আসুন দেখি কেন সেখানে প্রোডাক্ট বিক্রিতে সফলতা পেয়েছি-
১) প্রোডাক্ট সিলেকশন:
ক) প্রোডাক্ট সিলেকশনটি উপযুক্ত ছিল। এমন প্রোডাক্ট ছিল যা সবার জন্যই অত্যন্ত দরকারী।
খ) প্রোডাক্টটি খুবই আনকমন ছিল যা খুব সহজলভ্য ছিল না।
২) মার্কেটিং:
ক) প্রোডাক্টটি নিয়ে ব্লগিং হয়েছে। ব্লগের কনটেন্টেই টার্গেটেড মানুষের মনের ভেতর নাড়া দেয়ার মতো করেই সব বাক্য লিখা ছিল, সেই ব্লগ পোস্টটিতে।
যেমন: টাইটেল ছিল: “কমিয়ে ফেলুন পরিশ্রম, বাঁচিয়ে ফেলুন মূল্যবান সময়”
গ) পেজটিতে নিয়মিত টিউন দেয়া হয়েছে। সেই টিউনকে আবার প্রতিদিন প্রায় ২০টা পেজে শেয়ার করা হয়েছে।
ঘ) সবার জিজ্ঞাসার উত্তরটিও নিয়মিত প্রদান করা হয়েছে।
ঙ) প্রোডাক্টটির ব্যবহারের বিষয়ে অনুপ্রেরণা দেয়ার মতো ভিডিও তৈরি করা হয়েছে।
আরও যা যা করলে আরও বেশি সফল হওয়া যেত-
১) পেজটিতে অ্যানগেজমেন্ট বৃদ্ধির জন্য কুইজ আয়োজন করা যেত।
২) যারা অনলাইনে পরিচিত ব্যক্তি তাদের দিয়ে এটি ব্যবহার করার ভিডিও তৈরি করে শেয়ার করলে আরও বেশি সফল সেল বৃদ্ধি পাবে।
৩) আরও বেশি ইমেজবেস কনটেন্ট প্রচার করা সম্ভব হলে বিক্রি বৃদ্ধি পাবে।
৪) প্রোডাক্ট যারা কিনে ব্যবহার করছে, তাদের ব্যবহারের অভিজ্ঞতা আরো বেশি পোস্ট করে, সেটি বিভিন্ন গ্রুপে শেয়ার করা উচিত। সে রকম একটি পোস্ট করা হয়েছে।
৫) প্রোডাক্ট কিনলে বিশেষ কোনো ধরনের অফার দিয়ে দেখা যেতে পারে। সেটি হলেও আশা করা যায়, অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া যেত।
৬) কমপক্ষে ২০টা গ্রুপে টার্গেট করে সেসব গ্রুপে প্রতিদিন কমপক্ষে দুইবার (সকাল, রাত) করে পোস্ট করা হলে এবং এটি যদি একটানা ১৫ দিন কোনো বিরতি ছাড়া করা যায়, তাহলে আরও বেশি সফল হওয়া যাবে। আশা করি, আপনারাও এটুকু লেখা পড়ে এফ কমার্স বিজনেস শুরু করবেন, এবং উদ্যোক্তা হয়ে উঠবেন।
ফেসবুক থেকে ই-কমার্স বিজনেস, যে কোনো স্কীলের জন্য ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়া যায়। যে কোনো বিজনেসের প্রথম এবং প্রধান মার্কেটিং সেক্টর এখন ফেসবুক। সে জন্যই ফেসবুক মার্কেটিংয়ের দক্ষতাই আজকের এ যুগে সবচায়ে চাহিদাসম্পন্ন দক্ষতা। এ দক্ষতা থাকলে ঘরে বসে যে রকম ইনকাম করা যায়, ঠিক একইভাবে লোকাল বিভিন্ন কোম্পানিতেও চাকরির বিশাল সুযোগ রয়েছে।
