Ad 3

Education makes a door to bright future

University admission and others information,International Scholarships, Postgraduate Scholarships, College Scholarship, Study Abroad Financial Aid, Scholarship Search Center and Exam resources for PEC, JSC, SSC, HSC, Degree and Masters Examinees in Bangladesh with take from update sports News, Live score, statistics, Government, Private, current Job Circular take from this site

Education is a way to success in life

University admission and others information,International Scholarships, Postgraduate Scholarships, College Scholarship, Study Abroad Financial Aid, Scholarship Search Center and Exam resources for PEC, JSC, SSC, HSC, Degree and Masters Examinees in Bangladesh with take from update sports News, Live score, statistics, Government, Private, current Job Circular take from this site

Education is a best friend goes lifelong

University admission and others information,International Scholarships, Postgraduate Scholarships, College Scholarship, Study Abroad Financial Aid, Scholarship Search Center and Exam resources for PEC, JSC, SSC, HSC, Degree and Masters Examinees in Bangladesh with take from update sports News, Live score, statistics, Government, Private, current Job Circular take from this site

Education makes a person a responsible citizen

University admission and others information,International Scholarships, Postgraduate Scholarships, College Scholarship, Study Abroad Financial Aid, Scholarship Search Center and Exam resources for PEC, JSC, SSC, HSC, Degree and Masters Examinees in Bangladesh with take from update sports News, Live score, statistics, Government, Private, current Job Circular take from this site

Education is a key to the door of all the dreams

University admission and others information,International Scholarships, Postgraduate Scholarships, College Scholarship, Study Abroad Financial Aid, Scholarship Search Center and Exam resources for PEC, JSC, SSC, HSC, Degree and Masters Examinees in Bangladesh with take from update sports News, Live score, statistics, Government, Private, current Job Circular take from this site

Friday, March 18, 2022

রচনা : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

 

রচনা : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

Bangabandhu - Apps on Google Play

ভূমিকা : স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় বাংলাদেশের মানুষ ও তাদের কল্যানের জন্য ব্যয় করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সমগ্র বাংলাদেশকে সংঘবদ্ধ করতে তাঁর ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তাই আমরা বাংলাদেশীর হিসেবে জাতির পিতার জীবনী সম্পর্কে জ্ঞঅনার্জন করা অপরিহার্য।

জন্ম ও পরিচয় : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। গোপালগঞ্জ বর্তমানে একটি জেলা। তাঁর পিতার নাম শেখ লুৎফুর রহমান এবং তাঁর দাদার নাম শেখ আবদুল হামিদ। তাঁর মাতার নাম সাহেরা খাতুন এবং নানার নাম আবদুল মজিদ। তাঁর আকিকার সময় তাঁর নানা আবদুল মজিদ বঙ্গবন্ধুর নাম রেখেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান এবং বলেছিলেন এ নাম জগৎ জোড়া খ্যাত হবে। পিতা-মাতা তাকে আদর করে ‘খোকা’ বলে ডাকতেন। এবং ভাইবোন ও গ্রামবাসির নিকট তিনি ‘মিয়াভাই’ বলে পরিচিত ছিলেন। বর্তমানে ১৭ই মার্চ সারাদেশে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়।

শৈশব :  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশব সম্পর্কে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা তাঁর ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’ গ্রন্থে বলেছিলেন,

আমার আব্বার শৈশব কেটেছিল টুঙ্গিপাড়ার নদীতে ঝাঁপ দিয়ে, মেঠো পথের ধুলোবালি মেখে। বর্ষার কাদাপানিতে ভিজে।

বঙ্গবন্ধু অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বলেছিলেন,

ছোট সময়ে আমি খুব দুষ্ট প্রকৃতির ছিলাম। খেলাধুলা করতাম, গান গাইতাম এবং খুব ভাল ব্রতচারী করতে পারতাম।

শিক্ষাজীবন : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাথমিক শিক্ষার শুরু হয় নিজ গৃহে গৃহশিক্ষকদের হাত ধরে। তাঁদের কাছে বঙ্গবন্ধু আরবি, বাংলা, ইংরেজি ও অঙ্ক শিখতেন। পরবর্তীতে তিনি গিমাডাঙ্গা স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে তিনি ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছিলেন। একবার বর্ষাকালে নৌকা করে স্কুল থেকে ফেরার পথে নৌকাডুবি হলে তাঁকে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তিনি ১৯৪২ সালে এন্ট্রাস পাস করেন। পরবর্তীতে তিনি কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে [বর্তমান আজাদ মওলানা কলেজ] ভর্তি হন। সেখানে তিনি বেকার হোস্টেলে থাকতেন। ১৯৪৭ সালে তিনি ইসলামিয়া কলেজ থেকে বি.এ. পাস করেন। দেশভাগের পর তিনি ঢকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তিহন। তিনি ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের শিক্ষার্থী ছিলেন।

বিবাহ : বিবাহ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে  বলেছিলেন,

আমার যখন বিবাহ হয় তখন আমার বয়স বার তেরো বছর হতে পারে। আমি শুনলাম আমার বিবাহ হয়েছে, তখন কিছুই বুঝতাম না। রেণুর বয়স তখন বোধহয় তিন বছর হবে।

খেলাধুলা প্রিয় : বঙ্গবন্ধু একজন দক্ষ ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন, এমনকি তাঁর পিতাও ফুটবল খেলা পছন্দ করতেন। খেলাধুলা নিয়ে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা শেখ মুজিব আমার পিতা বইয়ে লিখেন -

আমার আব্বার পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলার প্রতি দারুন ঝোঁক ছিল। বিশেষ করে ফুটবল খেলা খুব পছন্দ করতেন। মধুমতি নদী পার হয়ে চিতলমারী ও মোল্লাহাট যেতেন খেলতে। এদিকে আমার দাদাও খেলতে পছন্দ করতেন।

বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত : বঙ্গবন্ধু ছোট বেলায় বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হন। এ বেপারে তিনি  অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বলেন-

১৯৩৪ সালে যখন আমি ৭ম শ্রেনীতে পড়ি তখন ভীষণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি। হঠাৎ বেরিবোরি রোগে আক্রান্ত হয়ে আমার হার্ট দুর্বল হয়ে পড়ে। আব্বা আমাকে নিয়ে কলকাতায় চিকিৎসা করাতে যান। কলকাতার বড় বড় ডাক্তার শিবপদ ভট্টাপার্য, এ.কে. রায় চৌধুরী আরও অনেককেই দেখান এবং চিকিৎসা করাতে থাকেন।

গ্লুকোমা রোগে আক্রান্ত : বঙ্গবন্ধু ছোট বেলায় চোখের গ্লুকোমা রোগে আক্রান্ত হন। এই সম্পর্কে অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তিঁনি বলেন-

১৯৩৬ সালে আবার আমার চক্ষু খারাপ হয়ে পড়ে। গ্লুকোমা নামে একটা রোগ হয়। ডাক্তারদের পরামর্শে আব্বা আবার আমাকে নিয়ে কলকাতায় রওনা হলেন চিকিৎসার জন্য। ডাক্তার সাহেব আমার চক্ষু অপরেশন করাতে বললেন। অপরেশন করা হলো। আমি ভাল হলাম। তবে কিছুদিন পড়াশুনা বন্ধ রাখতে হবে, চশমা পরতে হবে। তাই ১৯৩৬ সাল খেকেই চশমা পরছি। 

শিক্ষা বিরতি : অসুস্থার কারণে বঙ্গবন্ধু চার বছর লেখাপড়া করতে পারতে পারেন নি। এ সম্পর্কে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা তাঁর রচিত শেখ মুজিব আমার পিতা বইয়ে লিখেন -

স্কুলে পড়তে পড়তে আব্বার বেরিবেরি রোগ হয় এবং চোখ খারাপ হয়ে যায়। ফলে চার বছর লেখাপড়া বন্ধ থাকে। তিনি সুস্থ হবার পর পুনরায় স্কুলে ভর্তি হন।

মুসলিম সেবা সমিতি : বঙ্গবন্ধুর একজন স্কুল মাস্টার একটা সংগঠন গড়ে তুলেন যার সদস্যরা বাড়ি-বাড়ি ঘুরে ধান, চাল, টাকা জোগাড় করে গরিব মেধাবী ছেলেদের সাহায্য করতেন। বঙ্গবন্ধু সেই দলের অন্যতম সক্রিয় সদস্য ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বলেন -

মাস্টার সাহেব গোপালগঞ্জে একটা ‘মুসলিম সেবা সমিতি’ গঠন করেন, যার দ্বারা গরিব ছেলেদের সাহায্য করতেন। মুষ্টি ভিক্ষার চাল উঠাতেন প্রত্যেক মুসলমানের বাড়ি থেকে। প্রত্যেক রবিবার আমরা থলি নিয়ে বাড়ি বাড়ি থেকে চাউল উঠিয়ে আনতাম এবং এই চাউল বিক্রি করে তিনি গরিব ছেলেদের বই এবং পরীক্ষার অন্যান্য খরচ দিতেন।

এছাড়ও তার দানশীলতার বেপারে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা শেখ মুজিব আমার পিতা বইয়ে লিখেন -

