী গান শুনাতেন। ধর্মীয় ও নৈতিক বিষয়াদি নিয়ে হৃদয়স্পর্শী বয়ান এবং এসব আড্ডার কথা খুব মনে পড়ে!  কাক ডাকা ভোরে মৃত্যুহীন প্রাণ মরহুম হাজী আজিজুল ইসলাম খলিফা ভাই এর সাথে মসজিদে নামাজ পড়তে যেতাম। রমজান মাসের শেষ দশকে শামসুজ্জামান কাকাসহ হাজী মরহুম ফয়েজ উদ্দিন মেম্বার, ক্বারী আহমাদ আলী হুজুর, মসজিদের মোয়াজ্জিন ও মক্তবের প্রশিক্ষক মুন্সি হাফিজ উদ্দিন কাকা ইতিকাফে বসতেন। উনাদের জানাশুনা-অভিজ্ঞতা থেকে জেনেও আমরা সমৃদ্ধ হতাম।

ডাকঘর ও চিঠি

বাবাসহ আত্মীয়-স্বজন অনেকেই বিদেশ থাকতো। মোবাইল ফোন সহজলভ্য ছিল না। ডাকই ছিল যোগাযোগের একমাত্র ব্যবস্থা। মতিয়ার ভাইয়ের সাথে  বিকালে কামালিয়া চালায় যেতাম। সাইকেল চালিয়ে চিঠিভর্তী ঝোলা নিয়ে  বাসাইল থেকে একজন ডাকঘরে আসতেন।  পোস্ট মাস্টার নতুন চিঠিগুলো হাতে নিয়ে নাম বলতেন। যদি কোনোদিন চিঠি হাতে তুলে দিতেন তাহলে আনন্দে মন ভরে যেতো। পোষ্ট অফিসে চিঠি পোষ্ট করা বা নতুন চিঠির খোঁজ নেয়া। খামের ওপর সাঁটানো থাকতো নানান সুন্দর ডাকটিকেট। চিঠিপত্রের মধুর  বিষয়টি এখন অতীত দিনের স্মৃতি।

ডাকটিকিট সংগ্রহ

ডাকটিকিট সংগ্রহের মজার শখের পেছেনের কারণ ছিল অনেক আত্মীয় স্বজনের বিদেশ থাকা। বাবা, বড় কাকা, ছোট কাকাসহ অনেকেই বিদেশ থাকতেন। চিঠি পাঠাতেন। ইনভেলাপে ডাকটিকিট লাগানো থাকতো।  সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার ডাকটিকিট বেশি ছিল। ফেলে দেয়া খাম বা আত্মীয়-স্বজনের বাসায় বেড়াতে গেলে পাওয়া ডাকটিকিটও নিয়ে আসতাম। ডাকটিকিট সংগ্রহ একটি শখে পরিণত হযয়েছিল। ডাকটিকিট তুলে অ্যালবাম বা খাতার মাঝে সংগ্রহ করে রাখতাম এবং  বন্ধুদের দেখিয়ে আনন্দিতও হতাম। আসলে ডাকটিকিট সংগ্রহকে ‘জগতের বৃহত্তম শখ’ বলা হয়।