ফেসবুক মার্কেটারদের জন্য আরেকটা বিশাল সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি, যা ইতিমধ্যে খুব ভালোভাবেই দৃশ্যমান হচ্ছে। এবং সেই সেক্টরে সামনে আরো বিশাল সম্ভাবনা তৈরি হবে ফেসবুক মার্কেটারদের জন্য। আচ্ছা, বক বক না করে সেই সেক্টরটি নিয়েও এ বইয়ে আলোচনা করছি।
ফেসবুক মার্কেটিংয়ে দক্ষদের ভবিষ্যৎ বিশাল কর্মক্ষেত্র: রাজনীতি মাঠ
রাজনীতিক নেতারা নিজেদের ভোট চাওয়ার জন্য গুণগান প্রচার করতে হয়। আর সেগুলো প্রচারের জন্য পোস্টার, লিফলেট, মাইক, টিভি, রেডিওকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে। এগুলো ট্রেডিশনাল মাধ্যম। আধুনিক যুগে সব পলিটিক্যাল ব্যক্তিকে তাদের প্রচারণা চালানোর জন্য সবচেয়ে বেশি সোশ্যাল মিডিয়া, বাংলাদেশে ফেসবুককেই বেশি ব্যবহার করছে।
কারণ সবাই জানে, অন্য জায়গাগুলোতে অনেক কম মানুষ অ্যাকটিভ থাকলেও বর্তমান যুগে সব ভোটারই সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেক অ্যাকটিভ। তাই তাদের কাছে নিজেদের বাণী পৌঁছাতে হলে সবচেয়ে ইফেকটিভ মাধ্যম হচ্ছে ফেসবুক। ইতিমধ্যে কয়েকটি নির্বাচনে প্রার্থীদের ফেসবুকে ক্যাম্পেইনের ব্যবহার অত্যধিক মাত্রাতে দেখা গেছে। সামনে আরও বাড়বে।
আচ্ছা, ফেসবুকের প্রচারণার পেছনের লোকজনকে কখনও ভেবেছেন? পেছনের সেই লোকগুলোই হচ্ছে, একেকজন দক্ষ ফেসবুক মার্কেটার, যাকে পেমেন্টের বিনিময়ে হায়ার করা হয়েছে। আপনার দক্ষতা থাকলে এবং কিছু কাজের পোর্টফলিও থাকলে অবশ্যই আপনি সেই চাহিদাসম্পন্ন জায়গাতে চাকরি পেয়ে যেতে পারেন।
কিছু দিন আগে বেসিস (বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস) এর নির্বাচনে (২০১৮ সালের ৩১ মার্চের নির্বাচন) সোশ্যাল মিডিয়াতেই ক্যাম্পেইন চলছিল। তখন একজন সদস্যকে তার ক্যাম্পেইনের ব্যাপারে সাজেশন তৈরি করে দিয়েছিলাম।
সেটি এ বইয়ে উল্লেখ করতে চাই। হয়তো, এখান থেকেই আপনারাও শিখতে পারেন। বলা তো যায় না, ভবিষ্যতে হয়তো কোনো নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর ক্যাম্পেইনের দায়িত্ব আপনি পেয়ে যেতে পারেন। তখন এ সাজেশনগুলো কাজে লাগবে।
বেসিস ইলেকসনে ডিজিটাল প্রচারণা নিয়ে পর্যালোচনা
প্রার্থীরা সবাই নিজের প্রোফালই শেয়ার করছে, কে কী করছে, এবং কী করবে সেটি নিয়ে নিউজ করে সেটির লিংক শেয়ার করছে। ভোটারদের কাছে ই-মেইল করছে, যার ফরম্যাটিং দেখলেই ভোটাররা প্রার্থীর যোগ্যতা নিয়ে, প্রফেশনালিজম নিয়ে নেগেটিভ ধারণাই পাবেন।
প্রার্থীরা কে কী, সেটা প্রচারণার মেসেজের চেয়ে তাদের প্রচারণাতে গুরুত্ব পাওয়া উচিত ছিল, উনি কী করবে, কেন তিনি করবেন, কীভাবে সেটি করবেন। তাহালে ভোটারদের ডিসিশন তৈরিতে সেটির প্রভাব পড়ত।