দাদির কাছে শুনেছি আব্বার জন্য মাসে কয়েকটা ছাতা কিনতে হতো কারণ আর কিছুই নয়। কোন ছেলে গরিব,ছাতা কিনতে পারে না, দূরের পথ রোদ বৃষ্টিতে কষ্ট হবে দেখে, তাদের ছাতা দিয়ে দিতেন। এমনকি পড়ার বইও মাঝে মাঝে দিয়ে আসতেন।

প্রথম বিদ্রোহ : এ সম্পর্কে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা শেখ মুজিব আমার পিতা বইয়ে বলেন,

কৈশরেই তিনি খুব অধিকার সচেতন ছিলেন। একবার যুক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরেবাংলা গোপালগঞ্জে সফরে যান এবং স্কুল পরিদর্শন করেন। সেই সময় সাহসী কিশোর শেখ মুজিব তাঁর কাছে স্কুলঘরে বর্ষার পানি পড়ার অভিযোগ তুলে ধরেন এবং মেরামত করার অঙ্গীকার আদায় করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

রাজনীতিতে অংশগ্রহণ : এ সম্পর্কে শেখ হাসিনা তাঁর শেখ মুজিব আমার পিতা বইয়ে লিখেন -

গোপালগঞ্জ স্কুল খেকে ম্যাট্টিক পাস করে তিনি কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে পড়তে যান। তখন বেকার হোস্টেলে থাকতেন। এই সময় তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সংস্পর্শে আসেন। হলওয়ে মনুমেন্ট আন্দলনে জড়িয়ে পড়েন সক্রিয়ভাবে। এই সময় থেকেই তাঁর রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ শুরু হয়।

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম আন্দোলন : এ সম্পর্কে শেখ হাসিনা তাঁর শেখ মুজিব আমার পিতা বইয়ে লিখেন-

এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই বঙ্গবন্ধু প্রথম পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া পূরণের জন্য পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা লগ্নে।

কারা জীবন : ৭ মার্চ ২০১৭, তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জাতীয় সংসদে বলেন, বঙ্গবন্ধু সারা জীবনে মোট ৪৬৮২ দিন কারাভোগ করেন। এর মধ্যে ব্রিটিশ আমলে ৭ দিন এবং পাকিস্তান আমলে ৪৬৭৫দিন। বঙ্গবন্ধু ছাত্রাবস্থায় ১৯৩৮ সালে প্রথম কারাগারে যান।

ছাত্রলীগ গঠন : পকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও নঈমউদ্দিন আহমেদ মিলে ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ গঠন করেন।

তিঁনি অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেন-

১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারী তারিখে ফজলুল হক মুসলিম হলের এ্যাসেম্বলি হলে এক সভা ডাকা হলো,সেখানে স্থির হল একটা ছাত্র প্রতিষ্ঠান করা হবে। যার নাম হবে ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ।

আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন : ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। সাধারন সম্পাদক ছিলেন শামছুল হক এবং বঙ্গবন্ধু ছিলেন জয়েন্ট সেক্রেটারি। ১৯৫৩ সালে বঙ্গবন্ধু আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৫৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর দলটির নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। আওয়ামীলীগ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন-

শেষপর্যন্ত হুমায়ুন সাহেবের রোজ গার্ডেন বাড়িতে সম্মেলনের কাজ শুরু হয়েছিল। শুধু কর্মীরা না, অনেক রাজনৈতিক নেতাও সেই সম্মেলনে যোগদান করেন। সকলেই একমত হয়ে নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করলেন; তার নাম দেওয়া হলো, ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি, জনাব শামছুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং আমাকে করা হলো জয়েন্ট সেক্রেটারি।

ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ : পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা দখল করেই বাংলা ও বাঙালিকে পদানত রাখার পরিকল্পনা করে। প্রথমেই আঘাত হানে ভাষার ওপর। তারা উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা ঘোষণা করে। এর প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ ফজলুল হক মুসলিম হলে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠনের প্রস্তাব করেন এবং এর প্রেক্ষিতে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ১৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু আমতলায় সভাপতির হিসেবে ভাষণ প্রদান করেন। এই সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু  তাঁর রচিত অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেন-

১৬ তারিখ সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারন ছাত্রসভায় আমরা সকলেই যোগদান করালাম। হঠাৎ কে যেন আমার নাম প্রস্তাব করে বসল সভাপতির আসন গ্রহণ করার জন্য। সকলেই সমর্থন করল। বিখ্যাত আমতলায় এই আমার প্রথম সভাপতিত্ব করতে হলো।

১৯৫২ সালে বঙ্গবন্ধু জেলে থাকাকালীন অবস্থায় ভাষার জন্য অণশন শুরু করেন। পরবর্তীতে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি আবার আন্দোলন শুরু করনে।

বঙ্গবন্ধু অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন -

আমি সাধারণ সম্পাদক (আওয়ামী মুসলিম লীগের) হয়েই একটা প্রেস কনফারেন্স করলাম। তাতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে হবে, রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে এবং যারা ২১শে ফেব্রুয়ারী শহীদ হয়েছেন তাঁদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দান এবং যারা অন্যায়ভাবে জুলুম করেছে তাদের শাস্তির দাবি করলাম।

যুক্তফ্রন্ট : পকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের পর মুসলিমলীগ পকেট সংগঠনে পরিণত হলে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে শেরেবাংলা, ভাষানী ও হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দীর নেতৃত্বে ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর চারটি দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। যুক্তফ্রন্টের প্রতীক ছিল নৌকা। নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিশাল ব্যবধানে জয়ী হয়। এই নির্বাচনে প্রথমবারের মত অংশগ্রহণ করেই বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জ আসন থেকে নির্বাচিত হন। নির্বাচনের পর শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হক সরকার গঠন করেন। বঙ্গবন্ধু সর্বকনিষ্ট মন্ত্রী হিসেবে সমবায় ও কৃষিঋণ মন্ত্রণলায়ের দায়িত্ব লাভ করেন।

কারাগার থেকে কারাগারে : ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারির চারদিন পর বঙ্গবন্ধুকে নিরাপত্তা আইনে আটক করা হয়। প্রায় ১৪ মাস আটক রাখার পর মুক্তিপান তিনি। তবে আবার জেলগেইট থেকে তাঁকে আটক করা হয়। প্রায় দুই বছর করাগারে থাকেন এসময়। ১৯৬১ সালে হাইকোর্টের নির্দেশে তিনি মুক্তিপান। ১৯৬২ সালে জননিরাপত্তা আইনে আবার তাঁকে গ্রফতার করা হয়। পরবর্তীতে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন প্রকাশিত হলে বঙ্গবন্ধু এর সমালোচনা করেন এবং এর তীব্র প্রতিবাদ জানান।

ঐতিহাসিক ছয় দফা : ছয়দফা কর্মসূচি পাকিস্তানের দু অংশের মধ্যকার বৈষম্য এবং পূর্ব বাংলায় পশ্চিম পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ উপনিবেশিক শাসনের অবসানের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ ঘোষিত কর্মসূচি। তাসখন্দ চুক্তির মাধ্যমে ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের অবসানের পর পূর্ব পাকিস্তানের নিরাপত্তার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের চরম অবহেলা ও ঔদাসীন্যের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোচ্চার হন। ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী পাকিস্তানের আইয়ুব বিরোধী রাজনৈতিক দল সমূহের জতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ এতিহাসিক ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। ছয় দফা দাবির প্রথম দফা ছিল-

‘লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সংবিধান রচনা করে পাকিস্তানকে একটি ফেডারেশনে পরিণত করতে হবে, যেখানে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার থাকবে এবং প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ভোটে নির্বাচিত আইন পরিষদ সার্বভৌম হবে’

আগরতলা মামলা : পাকিস্তান সরকার ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে সেনাবাহিনীর কয়েকজন কর্মরত ও প্রাক্তন সদস্য এবং ঊর্ধ্বতন সরকারি অফিসারদের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে, তারা ভারত সরকারের সহায়তায় সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। ভারতের ত্রিপুরার আগরতলা শহরে ভারতীয় পক্ষ ও আসামি পক্ষদের মধ্যে এ ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে মামলায় উল্লেখ থাকায় একে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বলা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে এ মামলা এবং এর প্রতিক্রিয়া বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৬৮ সালের ১৯ জুন ৩৫ জনকে আসামি করে পাকিস্তান দন্ডবিধির ১২১-ক ধারা এবং ১৩১ ধারায় মামলার শুনানি শুরু হয়। মামলায় শেখ মুজিবকে ১ নম্বর আসামি করা হয় এবং ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান গং’ নামে মামলাটি পরিচালিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের তীব্র আন্দোলনের মুখে পাকিস্তান সরকার মামলাটি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।

গণঅভ্যুত্থান : ১৯৬৬ সালের ৬ দফা দাবি ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ, বাঙালির ম্যাগনাকার্টা। ১৯৬৭ সালের ১৬ জুন নির্ভিক সাংবাদিক তোফাজ্জল হোসেনের ইত্তেফাক পত্রিকা বাজেয়াপ্ত করা হয়। ২৩ জুন রবীন্দ্র সঙ্গীত প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধুকে প্রধান আসামী করে মোট ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আগরতলা মামলা করে তাদের উপর নির্যাতন করা হয়। ফলে সারা দেশে ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারী ছাত্র সমাজ ঐতিহাসিক ১১ দফা দাবি উত্থাপন করে। ৮ জানুয়ারী ৮ টি রাজনৈতিক দল নিয়ে DAC গঠিত হয়। ২০ জানুয়ারী ছাত্রনেতা আসাদ পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। আন্দোলন তীব্রতর হয়। ১৫ ফেব্রয়ারী আগরতলা মামলার আসামী সার্জেন্ট জহুরুল হককে কারাগারের ভেতরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ১৮ ফেব্রয়ারি ১৯৬৯ তারিখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. শামছুজ্জোহা কে হত্যার ফলে আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ২৪ জানুয়ারী সারা দেশে গণ আন্দোলন হয়।

বঙ্গবন্ধু উপাধিলাভ : গণআন্দোলনের মুখে সরকার ২২ ফেব্রুয়রী ১৯৬৯ তারিখে আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে নেয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ রেসকোর্সের ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমানকে গণসংবর্ধনা দেয়। সভায় তৎকালীন ছাত্রনেতা, ডাকসুর ভিপি তোফায়েল আহমেদ লাখো জনতার উপস্থিতিতে তাঁকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন।

বাংলাদেশ নামকরণ : ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামীলীগের জনসভায় বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন-

জনগনের পক্ষ থেকে আমি ঘোষণা করছি, আজ হতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম ‘পূর্ব পাকিস্তান’ এর পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ’ হবে।

৭০ এর নির্বাচন : ১৯৭০ সালের ৬ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭০ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহনের সিদ্ধান্ত নেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক ছিল নৌকা, স্লোগান ছিল ‘জয় বাংলা’ আর ঘোষণাপত্র ছিল ছয় দফা। বাংলাদেশের আনাচে কানাচে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন লাভ করে। পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টি লাভ করলেও আওয়ামীলীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয় না। এ জন্যই ১৯৭০ সালের নির্বাচনকে পাকিস্তানের মৃত্যুর বার্তাবাহক বলা হয়।

অসহযোগ আন্দোলন : ১৯৭০ সালের নির্বাচন ছিল এক ব্যক্তি এক ভোট নীতির প্রথম নির্বাচন। ৩ মার্চ ১৯৭০ সালে আ. স. ম. আবদুর রব বঙ্গবন্ধুকে ‘জাতির পিতা’ উপাধি প্রদান করেন। এই সমাবেশে বক্তৃতা কালে বঙ্গবন্ধু আসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন।

৭ই মার্চের ভাষণ : ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তারিখে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে রোজ শুক্রবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ ভাষণ প্রদান করেন। সময় বিকাল ৩ট ২০ মিনিট। শেখহাসিনা বলেন, এর ব্যাপ্তিকাল ছিল ২৩ মিনিট তবে ১৮-১৯ মিনিট রেকর্ড করা হয়। রেকর্ড করেন এ. এইচ. খন্দকার এবং চিত্র ধারণ করেন আবুল খায়ের এম.এ.নএ.। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৫ম তফসিলে জাতির পিতার এ ভাষণ সন্নিবেশিত হয়। এ ভাষণেই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন-

আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না। আমি এদেশের মানুষের অধিকার চাই।

৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু ৪ দফা দাবি তুলে ধরেন। নিচে তা উল্লেখ করা হলো-

(১) প্রথমে মার্শাল-ল উইথড্র করতে হবে।

(২) সমস্ত সামরিক বাহিনীর লোকদের ব্যারাকে ফেরত যেতে হবে।

(৩) যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তার তদন্ত করতে হবে।

(৪) জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।

১৩ নভেম্বর ২০১৭ বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের ২৬টি বাক্যের বিশ্লেষণ করে “বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ : রাজনীতির মহাকাব্য” শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গ্রন্থটি প্রকাশ করে- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। ৩০ অক্টোবর ২০১৭ ইউনেস্কো ৭ই মার্চের ভাষণকে “ওয়ার্ল্ড ডকুমেন্টারী হেরিটেজ” বা “বিশ্ব প্রামাণ্যের ঐতিহ্য” হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এ পর্যন্ত বিশ্বে মোট ৪২৭ টি নথি এতে যুক্ত হয়েছে। সম্প্রতি ইউনেস্কো ঘেষিত ৭৮টি ঐতিহাসিক দলিলের মধ্যে ৭ই মার্চের ভাষণ ৪৮ তম। ইউনেস্কোর এযাবৎ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ৪২৭টি প্রামান্য ঐতিহ্যের মধ্যে প্রথম অলিখিত ভাষণ এটি। স্বীকৃতির সময় ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ছিলেন ইরিনা বোকোভা। ব্রিটিশ ঐতিহাসিক জ্যাকব এফ ফিল্ড তার 'We Shall Fight on the Beaches: The Speeches That Inspired History' গ্রন্থের ২০১ পৃষ্ঠায় ভাষনটি যুক্ত করেন। ৭ মার্চের ভাষনকে আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসে যুদ্ধকালে দেয়া বিশ্বের অন্যতম অনুপ্রেরণাদায়ক বক্তৃতা বলা হয়। ভাষণটি এ পর্যন্ত মোট (২০১৭ পর্যন্ত ) ১২টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে।

স্বাধীনতার ঘোষনা : ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ ঢাকাসহ সারাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীরা নিরীহ মানুষের উপর অমানুষিক অত্যাচার শুরু করে। শুধু ঢাকাতেই ৫০ হাজারের বেশী মানুষ হত্যা করে তারা। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার আগে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ২৬শে মার্চ চট্রগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সর্বপ্রথম এম. এ. হান্নান নিজের কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা পাঠ করেন।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থের ভূমিকাতে উল্লেখ করেন-

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে স্বাধীনতার ঘোষনা দেওয়ার পরপরই আমাদের ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর সড়কের পাকিস্তনি সেনাবাহিনী হানা দেয় এবং আমার পিতাকে গ্রফতার করে নিয়ে যায়।

মুজিবনগর সরকার : ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল কুষ্টিয়ার মহেরপুরের বৈদ্যনাথ তলার ভবেরপাড়া গুামের আম্রকাননে মুজবনগর সরকার গঠিত হয়। ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ দেশ-বিদেশের ১২৭ জন সাংবাদিকের সামনে মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করে। মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তবে বঙ্গবন্ধু জেলে থাকার কারণে সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দ্বায়িত্ব পালন করেন। মুজিব নগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাজ উদ্দিন আহমদ। যুদ্ধ পরিচালনার সুবিধার্থে মুজিব নগর সরকার সমগ্র বাংলাদেশকে ১১ টি সেক্টরে ভাগ করে।

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি : দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর ৩০ লক্ষ্য শহীদ ও দুই লক্ষ্য মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমারা স্বাধীনতা লাভ করি। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ৯৩ হাজার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রেসকোর্সের ময়দানে আত্মসমর্পন করে। প্রতিষ্ঠিত হয় জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ। আর এই স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ছিলেন বঙ্গপন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও সংবিধান রচনা : ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা লাভের পর ২২ ডিসেম্বর মুজিবনগর সরকার ঢাকায় এসে শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করে। ১০ ডিসেম্বর ১৯৭২ সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধান রচনায় মনোনিবেশ করেন। ১১ জানুয়ারী ১৯৭২ স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘অস্থায়ী সংবিধান’ আদেশ জারি করেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ গণপরিষদ আদেশ জারি করেন। ১০ এপ্রিল ১৯৭২ গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন বসে। ১১ এপ্রিল ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি করে ৩৪ সদস্য বিশিষ্ট সংবিধান কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির একমাত্র বিরোধী দলীয় সদস্য ছিল সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এবং একমাত্র মহিলা সদস্য ছিল রাজিয়া বানু। খসড়া কমিটি ৪৭টি বৈঠকের মাধ্যমে খসড়া চুড়ান্ত করে। ১২ অক্টোবর ১৯৭২ সালে খসড়া সংবিধান গণ পরিষদে উত্থাপন করা হয় এবং ৪ নভেম্বর ১৯৭২ (১৮ কার্তিক ১৩৭৯ বঙ্গাব্দ) তা গৃহীত হয়। প্রতি বছর ৪ নভেম্বর সংবিধান দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৫ ডিসেম্বর সংবিধানে স্বাক্ষর করা হয় এবং ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২ থেকে তা কার্য়কর হয়। বাংলাদেশের সংবিধানে মোট ১টি প্রস্তাবনা, ১১টি ভাগ, ১৫৩টি অনুচ্ছেদ এবং ৭টি তফসিল রয়েছে। রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি ৪টি। এ পর্যন্ত সংবিধানে মোট ১৬ বার সংশোধনী আনা হয়েছে। ৫ম তফসিলে জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণ, ৬ষ্ঠ তফসিলে স্বাধীনতার ঘোষণা এবং ৭ম তফসিলে মুজিবনগন সরকার কর্তৃক জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র সন্নিবেশিত হয়েছে।

ফিদেল কাস্ত্রের সাক্ষাত : ১৯৭৩ সালে আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের শীর্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাতের পর কিউবার মহান বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন-

আমি হিমালয় দেখিনি কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব এবং সাহসিকতায় তিনিই হিমালয়।