ডিসিশন তৈরির জন্য যে মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি করা হয়, সেই সময় আসলে মাথাতে রাখতে হয়, আমার প্রেজেন্টেশন দিয়ে আমার ওপর আস্থা ফেরানো, মেসেজ ডেলিভারির ক্ষেত্রেও স্মার্ট হতে হয়, যাতে প্রচারণা করতে গিয়ে অন্যের বিরক্তির কারণ তৈরি না হয়।
এক্ষেত্রে আমার পরামর্শগুলো:
১) প্যানেলের একটা ওয়েব সাইট থাকা জরুরি। প্যানেলের মূল এজেন্ডা থাকবে হোম পেজে। প্রত্যেক প্রার্থীর জন্য আলাদা একটা পাতা থাকবে। সেখানে কী করব, কেন তা ঠিক করলাম, কীভাবে করব, আর আমি কেন সেটা খুব ভালোভাবে করতে পারব আমার পারসোনাল যোগ্যতা আর পূর্বঅভিজ্ঞতা কী, আর সেটা কীভাবে আমার এসব করতে সাহায্য করবে তা তুলে ধরতে হবে।
সাইটের ব্লগ সেকশনে প্রতিদিনই নানা বিষয় নিয়ে লেখা দরকার। এ ক্যাম্পেইনে ভোটারদের সাইটে নিয়ে আসার জন্য সিস্টেমেটিক একটা প্রচার চালাতে হবে।
প্রতিদিন একটা লাইভ প্রোগ্রাম করতে হবে। প্যানেলের প্রত্যেকে আলাদা আলাদা দিন লাইভে আসবে। প্যানেলের টার্গেট গুলো নিয়ে আলোচনা করবে, প্রশ্নের উত্তর দেবে। সেই ভিডিওটাই হতো আসলে নতুন কনটেন্ট। সেই কনটেন্টই বিভিন্ন গ্রুপে প্রতিদিন শেয়ার করা উচিত।
প্রতিদিন গ্রুপের মেম্বাররা তাদের ওয়ালে প্লাস গ্রুপে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একটা ইমপ্যাক্টফুল লেখা লিখত। যার টার্গেট হচ্ছে সাইটে নিয়ে আসা। এই নিয়ে আসা নিয়ে ক্রিয়েটিভ অনেক আইডিয়া বের করা যায়। অনেক আইডিয়াই আসলে এই জন্য বের করা যায়।
২) ওয়েবসাইটের ব্লগ সেকশনে প্রতিদিনই আইটি ইন্ড্রাস্ট্রির সমস্যাগুলো নিজের চোখে কী রকম দেখছি, সেটি নিয়ে সবার সঙ্গে শেয়ার করার ব্যবস্থা করলে ভালো হবে এবং সেগুলো সমাধানে নিজের চিন্তাভাবনা শেয়ার করলেও অন্যরা পড়লে চিন্তাভাবনার সক্ষমতা নিয়ে একটা পজিটিভ ধারণা পাবে।
৩) প্রতিদিন লাইভ প্রোগ্রাম করলে, সেটি অনেক ভালো হতো। সেই লাইভ প্রোগ্রামে ভোটাররা যখন সরাসরি ইন্টারেকশনের সুযোগ পাবে, তখন প্রার্থীর সঙ্গে ভোটারের আত্মিক সম্পর্কটা আরও গাঢ় হতো, যা প্রার্থীর ব্যাপারে ভোটারের সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সহযোগিতা করবে।