সংবিধান সংশোধন ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার : ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর রেসকোর্স ময়দানে এক ঘোষণার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার ঘোষনা দেন। Bangladesh Collaborators (Special tribunals) Order, 1972 নামে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য প্রথম আইন পাস হয়। পরবর্তীতে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর আমলে সংবিধান মোট ৪ বার সংশোধন করা হয়। যুদ্ধবন্দীদের বিচার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে প্রথম সংশোধনী আনা হয়। রাষ্ট্রপতির পদ সৃষ্টি, মেয়াদ ও জরুরী অবস্থার বিধান রেখ ২য় সংশোধনী আনা হয়। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত চুক্তির আলোকে ৩য় সংশোধনী আনা হয় এবং ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারী সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়।

অসমাপ্ত আত্মজীবনী : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লিখিত আত্মজীবনী মূলক প্রথম গ্রন্থ ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’। ২০১২ সালের জুন মাসে বইটি ‘দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড’ থেকে প্রকাশিত হয়। বইটির প্রকাশক মহিউদ্দিন আহমেদ, প্রচ্ছদ সমর মজুমদার এবং গ্রন্থস্বত্ব ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফকরুল আলম স্যার ‘The Unfinished Memoirs’ নামে বইটির ইংরেজি অনুবাদ করেন। ২০১৭ সালের মে মাস পর্যন্ত বইটি মোট ৮টি ভাষায় প্রকাশিত হয়। সর্বশেষ হিন্দি ভাষায় অনুদিত হয়। হিন্দি ভাষায় বইটি অনুবাদ করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রাণলায়। ১৯৬৭-১৯৬৯ সালে কারাগারে থাকাকালীন বঙ্গবন্ধু বইটি লেখেন। বইটি লিখতে বঙ্গবন্ধুকে প্রেরণা দেন তার স্ত্রী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৪ সালে ফজলুল হক মনির ড্রয়ার খেকে এর মূল পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করেন। ২০০৭ সালের ৭ আগস্ট সাব জেলে থাকাকালীন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বইটির ভূমিকা লেখেন। বইটিতে বঙ্গবন্ধু তাঁর পূর্ব পুরুষদের ইতিহাস সহ বাল্যকাল থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত নিজের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছেন। প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে চট্টগ্রামর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষা বর্ষের পাঠ্যসূচীতে বইটির ইংরেজি অনুবাদ The Unfinished Memoirs অন্তর্ভূক্ত করা হয়।

কারাগারের রোজনামচা : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত আত্মজীবনী মূলক দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘কারাগারের রোজনামচা’। ২০০৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রন্থটির পাণ্ডুলিপি খুঁজে পান। বইটি ২০১৭ সালের ১৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ৯৮ তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসে ঐতিহাসিক বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়। পাণ্ডুলিপি আনুযায়ী বঙ্গবন্ধু এর নাম দিয়েছিলেন “থালাবাটি কম্বল/জেলখানার সম্বল”। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা বইটির নামকরণ করেন ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থটিতে ১৯৬৬-১৯৬৮ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর কারাবাসের চিত্র তুলেধরেছেন। গ্রন্থটির প্রচ্ছদ শিল্পী তারিক সুজাত। বঙ্গবন্ধু এই গ্রন্থটিতে তাঁর জেল জীবনের পাশাপাশি জেল যন্ত্রনা, কয়েদীদের অজানা কথা, অপরাধীদের কথা, কেন তারা এই অপরাধে লিপ্তহলো তার কথা, তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আওয়ামীলীগ নেতাদের দুঃখ দুর্দশা, সংবাদ মাধ্যমের অবস্থা, শাসকগোষ্ঠীর নির্মম নির্যাতন প্রভৃতি তুলে ধরেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড .ফকরুল আলম স্যার বইটির ইংরেজি অনুবাদ করেন এবং তা বাংলা একাডেমী থেকে ‘প্রিজন ডায়েরী’ নামে প্রকাশিত হয়। বইটির ভূমিকা লিখেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। বইটির গ্রন্থস্বত্ব হচ্ছে ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’

ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড : ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। এর মধ্য দিয়ে বাঙালির ইতিহাসে এক কালিমালিপ্ত অধ্যায় সংযোজিত হয়েছিল। দুই জন পুলিশ কর্মকর্তা সহ এইদিন ঘাতকরা মোট ১৮ জনকে হত্যা করে। তাদের হাত থেকে বঙ্গবন্ধুর শিশু পুত্র শেখ রাসেলও রেহাই পায়নি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের পেছনে ছিল খন্দকার মোশতাক, মেজর ডালিম সহ কতিপয় বিপথগামী সদস্যের হাত। যাদের জন্য বঙ্গবন্ধু সারা জীবন লড়াই করেছেন তাদেরই কিছু বিপথগামী ক্ষমতালোভীর হাতেই রচিত হয় বাংলার ইতিহাসের কলঙ্কময় দিন। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতের এই ১৫ই আগস্ট দিনটি জাতি শোকদিবস হিসেবে পালন করে থাকে।

বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার : বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর দায়মুক্তি আইন বাতিল করে আওয়ামী লীগ সরকার এবং ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী আ ফ ম মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মামলা করেন। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল তৃতীয় বিচারক মোহাম্মদ ফজলুল করিম ২৫ দিন শুনানীর পর অভিযুক্ত ১২ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ নিশ্চিত করেন। ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর থেকে ২০০৯ সালের ২৪ আগস্ট পর্যন্ত বাদী-বিবাদীর আপিলের প্রেক্ষিতে চার দফায় রায় প্রকাশ হয়, সর্বশেষ আপিল বিভাগ ২০১০ সালের ৫ অক্টোবর থেকে টানা ২৯ কর্মদিবস শুনানি করার পর ১৯ নভেম্বর চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন। এতে ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

শেষকথা : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জীবনী শীর্ষক উপরিউক্ত দীর্ঘ আলোচনার প্রেক্ষিতে আলোচনার শেষপ্রান্তে এসে আমরা বলতে পারি যে, ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে বাংলার শেষ নবাব সিরাজুদ্দৌলার সাথে বেইমানি করেছিল তাঁরই সেনাপতি মীল জাফর ক্ষমতার লোভে, নবাব হওয়ার আশায়। ১৯৭৫ সালেও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল। স্বাধীন বাংলাদেশর প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তাঁরই মন্ত্রীপরিষদের সদস্য খন্দকার মোশতাক। ইতিহাস স্বাক্ষ দেয় যে ক্ষমতা লোভীরা স্থায়ী হতে পারেনি মীর জাফর তিন মাসও ক্ষতায় ছিল না। তেমনি ভাবে খন্দকার মোশতাকও তার রাষ্ট্রপতি পদ তিন মাসও রাখতে পারেনি। বাংলার বুকে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে এবং বাকীদেরও হবে ইনশাআল্লাহ।

 

রচনা : বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ

 

ভূমিকা : বিশ্ব সম্মোহনীদের নামের তালিকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বাগ্রে ও স্বগৌরবে অবস্থান করছেন। সম্মোহনীতা বলতে অত্যাকর্ষণজনীত মহিনী শক্তিকে বুঝায়। আর এই মহিনী শক্তি যুগে যুগে কোনো না কোনো ব্যাক্তিত্বে প্রকাশ পায়। আর এসব ব্যাক্তিত্বের আঙ্গুলের ইশারায় পৃথিবীতে মহা বিপ্লব সংঘটিত হয়। ফলে সমগ্র মানব জাতির মুক্তি আসে। তাই বলা যায় বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একে অপরের জন্যই সৃষ্টি।

জন্ম ও পারিবারিক পরিচয় : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা সায়েরা খাতুন। দুই ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি ছিলেনপিতা মাতার তৃতীয় সন্তান। সবাই আদর করে খোকা বলে ডাকতেন। 

শিক্ষা জীবন : ১৯২৭ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বয়স ৭ বছর তখন তাকে স্থানীয় গিমাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। তাপর ৯ বছর বয়সে ১৯২৯ সালে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি করা হয়। পরে তিনি মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু ১৯৩৪ সালে তিনি বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হলে ৪ বছর তাঁর পড়ালেখা বন্ধ থাকে। ১৯৪২ সালে তিনি মিশনারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। পরে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে ১৯৪৪ সালে আইএ পাশ করেন। এছাড়া কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাশ করেন। পরে তিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। এখানে থাকাকালীন সময়ে চতুর্থ ও কর্মচারীদের আন্দোলনে যোগদানের কারণে তাঁর ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়। ফলে তাঁর ছাত্রজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। 

পাক রাজনৈতিক জীবন : বিশ্ব রাজনীতির অবিসংবাদিত নেতা বাংলা ও বাঙালি জাতির অমর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজনৈতিক জীবন শুরু করার আগে থেকেই গ্রামের মানুষের দুঃখ দেখে নিজের ভিতর এক প্রকার কষ্ট অনুভব করতেন। ক্ষুধার্তদের মুখে নিজের খাবার তুলে দিয়েছেন। শীত আসলেই শীতার্তদের নিজের চাদর দিয়ে সাহায্য করতেন। তখন থেকেই তিনি ন্যায়ের কথা বলতেন। অন্যায় বা অন্যায়কারী যত শক্তিশালী হোকনা কেন তার প্রতিবাদ করতে তিনি বিন্দু মাত্র ভয় পেতেন না। তাঁর একটাই স্বপ্ন ছিল বাঙালি জাতিকে মুক্ত করা। 

রাজনৈতিক জীবনের শুরু ও বিশেষ বিশেষ অবদান : ছাত্র অবস্থাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের সুত্রপাত ঘটে। আর তার রাজনৈতিক জীবনে রয়েছে বিশেষ বিশেষ অবদান। 

ভাষা আন্দোলন : ১৯৪৮ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন আইন পরিষদে ঘোষণা করে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা হবে উর্দু। ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানান। সে জন্য তাকে ১১ই মার্চ গ্রেফতার করা হয়। তারপর ১৯৫২ সালের ২৬শে জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দিন আবারও ঘোষণা করে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। ২১শে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্রজনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকার রাজপথে আন্দোলনে নামলে পুলিশ গুলি চালায়। ফলে সালাম, জব্বার, রফিক, বরকত, শফিয়ুর সহ আরও অনেকে শহীদ হন। শেখ মুজিবুর রহমান জেলে বসে সেই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তারপর ২৬ ফেব্রুয়ারি জেলখানা থেকে তিনি মুক্তি লাভ করেন। 

৬ দফা দাবি : ১৯৬৬ সালের ৩ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি দিয়ে ও অন্যান্য ৩৫ জন সেনা ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আগরতলা মামলা দায়ের করে। পরে ১৯ জুন আগরতলা মামলার বিচারকার্য ঢাকা সেনানিবাসে করা হয়। 

গণঅভ্যুত্থান : ১৯৬৯ সালের ৫ জানুয়ারি ৬ দফাসহ ১১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে `কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। এই পরিষদ আগরতলা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তুলে। এ পর্যায়ে এ আন্দোলন গণ অভ্যুত্থানের রূপ নিলে ২২ ফেব্রুয়ারি সরকার আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিনা শর্তে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। পরের দিন ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। 

নির্বাচনী বিজয় : ১৯৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পূর্ব বাংলার জাতীয় পরিষদের ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৬০টি এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টি আসনে জয়লাভ করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। 

মুক্তিযুদ্ধ : ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও পাকিস্তান সরকার নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে নানা তালবাহানা শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ রেসকোর্সময়দানে সর্ববৃহৎ জনসভায় দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন, 

২০১৭ সালে তাঁর এই ১৮ মিনিটের ভাষণকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের সংস্কৃতি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চ লাইট নামে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হামলা চালায়। এমতাবস্থায় ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এরপর তাকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। শুরু হয় মুক্তি সংগ্রাম। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। পরে পাকিস্তান সরকার বন্ধুবন্ধুকে মুক্ত করে দেশে পাঠিয়ে দেয়। 

জাতি গঠনে অন্যতম অবদান : যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের দায়িত্ব ভার গ্রহণের পর বঙ্গবন্ধুর সামনে জাতি গঠনের আরেক যুদ্ধ এসে দাঁড়ায়। তিনি ১৬৫০০০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকরি সরকারিকরণ করেন। এছাড়া তিনি প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য চাল, ডাল ও রেশনের ব্যবস্থা করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের পূনর্বাসনের জন্য মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করেন। ২৫ বিঘা জমির খাজনা মওকুফ করেন। সমস্ত বিধ্বস্ত কলকারখানা, রাস্তা, ব্রিজ ইত্যাদির পূর্ণনিমান ও মেরামত করেন। শিল্পকলা একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেন। কাজী নজরুল ইসলামকে দেশে নিয়ে এসে তাঁর চিকিৎসার জন্য বোর্ড গঠন করেন। পবিত্র ইসলাম ধর্মের সেবায় তিনি ‍যুগান্তকারি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। 

ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড : ১৫ই আগস্টের সেই ভয়াবহ কালরাত। পবিত্র শুক্রবার। রাতের নিস্তব্ধ নিরবতা ভেঙ্গে মসজিদে মসজিদে ফজরের আজান ধ্বনিত হচ্ছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সেনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২নং বাড়িতে আক্রমণ চালিয়ে ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডটি ঘটায়। সেই দিন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছাড়া ঐ বাড়িতে থাকা সকলে শহীদ হন। 

উপসংহার : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিদেহী আত্মার প্রতি আমাদের অঙ্গীকার হচ্ছে, 

সেনার বাংলা গড়বো পিতা 

পিতা কথা দিলাম তোমায়, 

চেতনা থেকে বিচ্যুত হব না 

গ্রেনেড তবা বোমায়।

রচনা : বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ

রচনা : মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু

 .

রচনা : মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু 

 

ভূমিকা : হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালির শ্রেষ্ঠতম অর্জন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। আর এ স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে যার নাম চিরস্মরণীয় হয়ে আছে, তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সংগ্রাম ও অবদানে নিজ নিজ জাতির মুক্তিদাতা হিসেবে মানুষদের মধ্যে আছেন আমোরিকার জর্জ ওয়াশিংটন, তরস্কের কামাল আতাতুর্ক, ভারতের মহাত্মা গান্ধী, দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন মেন্ডেলা, কিউবার ফিদেল কাস্ত্রো প্রমুখ নেতা। আর আছে বাংলাদেশের শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা। দীর্ঘ সংগ্রাম ও সাধনার মধ্য দিয়ে তিনি ইতিহাসের বরপুত্র হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছেন। তার জীবনাদর্শে আমরা সংগ্রামী চেতনা ও কর্মনিষ্ঠার পরিচয় পাই। 

জন্ম : স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ বর্তমান গোপালগঞ্জ (তৎকালীন ফরিদপুর) জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শেখ লুৎফর রহমান, মাতা সায়রা খাতুন। দুই ভাই, চার বোনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন পিতা-মাতার তৃতীয় সন্তান। 

শৈশবকাল : পারিবারিক আনন্দঘন পরিবেশে বঙ্গবন্ধুর শৈশব-কৈশোরের দিনগুলো কাটে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। ছোটবেলা থেকে শেখ মুজিবুর রহমান খুব চটপটে স্বভাবের ছিলেন। বাড়ির সবাই এজন্য তাকে খোকা নামে ডাকত। দেখতে তিনি ছিলেন ছিপছিপে কিন্তু তার ছিল অদম্য প্রাণশক্তি। নদীতে-খালে-বিলে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরিয়ে সবাইকে মাতিয়ে তুলতেন। খেলাধুলায়ও বেশ ভালো ছিলেন তিনি। স্কুলের ফুটবল দলেও তার পাকা স্থান ছিল। ছোটবেলা থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে দরিদ্র বঞ্চিতদের জন্য ভালোবাসার প্রকাশ দেখা যায়। একবার নিজের বাড়ির গোলার ধান গ্রামের গরিব চাষিদের মাঝে বিলিয়ে দেন। পিতা শেখ লুৎফর রহমান এর কারণ জিজ্ঞেস করলে, উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘এবার চাষিদের জমির ধান সব বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে। আকালে পড়েছে কৃষক। আমাদের মতো ওদের পেটেও ক্ষুধা আছে। ওরাও আমাদের মতো বাঁচতে চায়।’ বাবা ছেলের এই সৎ সাহস ও মহানুভবতা দেখে বেশ খুশি হলেন। 

বিদ্যালয়ের ওপরের ক্লাসে এসে তার প্রতিবাদী চেতনার পরিচয়ও মেলে। একবার অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরেবাংলা এ.কে. ফজলুল হক ও মন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল পরিদর্শনে আসেন। তাদের আগমনে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মানপত্র পাঠ করেন। আরো অনেকে শেরেবাংলার প্রশংসা করে বক্তৃতা করেন কিন্তু কেউ স্কুল এবং ছাত্রদের সমস্যার কথা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরলেন না। একপর্যায়ে সংবর্ধনা সভা শেষ করে, যখন তাঁরা ফিরে যাচ্ছিলেন, তখনই তাদের পথরোধ করে দাঁড়ালেন শেখ মুজিবুর রহমান। সব ছাত্রদের পক্ষ থেকে স্কুলের দাবি-দাওয়া অর্থাৎ জরার্জীণ ছাত্রাবাস, পাঠাগারে বই নেই, ব্যায়ামাগার নেই, খেলাধুলার ব্যবস্থা নেই ইত্যাদি সমস্যার কথা তিনি তাঁদের সামনে তুলে ধরেন। শেরেবাংলা কিশোর শেখ মুজিবুর মহমানের সাহস ও স্পষ্ট বক্তব্য আর জনহিতৈষী মনোভাবের পরিচয় দেখে খুশি হন এবং সাথে সাথে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তাদের সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দেন। ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন সুস্পষ্ট প্রতিবাদী ব্যক্তিত্বের অধিকারী। 