৪) সোশ্যাল মিডিয়ার পেজে প্রার্থীর জীবনের অভিজ্ঞতাগুলো নিয়ে সেশনের ব্যবস্থা করা যেত। এ সেশনগুলো লিখিত কিংবা ভিডিও আকারে হবে। সেই সেশনে সেই প্রার্থী তার সফলতা কিছু চ্যালেঞ্জিং মুহূর্ত এবং সেই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করার ঘটনাগুলো উল্লেখ করত। তাতে ভোটাররা সেই প্রার্থীর যোগ্যতার ব্যাপারে আস্থা পেত।
৫) ফেসবুকে ইউজারদের অ্যাটেনশন পাওয়ার জন্য ইনফোগ্রাফিক ইমেজ ব্যবহার করতে হবে। ইনফোগ্রাফিকগুলো কি কি বিষয়ের ওপর হতে পারে: জীবনে এখন পযন্ত আমার অর্জন, আইটি ইন্ড্রাস্ট্রিতে অবদান, বেসিসে পূর্বে দায়িত্বপালনকালীন কৃতিত্বগুলো, ভবিষ্যতে দায়িত্ব পেলে কি কি ফোকাস থাকবে ইত্যাদি।
ভাবেন তো, এ বিষয়গুলো এখন খুব বিশ্রী ফরম্যাটে মেইল করা হচ্ছে, কিংবা অনলাইন লিখে বুস্টিং করা হচ্ছে, কিংবা নিউজ পোর্টালে নিউজ করা হচ্ছে, কিন্তু কতজন সেগুলো পড়ছে, বেশির ভাগ স্কিপ করে যাচ্ছে। কিন্তু এই বিষয়গুলো ইনফোগ্রাফিক ডিজাইন করে পোস্ট করা হলে অনেক বেশি মানুষের নজরে আসত।
৬) কোটেশন সিরিজ টাইপ পোস্টের মতো নিজের করা বিভিন্ন কার্যক্রম কিংবা নিজের মেসেজ, কিংবা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে প্রতিদিন সিরিজ ইমেজ পোস্ট শুরু করা উচিত। সিরিজ ইমেজগুলো অনেক বেশি অ্যাটেনশন তৈরি করতে পারে।
৭) GIF ভিডিওর মাধ্যমে প্রতিদিন শর্ট কিছু মেসেজ শেয়ার করা যায়।
৮) শর্ট ভিডিও, সম্ভব হলে অ্যানিমিটেড ভিডিওগুলো অনেক বেশি অ্যাটেনশন পায়। সেই ভিডিও তৈরি করে প্রতিদিন পরিকল্পনামাফিক পোস্ট করা দরকার।
৯) বেসিসে দায়িত্বপালনকালীন বিভিন্ন ছবির একদিন একটা ছবি পোস্ট করে, সেটির পেছনের গল্পটা নিয়ে নিয়মিত পোস্ট থাকতে পারে, যা পুরনো কার্যক্রমকে আবার মনে করে দিত সবাইকে, যার অর্জনগুলো হয়তো সবাই ভুলে গেছে। এ রকম পদ্ধতিতে মনে করিয়ে দিলে আমি শিউর, ভোটারদের সিদ্ধান্ত তৈরিতে এটি কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।
১০) প্রতিদিনের প্রচারণা কার্যক্রম চালাতে গিয়ে সেটির কোনো অভিজ্ঞতা প্রতিদিন শেয়ার করার ব্যবস্থা করতাম, তাহলে সবাই আপডেট থাকবে। এটিও অ্যাটেনশন তৈরিতে অনেক সহযোগিতা করবে। আমার মনে হয়, এখন যেভাবে মার্কেটিং করবে, তাতে ভোটারদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে খুব বেশি প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না।
এটাই ইনবাউন্ড মার্কেটিং। যে কোনো নির্বাচনেও এ রকম পরিকল্পনামাফিক মার্কেটিং যারা করবে, তারাই ভোটের যুদ্ধে অনেকটুকু এগিয়ে থাকবে।
লেখক: মো. ইকরাম, পরিচালক, নেক্সাস আইটি।