ছাত্রজীবন : সাত বছর বয়সে বঙ্গবন্ধুর ছাত্রজীবন শুরু হয় গোপালগঞ্জের গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে। প্রাধমিক শিক্ষা শেষ করার পর তিনি গোপালগঞ্জ মিশন হাই স্কুলে ভর্তি হন এবং এই স্কুল থেকে ১৯৪২ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৪২ সালেই তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৪৪ সালে আই.এ. এবং ১৯৪৬ সালে বি.এ. পাস করেন। ১৯৪৬ সালে ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। ছাত্র শেখ মুজিবুর রহমান ক্রমেই নেতা শেখ মুজিবুর রহমানে বিকশিত হতে থাকেন। ১৯৪৭-এ দেশ বিভাগের পর তিনি আইন পড়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনি অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সবার সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ছাত্রছাত্রীদের অধিকার আন্দোলন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাবি আদায়ের আন্দোলনেও তিনি সব সময় সক্রিয় ছিলেন।

রাজনৈতিক জীবন : ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধু রাজনীতি ও দেশব্রতে যুক্ত হন। তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু ১৯৪০ সালের দিকে। তখন তিনি নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের কাউন্সিলর এবং গোপালগঞ্জ মহকুমা মুসলিম লীগের সম্পাদক ছিলেন। ১৯৪৮ সালে গঠিত পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের তিনি ছিলেন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৪৮ সালে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হলে এর সঙ্গে তিনি যুক্ত হন। এ বছর ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে হরতাল পালনের সময় তিনি গ্রেফতার ও কারারুদ্ধ হন। ‘বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে সুপারিশ করে পূর্ববঙ্গ পরিষদে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে’- এ মর্মে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে পূর্ববঙ্গের নাজিমুদ্দিন সরকার চুক্তিবদ্ধ হলে তিনি মুক্তি লাভ করেন। ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হলে তিনি যুগ্ম সম্পাদকের পদ লাভ করেন এবং ১৯৫৩ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভার মন্ত্রিত্ব লাভ করেন। এ দেশের মানুষের অধিকার আদায় এবং শোষণ বঞ্চনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান বহুবার গ্রেফতার ও কারারুদ্ধ হন। 

১৯৬৬ সালে তিনি পেশ করেন বাঙালি জাতির ঐতিহাসিক মুক্তির সনদ ছয়-দফা। এ সময় নিরাপত্তা আইনে তিনি বার বার গ্রেফতার হন। এরকমই চলে, পর্যায়ক্রমিক গ্রেফতার। তিনি কারারুদ্ধ জীবনযাপন করতে থাকেন। তাকে প্রধান আসামি করে দায়ের করা হয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। তবে জনগণের আন্দোলনের মুখে আইয়ুব খান ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এ মামলা প্রত্যাহার করে নেন। ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত রেসকোর্স ময়দানে লক্ষ মানুষের এক নাগরিক সংবর্ধনায় তাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১৯৭০ সালে জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। উল্লেখ্য যে, এই নির্বাচনে পাকিস্তানের সর্বমোট সংসদীয় আসন সংখ্যা ছিল ৩০০টি। জনসংখ্যার ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আসন বরাদ্দ হয় ১৬৯টি। তার মধ্যে বঙ্গবন্ধু এবং তার দল ১৬৭টি আসনে জয়লাভ করে পাকিস্তান কেন্দ্রীয় পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন এবং পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে ৩১০টি আসনের মধ্যে ২৯৮টি আসনে জয়লাভ করে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গণমানুষের ম্যান্ডেট লাভ করেন। কিন্তু সরকার গঠনের সুযোগ না দিয়ে প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেন। এর প্রতিবাদে শেখ মুজিবুর রহমান ৩ মার্চ অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। 

৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ও স্বাধীনতা ঘোষণা : ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ থেকে ২৫-এ মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সারা বাংলায় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন পরিচালিত হয়। এর মধ্যে ৭ মার্চ তৎকালীন ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যান) প্রায় দশ লাভ লোকের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। ঐতিহাসিক ঐ ভাষণে তিনি বাঙালির মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত স্বাধীনতা সংগ্রামের আহ্বান জানান। তিনি দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন- 

এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, 

এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। 

একপর্যায় ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু করে ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড। সেই রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। গ্রেপ্তারের পূর্বে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তাকে রাষ্ট্রপতি করে গঠিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধশেষে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূর্য উদিত হয়। 

দেশে প্রত্যাবর্তন : ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন। ১২ জানুয়ারি তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং যুদ্ধবিধস্ত দেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। 

শেখ মুজিবের অবদান বা শাসনামল : স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার সংগ্রাম সবই পরিচালনা করেছেন শেখ মুজিবুর রহমান অসীম দক্ষতা ও যোগ্যতায়। তার ছিল মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার মতো অসাধারণ বজ্রকণ্ঠ। অনলবর্ষী বক্তা হিসেবে তার ছিল বিপুল খ্যাতি। অকৃত্রিম দেশপ্রেম, সাধারণ জনগণের প্রতি গভীর ভালোবাসা, অমায়িক ব্যক্তিত্ব, উপস্থিত বুদ্ধি তাকে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত করেছে। তার হাত ধরেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে তার অতুলনীয় অবদানের জন্য জাতি তাকে ‘জাতির জনক’ হিসেবে বরণ করে নিয়েছে। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর খুব বেশিদিন ক্ষমতায় থাকার সুযোগ না পেলেও, যতটুকু সময় ক্ষমতায় ছিলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি ক্ষমতা লাভের পর কিছুদিনের মধ্যে ভারতীয় বাহিনীর দেশত্যাগ করা এবং মুক্তিবাহিনীর অস্ত্রসমর্পণ করায় তার ভূমিকাই অগ্রহণ্য। বিশ্বের ১০৪টি দেশ স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বাীকৃতি প্রদান করে। বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ, জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন ও ইসলামি সম্মেলন সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে বঙ্গবন্ধুর আমলে। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকর হয়। তাঁর সরকারের সময় ব্যাংক, বিমাসহ শিল্পকারখানা জাতীয়করণ করা হয়। ১৯৭৪ সালে তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রথম বাংলায় বক্তৃতা করেন। ১৯৭২ সালে তিনি বিশ্ব শান্তি পরিষদের প্রদত্ত ‘জুলিওকুরী’ পদক লাভ করেন। বাংলাদেশের মানুষের অীধকার আদায়ের জন্য তার আজীবন সংগ্রামের যে সাফল্য স্বাধীনতা লাভের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছিল তা জাতির জীবনে এক নবদিগন্তের সূচনা করেছে। 

মৃত্যু : বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করলেও স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকের দল তার সাফল্য ও বাঙালির উত্থানকে মেনে নিতে পারেনি। তাই আবার শুরু হয় ষড়যন্ত্র। দেশ যখন সকল বাধা দূর করে এগিয়ে যাচ্ছিল তখন তিনি দেশীয় ষড়যন্ত্রকারী ও আন্তর্জাতিক চক্রের শিকারে পরিণত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাহিনীর তৎকালীন কিছু বিপথগামী সদস্যের হাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। 

উপসংহার : বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে একটি অনন্য নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি এবং স্বাধীন বাংলাদেশের জাতির জনক। তার দূরদর্শী, বিচক্ষণ এবং সঠিক নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। তিনি সব সময় জাতির কল্যাণেই কাজ করে গেছেন। সমস্ত জাতিকে তিনি মুক্তি ও স্বাধীনতার চেতনায় ঐক্যবদ্ধ ও উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। তার আত্মত্যাগ জাতিকে মহান মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। তাই আজও তিনি দেশপ্রেমিক প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে চির অম্লান হয়ে রয়েছেন। কবি অন্নদাশংকরের ভাষায় বলতে হয়- 

‘যতকাল রবে পদ্মা-মেঘনা-গৌরী-যমুনা বহমান 

ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।’

 

শেখ রাসেল আমাদের বন্ধু রচনা

 

শেখ রাসেল আমাদের বন্ধু রচনা

শেখ রাসেল আমাদের বন্ধু রচনা 

বাঙালি জাতি যুগে যুগে অসংখ্য মহান ব্যক্তিত্বকে জন্ম দিয়েছে। পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় আগে বাঙালি জাতির মধ্যে আবির্ভাব ঘটেছিল এমনই এক ক্ষণজন্মা প্রতিভাবান শিশুর।

তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেল। মাত্র ১১ বছর বয়সে ‘৭৫ এর সেনা অভ্যুত্থানে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সঙ্গে তাকেও হত্যা করা হয়। কিন্তু জীবনের এই স্বল্প কয়েকটি দিনে রাসেল হয়ে উঠেছেন সমগ্র বাঙালি জাতির পরম বন্ধু স্বরূপ। তাঁর স্মৃতিচারণার উদ্দেশ্য নিয়েই আজ আমাদের এই প্রতিবেদনটির উপস্থাপনা।

ভূমিকা:

বাঙালি জাতির অন্দরমহল থেকে যুগে যুগে আবির্ভাব ঘটেছে অসংখ্য মহান ব্যক্তিত্বের। তাদের কাউকে বা আমরা যথাযথ সম্মান দিয়ে চিরকাল মনে রেখেছি, আবার অনেকেই হারিয়ে গেছেন বিস্তৃতির অতল গহবরে। তবে বাঙালি জাতি বর্তমানে যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, তার পেছনে কিছু না কিছু অবদান রয়েছে সেই সকল ব্যক্তিদেরই।

তারা প্রত্যেকেই হয় তাদের জীবন দিয়ে কিংবা তাদের কর্ম দিয়ে বাঙালি জাতিকে যুগিয়ে গিয়েছেন মাথা তুলে দাঁড়ানোর রসদ। আমাদের দেশে বাঙালি জাতির প্রধান নেতা বললেই যে মানুষটির নাম সর্বপ্রথম মাথায় আসে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সেনা অভ্যুত্থানে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর নির্মম ও করুণ পরিণতির কথা আমরা সকলেই জানি।

স্বাধীনতা দিবসে স্মরণ করি তার বীর পুত্র শেখ কামাল এবং শেখ জামালকে। তবে প্রায়শই যাকে আমরা ভুলে যাই তিনি হলেন ওই একই পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য, বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল। মাত্র ১১ বছর বয়সে নির্মম মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া রাসেল হয়তো তার কর্মের দ্বারা বাঙালি জাতির ইতিহাস ও উত্থানে দাগ কেটে রেখে যেতে পারেনি, তবে তার কয়েক বৎসরের জীবন বাঙালি জাতির ইতিহাসকে এতই প্রভাবিত করেছে যে কখন তিনি বঙ্গবন্ধু সর্বকনিষ্ঠ পুত্রের সিংহাসন থেকে নেমে এসে আমাদের বন্ধু হয়ে উঠেছেন, তা আমরা বুঝতেই পারিনি। 

শেখ রাসেলের জন্ম:

শেখ রাসেলের জন্মের ইতিহাস বড়ই সুন্দর। ১৯৬৪ সালের অক্টোবর মাসের ১৮ তারিখ। দেশ তখন ভরা হেমন্তের গন্ধে আকুল হয়ে আছে। গ্রাম্য সভ্যতা ভিত্তিক আমাদের দেশের ঘরে ঘরে তখন নতুন ফসল তোলার আনন্দ। এমনই আনন্দের দিনে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাসায় জন্ম গ্রহণ করলেন শেখ রাসেল। তার জন্ম হয়েছিল বড় আপা শেখ হাসিনার ঘরে। সমগ্র বাড়ি জুড়ে সেদিন আনন্দের জোয়ার। জন্মের কিছুক্ষন পর শেখ হাসিনা এসে ওড়না দিয়ে তার ভেজা মাথা পরিষ্কার করে দেন। জন্মের সময় শেখ রাসেল চেহারায় ছিলেন স্বাস্থ্যবান। এ যেন শুধু বঙ্গবন্ধুর পরিবারেরই আনন্দ নয়, সমগ্র জাতির আনন্দ।  

নামকরণ:

শেখ রাসেলের নামকরণের পেছনেও এক সুন্দর কাহিনী রয়েছে। বঙ্গবন্ধু বরাবরই ছিলেন বিশ্বশান্তি ও সহাবস্থানের পক্ষপাতী এবং যুদ্ধের ঘোর বিরোধী। এই সূত্র তিনি বিখ্যাত নোবেল বিজয়ী দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের একজন গুণমুগ্ধ ভক্ত ছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ করতে হয় বার্ট্রান্ড রাসেল নোবেলবিজয়ী দার্শনিক কিংবা সমাজবিজ্ঞানীই ছিলেন না, ছিলেন আন্তর্জাতিক যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলনের একজন বড় মাপের নেতাও।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সমগ্র পৃথিবী যখন সম্ভাব্য একটি পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কায় সন্ত্রস্ত হয়ে আছে, তখন যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ হয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন বার্টান্ড রাসেল। এমনই মহান ব্যক্তির ব্যক্তিত্বে অনুপ্রাণিত হয়ে বঙ্গবন্ধু তার কনিষ্ঠ পুত্রের নাম রাখেন শেখ রাসেল। 

ছেলেবেলা:

শেখ রাসেলের ছেলেবেলা দেশের সমকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতির মতোই বর্ণময়। জন্মের পর খুব বেশি দিন তিনি বাবার সান্নিধ্য পাননি। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে কিছুদিনের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। প্রথমে ঢাকায় থাকলেও পরে পাকিস্থানে তাকে স্থানান্তরিত করা হয়।

শোনা যায় বড় আপা শেখ হাসিনার সঙ্গে কারাগারে বঙ্গবন্ধুকে দেখতে গিয়ে মাত্র দু বছর বয়সের রাসেল তার আপাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, সে বঙ্গবন্ধুকে বাবা বলে ডাকতে পারে কিনা। সামান্য কিছুদিনের জীবনের বেশিরভাগ সময়টাই রাসেল কাটিয়েছিলেন তার মা এবং বোনদের কাছে। তার পড়াশোনা শুরু হয়েছিল ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল ও কলেজে। ১১ বছর বয়সে যখন তার মৃত্যু হয় তখন তিনি সেখানকারই চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন।

নির্মম হত্যাকাণ্ড:

১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট এর সেই অভিশপ্ত রাতের সঙ্গে পরিচিতি আমাদের সকলেরই রয়েছে। সেই রাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নির্মম পরিণতির কথা আমরা সকলেই কম বেশি জানি। একদল তরুণ সেনা কর্মকর্তা সেই দিন রাতে শেখ মুজিবের ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসভবন ট্যাংক দিয়ে গিলে ফেলেন। সেইদিন প্রত্যুষে বঙ্গবন্ধু, এবং ব্যক্তিগত কর্মচারীদের সাথে শেখ রাসেলকেও হত্যা করা হয়।

শেখ মুজিবের ব্যক্তিগত কর্মচারী মহিতুল ইসলামের কথা অনুযায়ী, রাসেল দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরেন, জানতে চান সেনারা তাকেও মারবে কিনা। এমতাবস্থায় একজন সেনা কর্মকর্তা মহিতুলকে এসে মারলে রাসেল তাকে ছেড়ে দেয়। সে কাঁদতে থাকে থাকে মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সেই সময় একজন ঘাতক রাসেলকে ভেতরের ঘরে নিয়ে গিয়ে ব্রাশ ফায়ারের মাধ্যমে হত্যা করে। 

কেন শেখ রাসেল আমাদের বন্ধু?

শেখ রাসেল কেন আমাদের বন্ধু, কীভাবেই বা তিনি আমাদের বন্ধু হয়ে উঠলেন বুঝতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে রাসেলের ছেলেবেলার দিনগুলিতে। তার ছেলেবেলার দিনগুলো সম্পর্কে যেটুকু জানা যায় তার অধিকাংশই শিশু বয়সের নিষ্পাপ আত্মভোলা কর্মকাণ্ড। শোনা যায় বঙ্গবন্ধুর বাসায় টমি নামে একটি কুকুর ছিল যার সাথে ছোট্ট রাসেল খেলে বেড়াতো। একদিন খেলার সময় কুকুরটি জোরে ডেকে উঠলে ছোট রাসেলের মনে হয় টমি তাকে বকেছে।  শিশু রাসেল তার আপা রেহানার কাছে এসে কাঁদতে থাকেন।  আরো শোনা যায় রাসেলের মাছ ধরার খুব শখ ছিল।

মাছ ধরে আবার সেই মাছ সে পুকুরেই ছেড়ে দিত। এই ছিল তার মজা। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র জয়ের জন্ম হলে রাসেল জয়কে নিয়ে খেলত সারাদিন। তার স্বভাব ছিল অত্যন্ত দুরন্ত প্রকৃতির। আর এই দুরন্তপনার সঙ্গী ছিল একটি বাইসাইকেল। রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ভেঙে সেই বাইসাইকেলকে সঙ্গী করে রোজ স্কুলে যেত রাসেল। রাসেলের শৈশব আখ্যান যেন আমাদের সকলের শৈশবের গল্প বলে দেয়। তার শৈশবের গল্প কথাগুলির মধ্যে আমরা যেন বারবার নিজেদেরই খুঁজে পাই। পড়াশোনা, খেলাধুলা, দুরন্তপনা এসব নিয়ে রাসেল আমাদের সকলের কাছেই হয়ে ওঠে শৈশবের এক মূর্ত প্রতিমূর্তি। 

উপসংহার:

শেখ রাসেল বাঙালি জাতির কাছে এক যুগোত্তীর্ণ ব্যক্তিত্ব। বাঙালি জাতি তার মধ্যে খুঁজে পায় রূপকথার মতো নিজেদের ছেলেবেলাকে। শেখ রাসেলের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকে আপামর বাঙালির শৈশব। অন্যদিকে তার নির্মম মৃত্যুর কাহিনী বারবার মনে করিয়ে দেয় আমাদের দেশের করুন ইতিহাসের কথা। সেই সমস্ত নৃশংস ক্ষমতালোভী মানুষের কথা যারা কেবলমাত্র ক্ষমতার লোভে ১১ বছরের একটি ছোট্ট শিশুকে অবধি রেহাই দেয়নি। 

যে জাতি নিজের ইতিহাস থেকে বিস্মৃত হয়, তারা সভ্যতার ইতিহাসে স্থবির হয়ে পড়ে। শেখ রাসেল বাঙালি জাতির সেই ইতিহাসের এক জ্বলন্ত প্রতিমূর্তি। তার স্মৃতিকে চিরদিন বাঁচিয়ে রাখার উদ্দেশ্যেই বাংলাদেশে গঠন করা হয়েছে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদ। শেখ রাসেলের নামে রাজধানী ঢাকার বুকে নামাঙ্কিত হয়েছে একটি স্কেটিং স্টেডিয়াম। এভাবেই চিরকাল শেখ রাসেল অমর হয়ে থাকবেন বাঙালি জাতির স্মৃতিতে। বাঙালি জাতি শেখ রাসেলের স্মৃতি বুকে নিয়ে তাকে বন্ধুর স্নেহের আসনে বসিয়ে সভ্যতার পথে আরো অগ্রসর হোক, এই কামনা করি।


‘শেখ রাসেল আমাদের বন্ধু’ শীর্ষক এই প্রবন্ধে আমরা শেখ রাসেলের জীবন সম্পর্কে সীমিত শব্দের পরিসরে যথাসম্ভব বিস্তার পূর্বক আলোচনার চেষ্টা করেছি। আশাকরি আমাদের এই প্রয়াস আপনাদের ভাল লেগেছে এবং এই প্রতিবেদন শেখ রাসেলের জীবন সম্পর্কে, তথা তাঁর বাঙালি জাতির বন্ধু হয়ে ওঠা সম্পর্কে আপনার যাবতীয় কৌতুহল নিরসন করতে সক্ষম হয়েছে।

আলোচ্য প্রতিবেদন সম্পর্কে আপনার মতামত নিচে কমেন্ট এর মাধ্যমে আমাদের জানান। আপনার মতামত আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া যদি এমনই আরো কোন প্রবন্ধ পড়তে চান, তাও কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাতে পারেন।  ধন্যবাদ।

 

কালিমা সমূহের আরবি, বাংলা উচ্চারণ ও অনুবাদ

 


কালিমা সমূহের আরবি, বাংলা উচ্চারণ ও অনুবাদ 

কালিমা বা কালেমা ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস সংবলিত কয়েকটি আরবি বাক্যের নাম। এর মাধ্যমেই ইসলামের প্রথম স্তম্ভ শাহাদাহ্ (হ্ শাহাদাহ্ একটি মুসলিম বিশ্বাস, আরবিতে এর অর্থ "র্থসাক্ষ্য দেয়া") পূর্ণতা র্ণ পায়। আমাদের দেশে ইসলামী ঈমান-আকীদার বিবরণের ক্ষেত্রে ‘পাঁচ পাঁচটি কালিমা’ এবং ঈমানে মুজমাল ও ঈমানে মুফাসসাল নামে দুটি ঈমানের কথা প্রচলিত আছে।

 

কালেমা-ই তাইয়্যেবা 

بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ 

لَا اِلَهَ اِلاَّ اللهُ مُحَمَّدُ رَّسُوْ لُ الله

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। 

কালিমা তায়্যিবা বাংলা উচ্চারণ-Kalima Tayyiba Bangla

লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ।

কালিমা তায়্যিবা অর্থ 

আল্লাহ ব্যাতিত/ ছাড়া কোন মাবুদ (এলাহ) নেই। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর প্রেরিত রাসূল। 

 

                                     কালেমা-ই শাহাদৎ

 

কালেমা শাহাদাত আরবি

 بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ 

 اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَاشَرِيْكَ لَهُ وَاَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُه


কালিমা শাহাদাত বাংলা উচ্চারণ -Kalima Shahadat Bangla Uccharon

 বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। 

আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওহদাহু লা-শারীকালাহু ওয়াশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাছুলুহু ।

কালিমা শাহাদাত বাংলা অর্থ

 আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ নেই। তিনি এক। তাঁহার কোন অংশীদার নেই, এবং আমি আরও সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, নিশ্চয়ই হযরত মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহ্র প্রেরিত বান্দা ও রাসূল।

 

কালেমা-ই তাওহীদ

 بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ

 لَا اِلَهَ اِلَّا اَنْتَ وَاحِدَ لَّاثَانِىَ لَكَ مُحَمَّدُرَّ سُوْلُ اللهِ اِمَامُ الْمُتَّقِيْنَ رَسُوْ لُرَبِّ الْعَلَمِيْنَ لا الهَ اِلَّا اللّهُ وَحْدَهُ لا شَرِيْكَ لَهْ، لَهُ الْمُلْكُ وَ لَهُ الْحَمْدُ يُحْى وَ يُمِيْتُ وَ هُوَحَىُّ لَّا يَمُوْتُ اَبَدًا اَبَدًا ط ذُو الْجَلَالِ وَ الْاِكْرَامِ ط بِيَدِهِ الْخَيْرُ ط وَهُوَ عَلى كُلِّ شَئ ٍ قَدِيْرٌ ط 


কালেমা-ই তাওহীদ বাংলা উচ্চারণ  -Kalima Tauheed in Bangla

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। 

লা-ইলাহা ইল্লা আনতা ওয়াহেদাল্লা ছানীয়ালাকা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লা ইমামুল মোত্তাকীনা রাছুলুরাবি্বল আলামীন। [অথবা] লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্ দাহু লা-সারিকা লা-হু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ইউহা ই ওয়া উ মিতু বি ইয়া সি হিল খাইরু ওয়া-হু-ওয়া আ-লা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। 


কালেমা-ই তাওহীদ বাংলা অর্থ

হে আল্লাহ্‌! তুমি ছাড়া কোন ইলাহ্‌ নেই, তুমি এক, তোমার কোন দ্বিতীয় স্বত্ত্বা নেই, মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল। ধর্মভীরুদের ইমাম, তিনি জগতের প্রতিপালক প্রভূর মহান দূত। [অথবা] আল্লাহ এক আর কোন মাবুদ নেই তিনি এক তার কোন অংশীদার নেই। সমস্ত সৃষ্টি জগৎ এবং সকল প্রশংসা তাঁরই। তিনি জীবন হান করেন আবার তিনিই মৃত্যুর কারণ তার হাতেই সব ভাল কিছু এবং তিনিই সৃষ্টির সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। 


কালিমা-ই তামজীদ

 

 بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ

 لَا اِلَهَ اِلَّا اَنْتَ نُوْرَ يَّهْدِىَ اللهُ لِنُوْرِهِ مَنْ يَّشَاءُ مُحَمَّدُ رَّسَوْ لُ اللهِ اِمَامُ الْمُرْسَلِيْنَ خَا تَمُ النَّبِيِّنَ


কালিমা-ই তামজীদ বাংলা উচ্চারণ -Kalima Tamjeed Bangla

 বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। 

লা-ইলাহা ইল্লা আনতা নুরাইইয়াহ দিয়াল্লাহু লিনুরিহী মাইয়্যাশাউ মুহাম্মাদুররাসূলুল্লাহি ইমামূল মুরছালীনা খাতামুন-নাবিয়্যীন।

কালিমা-ই তামজীদ বাংলা অর্থ

হে খোদা! তুমি ব্যতীত কেহই উপাস্য নাই, তুমি জ্যোতিময় । তুমি যাহাকে ইচ্ছা আপন জ্যোতিঃ প্রদর্শন কর । মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) প্রেরিত পয়গম্বরগণের ইমাম এবং শেষ নবী।

 

ঈমান-ই মুজমাল

 

 بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ 

امَنْتُ بِاللهِ كَمَا هُوَ بِاَسْمَائِه وَصِفَاتِه وَقَبِلْتُ جَمِيْعَ اَحْكَامِه وَاَرْكَانِه


ঈমান-ই মুজমাল বাংলা উচ্চারণ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। 

আ-মানতু বিল্লা-হি কামা-হুয়া বিআসমা-ইহী ওয়া সিফা-তিহী ওয়া ক্বাবিলতু জামী-আ আহকা-মিহী ওয়া আরকা-নিহী। 

ঈমান-ই মুজমাল বাংলা অর্থ

আমি আল্লাহ তা’আলার উপর ঈমান আনলাম। তিনি যেমন, তার নামসমূহ ও তাঁর গুণাবলী সহকারে এবং আমি গ্রহণ করেছি তার সমস্ত বিধান ও আরকানকে।

 

ঈমান-ই-মুফাসসাল

 

 بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ 

امَنْتُ بِاللهِ وَمَلئِكَتِه وَكُتُبِه وَرَسُوْلِه وَالْيَوْمِ الْاخِرِ وَالْقَدْرِ خَيْرِه وَشَرِّه مِنَ اللهِ تَعَالى وَالْبَعْثِ بَعْدَالْمَوْتِ


ঈমান-ই-মুফাসসাল বাংলা উচ্চারণ

 বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। 

আ-মানতু বিল্লা-হি ওয়া মালা-ইকাতিহী ওয়া কুতুবিহী ওয়া রুসূলিহী ওয়াল ইয়াউমিল আ-খিরী, ওয়াল ক্বাদরি খায়রিহী-ওয়া শাররিহী মিনাল্লা-হি তাআলা ওয়াল বা’সি বা’দাল মাওত।

ঈমান-ই-মুফাসসাল বাংলা অর্থ 

আমি ঈমান আনলাম আল্লাহর উপর তাঁর ফিরিশতাদের উপর, তাঁর আসমানী কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং শেষ দিবসের উপর আর এর উপর যে, অদৃষ্টের ভাল-মন্দআল্লাহ তা’আলার তরফ হতে এবং মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের উপর।